নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক ফুটবলার ও সরকার দলীয় এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত যে বাড়ি দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে, সেই বাড়ির মূল নথি ও বাড়ি নিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই আগামী ১৬ জানুয়ারির মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানের প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, মূল নথি দাখিলের জন্য এর আগে সময় নেয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনও আসেনি। বিষয়টি বিচারাধীন। অথচ জালিয়াতি করে বাড়ি নিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে, যা সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো। এই যদি হয় অবস্থা…। গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে, তা ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন আব্দুস সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ।
পরে হাইকোর্ট বিচারাধীন এই মামলার (রিট) বিষয়বস্তুকে স্পর্শ করে-এমন কিছু না লিখতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশ দেন। তবে আদালতের কার্যধারা নিয়ে লেখায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে, আব্দুস সালাম মুর্শেদীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি বৈধভাবেই ঐ বাড়িটি দখলে রেখেছেন। আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
এতে বলা হয়, বাড়িটি বর্তমানে যেই প্লটে অবস্থিত সেই প্লটটি সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটি ঢাকা রি-রোলিং মিলসের অনুকূল বরাদ্দ করে। পরবর্তীকালে ১৯৬৩ সালে ডিআইটি প্লটটি উক্ত ঢাকা রি-রোলিং মিলস নামে লিজ প্রদান করে। এর পর ১৯৭৫ সালে প্লটটি মালেকা রহমান ক্রয় করেন। ক্রয় করার পূর্বে ১৯৭২ সালে উক্ত মালেকা রহমানকে বাংলাদেশ সরকারের সদর সাব-ডিভিশনাল অফিস (সদর দক্ষিণ) এর পরিত্যক্ত সম্পত্তি সেল হতে অবহিত করা হয় যে, প্লটটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালে মালেকা রহমান সম্পত্তিটির নামজারি সম্পন্ন করেন। এর পরে মালেকা রহমান কর্তৃক প্লটটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ‘খ’ তালিকা হতে অবমুক্তির বিষয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেটেলমেন্ট কোর্ট-১ দোতরফা সূত্রে আবেদনকারী মালেকা রহমানের মালিকানার পক্ষে এবং প্লটটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি আওতাবহির্ভূত হিসেবে ১৯৯৪ সালের ২৪ জানুয়ারি রায় প্রদান করে।
পরবর্তীকালে মালেকা রহমান তার দুই ছেলে মীর মোহাম্মদ হাসান ও মীর মোহাম্মদ নূরুল আফসারের নামে প্লটটি ১৯৯৫ সালের ১২ মার্চ একটি নোটারি দলিলের মাধ্যমে মৌখিকভাবে দান করেন। এরপর উক্ত মীর মোহাম্মদ হাসান ও মীর মোহাম্মদ নূরুল আফসার প্লটটি তাদের নিজেদের নামে নামজারি করে নেন।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ সালে সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি দাপ্তরিক চিঠি মারফত উপরোক্ত মালেকা রহমানকে এই মর্মে অবহিত করেন যে উল্লিখিত প্লটটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় নাই বিধায় উহা অবমুক্তির কোনো অবকাশ নেই। এরপর বিগত ১৯৯৭ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন মালিকগণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক কর্তৃক প্লট দুটি প্লট হিসেবে যথা: ২৭/এ এবং ২৭/বি হিসেবে বিভাজন করা হয়। পরবর্তীকালে রাজউক বরাবর উক্ত মালিকদ্বয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে ২৭/বি নং প্লটটি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর নামে হস্তান্তরের অনুমতি প্রদান করা হয় এবং গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি রেজিস্ট্রি দলিল মূলে ২৭/বি, নং প্লটটি সালাম মুর্শেদীর নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। এর পর রাজউক কর্তৃক ২৭/বি প্লটটি সালাম মুর্শেদীর নামে নামজারি করা হয় এবং সেই সময় থেকে অদ্যাবধি প্লটটিতে সালাম মুর্শেদী বসবাস করে আসছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, বিভাজনকৃত অপর প্লটটি (২৭/এ) একই সময়ে জনৈক ইফ্ফাত হক একই পদ্ধতিতে উক্ত মালিকদ্বয় হইতে ক্রয় করেন এবং অদ্যাবধি তিনিও সম্পত্তিটির ভোগদখলে আছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।