জুমবাংলা ডেস্ক : করোনা পরিস্থিতিতে চাকরি হারাচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেসরকারি জনবলের চিকিৎসকসহ ১৪১ জন কর্মচারী। মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল ও হাসপাতালের সরকারি কর্মচারীদের সহায়তা দিতে ওয়ানস্টপস সার্ভিসসহ বিভিন্ন বিভাগে এসব কর্মচারীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে এদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখনও আছেন হোম কোরায়ান্টাইনে। এমতাবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অমানবিক এই সিদ্ধান্তে হতভম্ব ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কর্মচারীরা।
ধারণা করা হচ্ছে, এসব জনবল ছাটাইয়ের কারণে বহুল প্রত্যাশিত ও প্রশংসিত ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেবা দেয়ার সক্ষমতা হারাবে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিট-সিসিইউ এর বায়োক্যামিক্যাল ল্যাবের সেবা কার্যক্রম। ব্যাহত হবে বিভিন্ন পরীক্ষাসহ অন্যান্য বিভাগের স্বাভাবিক সেবাদান কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হবে রোগীরা। দৌরাত্ম্য বাড়বে দালাল সংঘবদ্ধ চক্রের।
হাসপাতাল উপ পরিচালক ডা. লক্ষী নারায়ণ মজুমদার জানান, করোনার কারণে রোগী কমে যাওয়ায় হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণের তহবিল থেকে এখন আর এসব কর্মচারীদের বেতন ভাতা মেটানো সম্ভব নয় বলেই এই সিদ্ধান্ত। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ও রোগীর চাপ বাড়লে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানায় হাসপাতাল কতৃৃপক্ষ। এসব কর্মচারীদের বেতন ভাতা মেটাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান হাসপাতালের বেসরকারি জনবলের ১৪১ কর্মচারী ও তাদের পরিবার।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালের ওয়ানস্টপ সার্ভিসের এক কম্পিউটার অপারেটর করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১০ দিন ধরে আছেন নগরীর নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারান্টাইনে। করোনা পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে তাঁর মত এই ওয়ানস্টপ সার্ভিসের চিকিৎসক ও মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্টসহ আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে।
এমতাবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে এখন ভেঙ্গে পড়েছেন তাঁরা। হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের ইমারজেন্সি বায়োকেমিষ্ট্রি ল্যাব, রেডিওলজী বিভাগ, প্যাথলজী, বর্হিবিভাগের চিকিৎসকসহ সনোলজিষ্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট, রেডিওগ্রাফার ও অফিস সহায়ক পদমর্যাদার এরকম ১৪১ কর্মচারীর চাকরি থাকছে না আগামী পহেলা জুন থেকে। গত এপ্রিলে হাসপাতাল পরিচালক এক পত্রে এই নোটিশ জারি করেছেন। করোনাকালে এমন নোটিশে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হাসপাতালের বেসরকারি জনবলের এই কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ওয়ানস্টপ সার্ভিস, ইমারজেন্সি বায়োকেমিক্যাল ল্যাব, প্যাথলজী ল্যাব ও রেডিওলজী বিভাগ সক্ষমতা হারাবে। ওয়ানস্টপ সার্ভিসের প্যাথলজী পরীক্ষা, ইজিসি, এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার সেবা বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্টরা। একই সাথে বর্হিবিভাগের গাইনী, মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের সেবাদানে অচলাবস্থা তৈরি হবে।
এসময় ভোগান্তির শিকার হবেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। করোনার আগে হাসপাতালের আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগে মাত্রাতিরিক্ত ১০ হাজারের বেশি রোগীর চাপ সামালসহ সরকারি কর্মচারীদের সহায়তা দিতে অস্থায়ীভাবে এসব কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা ইউজার ফি-এর সাথে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ টাকার রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল থেকে এসব কর্মচারীর বেতন ভাতা পরিশোধ করা হত। কিন্তু এই নোটিশের ফলে চাকরি হারাতে হচ্ছে তাদের।
এটিকে অমানবিক উল্লেখ করে সমস্যা সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচীপ ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান ভুইয়া জানান, করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে এসব চিকিৎসক কর্মচারীদের সহায়তার প্রয়োজন সেখানে তাদের ছ্টাাই কোনভাবেই কাম্য নয়। সমস্যা সমাধানে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছেন তিনি।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনার কারণে রোগী কম আসায় ইউজার ফি কমে গেছে। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল এখন তলানিতে। এমতাবস্থায় এসব কর্মচারীকে কোনমতেই রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিষয়টি দেখা হবে বলেও জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, করোনার আগে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে বিভাগে দৈনিক গড়ে ছয় হাজার এবং ওয়ানস্টস সার্ভিস ও জরুরি বিভাগে আরও পাঁচ শতাধিক রোগী সেবা নিতে ভিড় জমাত এবং হাসপাতালের অন্তবিভাগে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকত। এসময় ইউজার ফি আদায়ের ফলে সরকারের রাজস্ব চার কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক লাফে ১৩ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণ তহবিলে টাকার কোন অভাব ছিল না।
বর্তমানে বর্হিবিভাগে গড়ে প্রতিদিন পাঁচশ, ওয়ানস্টপ সার্ভিস ও জরুরি বিভাগে গড়ে প্রতিদিন দুইশ’ রোগী আসছেন সেবা নিতে। আর এক হাজার শয্যার হাসপাতালের অন্ত বিভাগে ভর্তি থাকছে গড়ে সাতশ’ রোগী! করোনা পরিস্থিতিতে রোগীর এই সংখ্যা আরও কমতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ফলে রাজস্ব আয়েও ধ্বস নেমেছে। এমতাবস্থায় গত ২১ এপ্রিল হাসপাতাল পরিচালকের স্বাক্ষর করা এই নোটিশে বলা হয় বেসরকারি কর্মচারীদের অস্থায়ী নিয়োগ আদেশ আগামী পহেলা জুন-২০২০ থেকে বাতিল করা হলো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।