আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০২৪ সালে চীনে নতুন বিবাহের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ কমেছে, যদিও তরুণদের বিয়ে ও সন্তান গ্রহণে উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মাত্র ৬১ লাখ দম্পতি বিয়ে নিবন্ধন করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
সোমবার সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে চীনে যে সংখ্যক বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা ১৯৮৬ সাল থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী সর্বনিম্ন। বিয়ে ও জন্মহার কমতে থাকার এই ধারাবাহিক প্রবণতা চীনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির শ্রমশক্তি সংকুচিত করছে।
২০১৩ সালে চীনে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩০ লাখ বিয়ে নিবন্ধিত হয়েছিল। তবে তারপর থেকে এক দশকের বেশি সময় ধরে বিবাহের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। ২০২৩ সালে করোনা বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর বিয়ের হারে কিছুটা বৃদ্ধি দেখা গেলেও ২০২৪ সালে তা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে।
একদিকে যেমন বিয়ের হার কমছে, অন্যদিকে চীনে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ২০২৪ সালে প্রায় ২৬ লাখ দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ হাজার বেশি।
২০২১ সালে চীন সরকার বিবাহবিচ্ছেদের হার কমাতে ৩০ দিনের ‘কুলিং-অফ’ নীতি চালু করেছিল। তবে সমালোচকেরা দাবি করেন, এই নীতি নির্যাতনমূলক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে নারীদের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
চীনের জন্মহার কিছুটা বাড়লেও দেশটির জনসংখ্যা টানা তিন বছর ধরে কমছে। বর্তমানে দেশটির ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬৮ লাখ ৩০ হাজার কমেছে, বিপরীতে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা বেড়ে মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ হয়েছে।
কেন কমছে বিয়ে?
গবেষকদের মতে, চীনে বিবাহ ও সন্তান জন্মদানের হার কমার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে, যার মধ্যে অর্থনৈতিক চাপ অন্যতম। উচ্চ বেকারত্ব, ব্যয়বহুল জীবনযাত্রা এবং দুর্বল সামাজিক সুরক্ষার কারণে অনেক তরুণ বিয়ে ও সন্তান নেওয়া স্থগিত রাখছেন।
এছাড়া, চীনের তরুণদের বদলে যাওয়া মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিও এর পেছনে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, উচ্চশিক্ষিত ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নারীদের মধ্যে বিয়ের প্রতি অনীহা বাড়ছে।
চীন সরকার বিবাহের হার বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন নবদম্পতিদের নগদ সহায়তা, গণবিয়ের আয়োজন, গ্রামাঞ্চলে কনেপক্ষের জন্য বরপক্ষের মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদানের প্রচলন কমানোর চেষ্টা ইত্যাদি।
২০২২ সালে দেশটির পরিবার পরিকল্পনা সংস্থা ‘নতুন যুগের বিবাহ ও সন্তান ধারণের সংস্কৃতি’ শিরোনামে একটি প্রচারণা শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল তরুণদের উপযুক্ত বয়সে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণে উৎসাহিত করা।
তবে এসব উদ্যোগ সেভাবে সফল হয়নি। অনেক তরুণ এখনো বিয়ে ও সন্তান নেওয়া এড়িয়ে যাচ্ছেন। চীনের সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবোতে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “জীবন এত ক্লান্তিকর, বিয়ে করার সাহসই আসে না! হাহ!”
একসময় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য চীনে ‘এক সন্তান নীতি’ দীর্ঘদিন কার্যকর ছিল, যার ফলে বর্তমানে বিবাহযোগ্য তরুণ-তরুণীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ২০১৫ সালে দুই সন্তান এবং ২০২১ সালে তিন সন্তান নীতির অনুমোদন দেওয়া হলেও দেশটির জন্মহার বাড়েনি।
বিশ্লেষকদের মতে, শুধুমাত্র আর্থিক সুবিধা নয়, বরং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং কর্মজীবী নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাই চীনের বিবাহ ও জনসংখ্যা সংকট মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি হতে পারে।
সোর্স: সিএনএন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।