আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরান ২০% পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ শুরু করতে চায়, জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থা বলছে – এটি এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লঙ্ঘন। খবর বিবিসি বাংলার।
একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করার জন্য শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন।
সে হিসেবে ইরানের কাছে এখনও ওই পরিমাণে ইউরেনিয়াম নেই। তবে ২০১৫ সালের চুক্তিতে ইরানের এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৪% এর নিচে রাখার কথা ছিল।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে সরিয়ে এনে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেন। এর পর থেকেই ইরান এই চুক্তি লঙ্ঘন শুরু করে।
তবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং চীন সবাই আশা করে যুক্তরাষ্ট্র আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।
ইরান কী পরিকল্পনা করছে?
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে যে, ইরান ২০% পর্যন্ত বিশুদ্ধ পরমাণু সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা ফোর্ডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্লান্টকে জানিয়েছে। ইরানের এই পরমাণু সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পটি দেশটির একটি পাহাড়ের ভেতরে নির্মিত একটি স্থাপনা।
সংস্থাটি আরও বলছে: “সংস্থাকে যে চিঠিটি ইরান দিয়েছে, সেখানে এই সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম কখন হবে তা বলা হয়নি।”
২০১৯ সালের পরমাণু চুক্তিতে শর্ত দেয়া হয়েছিল যে ইরান ৩.৬৭% এর বেশি বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না, কিন্তু সেই শর্ত তারা লঙ্ঘন করেছে। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা তখন থেকেই ৪.৫% পর্যন্ত স্থির রয়েছে।
তবে দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিযাদে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় গত মাসে ইরানের পার্লামেন্ট পরমাণু সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ২০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা বিষয়ক একটি আইন পাস করে।
ওই বিলটিতে বলা হয়েছে হয়েছে যে, ইরানের তেল ও আর্থিক খাতের উপর নিষেধাজ্ঞাগুলো দুই মাসের মধ্যে সহজতর না করলে ইরানের সরকার ২০% বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ আবারও শুরু করবে।
নাটানজ এবং ফোর্ডোতে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় জাতিসংঘের পরিদর্শকদের যেন যেতে দেয়া না হয় সে বিষয়ে ওই আইনে আদেশ দেয়া হয়েছে।
সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কী?
ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড গ্যাস সেন্ট্রিফিউজে ঢুকিয়ে, পরমাণু ফিশনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত আইসোটপটি আলাদা করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করা হয়। এটি ইউ -২৩৫ নামে পরিচিত।
স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ইউ -২৩৫ এর ঘনত্ব সাধারণত ৩-৫% হয়। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় এই স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, জ্বালানী উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অনেক বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ঘনত্ব ২০% বা তার বেশি হতে পারে এবং এটি গবেষণার চুল্লিগুলোয় ব্যবহৃত হয়। তবে অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়াম ৯০% বা তারও বেশি সমৃদ্ধ হতে হয়।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমাবদ্ধ করা কেন প্রয়োজন?
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্রমবর্ধমান থাকলে এটি দেশটির “ব্রেক-আউট টাইম” কমে যেতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে “ব্রেক-আউট টাইম” বলতে পারমাণবিক বোমা বিকাশ করতে যে সময় লাগে, সেটাকে বোঝায়।
ইরান জোর দিয়ে বলে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।
তবে ইরান একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে এমন সন্দেহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ২০১০ সালে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে স্বাক্ষরিত ২০১৫ সালের চুক্তিতে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার শর্ত দেশটির পরমাণু কর্মসূচি সীমাবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছিল।
চুক্তি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কি রয়েছে?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তিকে “অপচয় এবং যাচ্ছেতাই” আখ্যায়িত করে ২০১৮ সালের মে মাসে চুক্তি থেকে সরে আসেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তিতে ফিরিয়ে আনবেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনামলে এ নিয়ে সমঝোতা হয়েছিল- এবং ইরান যদি “পরমাণু চুক্তির শর্তগুলো কঠোরভাবে মেনে চলে” তবে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।
মি. বাইডেন, ২০শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন। তিনি গত বছর নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন যে “এটি কঠিন হতে পারে”, কিন্তু “বিশ্বের ওই অংশে পারমাণবিক সক্ষমতা যেন শেষ হয়, সেটা নিশ্চিত করাই হবে আমাদের কাজ”।
যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিতে ফিরে এলে ইরান আবারও চুক্তিটি মেনে চলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মিস্টার বাইডেন যদি ২০১৭ সালের মতো পরিস্থিতিতে ফিরে আসেন, তবে আমরাও তাই করব,” ডিসেম্বরে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।