আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শুধু গালওয়ানই নয়, পূর্ব লাদাখের বিস্তীর্ণ অংশে সক্রিয়তা ও আনাগোনা বাড়িয়েছে চীনা সেনা, চাঞ্চল্যকর এই তথ্য জানা যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে। এই এলাকাগুলির মধ্যে আছে প্যাংগং লেক, হট স্প্রিং, গোগরা এবং ‘ফিঙ্গার ফোর’ থেকে ‘ফিঙ্গার এইট’ পাঁচটি উঁচু পাহাড়ি শিখর। শেষ বার এই ঘটনা ঘটেছিল ১৯৬২ সালে।
এ বারের চীনা সেনা আনাগোনার সঙ্গে ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের আগে বিস্তীর্ণ এলাকায় পাকিস্তান সেনার অনুপ্রবেশের মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই।
২১ বছর আগে পাকিস্তান সেনা যখন নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল, সেই সময়ে ভারতীয় সেনার ‘উইন্টার ডিসপোজ়িশন্স’ পর্ব চলছিল। অর্থাৎ প্রচণ্ড বরফ পড়ে এমন পাহাড়ি শৃঙ্গগুলি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় নেমে এসেছিল ভারতীয় সেনা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল নজরদারির সুযোগে সেই প্রচণ্ড শীতেই নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে পাক সেনা। স্থানীয় মেষপালকরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীকে জানায় টোলোলিং, টাইগার হিল, দ্রাস ও বাটালিকের মতো জায়গায় পাহাড়ের মাথায় বসে আছে পাকিস্তানি সেনা। এর পরের ঘটনা সবার জানা। এখানেই প্রশ্ন, গালওয়ানসহ পূর্ব লাদাখে কি কার্গিলেরই ছায়া দেখা যাচ্ছে?
গালওয়ানের সেনা সংঘর্ষের ঘটনার পরে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, চীনা সেনাও এভাবেই নাকি ভারতীয় ভূখণ্ডের কাছাকাছি চলে এসেছে। এখানেও ‘উইন্টার ডিসপোজিশন্স’ এর সুযোগ নিয়েছে চীনা সেনা। প্রবল ঠান্ডায় বরফ ঢাকা শৃঙ্গের ফরোয়ার্ড বেস ছেড়ে ভারতীয় সেনা যখন নিচে নেমে এসেছে, তখনই নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ‘ফিঙ্গার ফোর’ থেকে ‘ফিঙ্গার এইট’ পর্যন্ত বিস্তৃত পাঁচটি ‘রিজ লাইন’-এ উঠে পড়েছে চীনা সেনা, দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন সূত্রে। এই ‘রিজ লাইন’ বা পাহাড়ি শিখরগুলি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনে অবস্থিত যে, একবার এর উপরে উঠে পড়তে পারলে নিচে উপত্যকায় নজরদারি চালাতে কোনো অসুবিধেই হবে না।
একটি সূত্রে দাবি, চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে অবস্থিত ‘সারজিপ’ থেকে নিজেদের বেস ক্যাম্প তুলে নিয়ে এসেছে ফিঙ্গার ফোরের খুব কাছে তাঁবুও ফেলেছে সেখানে। এই তাঁবু পোড়ানো নিয়েই ১৫ জুন অশান্ত হয়ে ওঠে গালওয়ান। ফিঙ্গার ফোর থেকে ফিঙ্গার ফাইভের মধ্যে ৬২টি চীনা ‘পজিশন’ দেখা গিয়েছে বলেও একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে রাস্তা ও অস্থায়ী ক্যাম্পও। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি ভারতীয় ভূখণ্ডের খুব কাছে বেশ কিছু নির্মাণকাজও করেছে চীনা সেনা, অভিযোগ করেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ফিঙ্গার ফোর থেকে ফিঙ্গার এইট পর্যন্ত এলাকায় বিগত কয়েক মাস ধরেই প্রাত্যহিক প্যাট্রোলিং করার সময় ভারতীয় সেনাকে বাধা দিয়েছে চীনা সেনা।
তারপরও কেন চুপ করে ছিল ভারতীয় সেনা বা কেন্দ্রীয় সরকার? প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। তার অভিযোগ, ‘গালওয়ানের চীনা হামলা পরিকল্পিত। ভারত সরকার প্রথমে ঘুমিয়ে ছিল এবং সমস্যাটা অস্বীকার করেছে। এর মূল্য চুকিয়েছেন আমাদের নিহত সেনারা।’
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে ‘ফিঙ্গার ফোর’ থেকে ফিঙ্গার এইট পর্যন্ত এলাকার ভবিষ্যত নিয়ে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন গালওয়ান সংলগ্ন এই এলাকায় কর্তব্যরত ছিলেন।
তার মতে, ‘আমি আশাবাদী, যে ১৯৬২ সালের যুদ্ধের মতো ঘটনা ঘটবে না, যেখানে আকসাই চীন আমাদের হাতছাড়া হয়েছিল। এবার পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়ানো শক্তিধর দু’দেশের সেনার মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক ও সামরিক দুটি স্তরের আলোচনাতেই বরফ গলবে। সূত্র: এইসময়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।