রেজাউল মাসুদ: ‘৬ মাস যাবত রাতুলের সাথে আমার পরিচয়, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আমরা দেখা করি। একদিন আমাকে চাঁদপুর যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমার দুবন্ধুসহ রাতুলের সাথে রাতের লঞ্চে কেবিনে চাদপুর যাই। লঞ্চে থাকাকালীন আমার বন্ধুদের কোন একসময়ের অনুপস্হিতিতে আমার মোবাইলে কৌশলে আমার নগ্ন ভিডিও ধারন করে। । আমরা লঞ্চ থেকে ঢাকায় নামার পর রাতুলের মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় আমার মোবাইল নিয়ে ফোন করার কথা বলে সদরঘাট থেকে সে সটকে পড়ে।আমি অনেক সময় তার জন্য অপেক্ষা করি কিন্তু সে আর আসে নাই। সে আমার মোবাইলে থাকা বিকাশের ১০০০০ টাকা নিয়ে নেয এবং পরেরদিন ন্যুড ভিডিও দিয়ে আমাকে হুমকি দেয় যে ২৫০০০ টাকা না দিলে আমার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিবে। আমার ফেসবুক আইডিও সে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সে আমাকে এবং আমার মা বাবাকেও ফোন করে চাপ দেয় টাকার জন্য। টাকা না পেলে আজ ৪ টার পর সে ভিডিও ছড়িয়ে দিবে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি সাইবার ক্রাইম রাতুলকে গ্রেফতার করে এবং ব্যবহ্রত সকল মোবাইল উদ্ধার করে সেখানে অন্তত দশজন নারীর তথ্য পায়। তাদের সবারসহ অনেক মেয়ের ন্যুড কন্টেন্ট পাওয়া যায় রাতুলের মোবাইলে। ফেক কল এবং ভুয়া হিস্ট্রীর অ্যাপস সহ প্রতারণায় ব্যবহ্রত নানান টেকনলজি বিষয়ে রাতুলের মোবাইলে প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়।
আরো একজন ভিকটিমের তথ্য পান সাইবার ক্রাইম ইউনিট যিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষার্থী। ছয় মাস আগে ভিকটিম তার ফেসবুক একাউন্টে একজন ইউটিউবার মেয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হতে তানজুমা আফরোজ নামের একজন মিডিয়া ব্যক্তির সন্ধান পায় যা আসামী রাতুলেরই তৈরিকৃত ফেক আইডি। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন। প্রথমে ফেসবুক চ্যাটিং এবং পরবর্তীতে ফোনালাপ হয়। উক্ত ফোনালাপ গুলোতে রাতুল বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে ভিকটিমের সাথে মেয়ে কন্ঠে কথা বলে। পরবর্তীতে তানজুমা আফরোজ নামক ফেইক আইডিটি আসামি রাতুলকে ভিকটিমের সাথে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দেয়।এভাবে ভিকটিমের সাথে উক্ত আইডিধারী আসামি সুসম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে এই সম্পর্ক প্রেমের রূপ লাভ করে।
রাতুল এমন বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে সকল ভিকটিমদের বিশ্বাস আস্হা অর্জনকরে। আসামি ভিকটিমদের ভিডিও কলে আসার প্ররোচনা দেয় পরবর্তীতে সেই ন্যুড ভিডিও স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখে। এরপর আসামি ভিকটিমদের দেখা করার জন্য ডেকে আনে, প্রথম দেখাতেই সে ভিকটিমের ফোন মোবাইল কৌশলে চুরি করে পালিয়ে যায়। চুরিকৃত মোবাইল হতে তথ্য সংগ্রহ করে ফরমেট দিয়ে সে মোবাইল বিক্রি করে দেয়। বিক্রির পূর্বে ভিকটিমের ফোনের ফেসবুক ও জিমেইল একাউন্ট দখল করে নেয়।সেই হ্যাককৃত ফেসবুক এর ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে পরবর্তী অন্য আরেক ভিকটিমকে টার্গেট করে।
এমন একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার পুলিশ সেন্টার সিআইডি গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানী বাংলামোটর এলাকা থেকে মোহাম্মদ ইয়াসিন@ রাতুল কে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেফতার কালে তার কাছে থাকা প্রতারণা এবং ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল সেট, দশটি সীম উদ্ধার হয় যার ভিতর চারটি ফেইক ফেসবুক আইডি এবং নয়টি জিমেইল একাউন্ট পাওয়া যায়।
জানা গেছে, মোহাম্মদ ইয়াসিন@ রাতুল পিতা-মোহাম্মদ আবু তাহের, মাতা-মোছাম্মদ ফাতেমা বেগম, ঠিকানা- একতারপুর পোস্ট- পাক হরিশপুর- থানা-বিজয়নগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে ঢাকার মিরপুরে চলে আসেন। প্রথমে স্হানীয় এক নেতার বাসায় চা বয় হিসাবে কাজ নেন। পরবর্তিতে মোহাম্মদপুর রিংরোডে এক শো রুমে সেলসম্যানের চাকুরী নেন। হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিয়ে অপরাধের পথে পা বাড়ান। যৌন ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে জড়িয়ে পড়েন।’
রেজাউল মাসুদ: সিআইডির এসপি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।