আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের সঙ্গে ৫৪০ মিলিয়ন ডলারের জ্বালানি চুক্তি করেছে চীন। এ অর্থ আফগানিস্তানে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র তৈরিতে কাজে লাগানো হবে। ২০২১ সালে তালিবান পুনরায় ক্ষমতা দখলের পর এটিই আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় কোনো বৈদেশিক বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে।
চীন তালিবানকে আফগানিস্তানের সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। কিন্তু তবুও কেন সাবেক এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি করল তারা?
চীনের সংবাদমাধ্যম বেইজিংনিউজ সোমবার (৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তালেবানকে স্বীকৃতি না দিলেও আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদকে স্বীকৃতি দেয় চীন। কারণ আফগান গ্যাস ও তেল চীনের অর্থনৈতিক গতি ও স্থিতিশীলতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ। এছাড়া বিশ্বে জ্বালানির সবচেয়ে বড় গ্রাহকও তারা। কিন্তু নিজস্ব চাহিদা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত জ্বালানি চীনে নেই। এ কারণে বিপুল পরিমাণ তেল ও গ্যাস আমদানি করতে হয় তাদের। আর শুধুমাত্র এ কারণেই রাশিয়া, ইকুয়েডর ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে চীন।
এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও সবসময় দুশ্চিন্তায় ভোগে চীন। কারণ রাশিয়া ছাড়া বাকি সবগুলো দেশ থেকে সাগরপথে জ্বালানি আমদানি করতে হয় তাদের। যে সাগরপথ দিয়ে তারা জ্বালানি আনে সেগুলো আবার যুক্তরাষ্ট্র সামরিকীকৃত করে রেখেছে। যদি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র চীনে জ্বালানি রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চালাবে। যা তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাবে।
আর নিজেদের এ দুর্বলতাটি উপলব্ধি করতে পেরে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভ (ব্রি) প্রকল্পের আওতায় ইউরোপ ও এশিয়াকে সংযুক্ত করতে স্থল পথে অবকাঠামো নির্মাণের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সড়ক, রেলপথ ও সেতু।
যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ের বাইরে থেকে চীন থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি দুটোই যেন নির্বিঘ্নে করা যায় সেটিই এ প্রকল্পের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে চীন-পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডরের কথা বলা যায়। এটি ব্রি-র একটি অংশ। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে একটি শর্টকাট পথ তৈরি করতে চাচ্ছে চীন। যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিকীকৃত সামুদ্রিক অঞ্চলগুলোকে পাশ কাটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নিজেদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পারবে বেইজিং।
কিন্তু আফগানিস্তানকে ছাড়া ব্রি প্রজেক্ট পূর্ণতা পাবে না। আফগানিস্তান ভৌগলিকভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির সঙ্গে রয়েছে চীনের সীমান্ত। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য, কেন্দ্রীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সংযোগও রয়েছে আফগানিস্তানের। এর অর্থ হলো কাবুল চীনের নিজস্ব নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক আগ থেকে অস্থিতিশীলতা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রকে বিতাড়িত করে তালেবান দ্বিতীয়বার ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানে বর্তমানে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। যেহেতু এখন স্থিতিশীলতা আছে ফলে চীন এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে।
বেইজিংনিউজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে বর্তমানে ১.৭৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং কিছু তেল রয়েছে। চীনের জন্য যা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে তালেবানের জন্যও এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ পাবে তারা। যা তাদের অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। আর এ বিষয়টিই ইসলামিক মনোভাবাপন্ন তালেবান এবং সমাজতান্ত্রিক দেশ চীনকে এক করেছে।
এছাড়া তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করার সময় চীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা কখনো আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। যা যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পুরোপুরি উল্টো। যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে আফগানিস্তানে যুদ্ধ বাধিয়েছে। যা দেশটিকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
মূল কথা হলো চীন বিশ্বাস করে আফগানিস্তানে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের নিজস্ব স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারবে। এ কারণে তালেবানকে এখন পর্যন্ত কোনো স্বীকৃতি না দিলেও সেখানে বড় বিনিয়োগ করছে তারা। এছাড়া চীন আরেকটি বিষয় বিবেচনা করছে, সেটি হলো যুদ্ধে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া আফগানিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল করার একটি সুযোগ দেওয়া উচিত।
সূত্র: বেইজিংনিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।