জুমবাংলা ডেস্ক : দুই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে। এই মূল্য বিপর্যয়ের কারণে ফলে চামড়া খাতে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকার রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।
বিপুলসংখ্যক এ চামড়া রাস্তায় ফেলে, নদীতে ভাসিয়ে ও মাটির নিচে চাপা দেওয়া হয়। কাঁচামাল হিসেবে এসব চামড়া ট্যানারিগুলোতে আসত। নষ্ট চামড়াগুলো যথাসময়ে কেনা সম্ভব হলে বিদেশে রপ্তানি করে সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা আয় হতো। কিন্তু এবার তা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা।
এ দিকে চামড়ার বাজারে এ বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে মাঠে নেমেছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। চামড়া মাটি চাপা দেওয়ার বিষয়গুলো তদন্ত শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও দমকল বাহিনী আলাদাভাবে তদন্তে নেমেছে।
সৈয়দপুরে পশুর চামড়া মাটি চাপার ঘটনা সরেজমিন দেখতে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে দমকল বাহিনীর তদন্ত কমিটি। আর ব্যাংকগুলো খতিয়ে দেখবে তাদের দেওয়া ঋণের অর্থ ট্যানারি শিল্পের মালিকরা সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন কি না।
কারণ এ বছর ৭শ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ দেওয়া হয়েছে। এতে মাঠপর্যায়ে তারল্য সঙ্কট থাকার কথা নয়।
জানা গেছে, দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে। এ বছর কমপক্ষে ১ কোটি ১৮ লাখ পশুর চামড়া কেনা-বেচা হওয়ার কথা। এর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৮২ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৭২ লাখ।
এছাড়া ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্য পশু। পোস্তার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিএইচএসএমএর হিসাব মতে ৩০ শতাংশ চামড়া এ বছর নষ্ট হয়েছে। এর অর্ধেকই গরুর চামড়া। একটি গরুর চামড়া (গড়ে ১৮ বর্গফুট) বিদেশে রপ্তানি করে আয় হয় সর্বনিম্ন ২১৬০ টাকা।
এবার নষ্ট হওয়া গরুর চামড়া থেকে রপ্তানি আয় কমবে প্রায় ৩৮৯ কোটি টাকা। এছাড়া ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকার বেশি রপ্তানি মূল্য রয়েছে।
সে হিসাবে ছাগলের চামড়া থেকে আয় কমবে কমপক্ষে দেড়শ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, গরু-ছাগলের চামড়া নষ্ট হওয়ায় সব মিলে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকার রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি খাতে আয় ৯ হাজার ২৯১ কোটি টাকা (১০৯.৩০ কোটি মার্কিন ডলার)। ধারণা করা হচ্ছে, কাঁচামাল সঙ্কটের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, চামড়া জাতীয় সম্পদ। এটি মাটিতে পুঁতে ফেলা, রাস্তায় বা ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া গর্হিত কাজ। এ ধরনের কাজ যারা করেছেন, তারা ঠিক করেননি।
আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলছি। নিশ্চয়ই সামনে এ নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না। কাঁচা চামড়া রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে ওয়েট ব্লু রপ্তানি এবং পরে লবণযুক্ত চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চামড়া বাজারের সার্বিক এ জের শেষ পর্যন্ত এ খাতের রপ্তানি আয় কমতে পারে। কারণ ট্যানারিগুলোর মালই হচ্ছে কাঁচা চামড়া। যা বিপুলসংখ্যক বিনষ্ট করা হয়েছে। চট্টগ্রামে রাস্তায় ফেলে নষ্ট করা হয়েছে এক লাখ পিস চামড়া।
সিলেটে ২০ ট্রাক চামড়া রাস্তা থেকে পরিষ্কার করেছে সিটি কর্পোরেশন। সৈয়দপুরে একটি এলাকায় মাটি চাপা দেয়া হয়েছে ৮শ পিস চামড়া। ফতুল্লায় কয়েক হাজার পিস চামড়ার মূল্য না পেয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন। এসব চামড়ার উপযুক্ত মূল্য পেলে কাঁচামাল হিসেবে ট্যানারিগুলোতে শেষ পর্যন্ত চলে আসত। এগুলোও বিদেশে রপ্তানি হতো। আসত বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু তা না হওয়ায় এবার এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমবে।
পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খতিয়ে দেখবে তাদের দেওয়া ঋণের অর্থ ট্যানারি মালিকরা সঠিকভাবে ব্যবহার করেছেন কিনা। কারণ এ চামড়া কেনার জন্য এ বছর ব্যাংকগুলো ৭শ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
ফলে মাঠপর্যায়ে চামড়া কেনার জন্য তারল্য সঙ্কট থাকার কথা নয়। আড়তদারদের বকেয়া পরিশোধ হওয়ার কথা। কিন্তু আড়তদারদের হিসাবে দেড়শ সক্রিয় কারখানার মধ্যে মাত্র ৩টি কারখানা একশ শতাংশ, ৭টি কারখানা ৫ থেকে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ করেছে।
বাকি ১৪০টি কারখানা কোনো বকেয়া পরিশোধ করেনি। যে কারণে পাইকাররা ভয়াবহ তারল্য সঙ্কটে পড়ে চামড়া কিনতে পারেননি। সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।