জুমবাংলা ডেস্ক: চীনা কমলা হিসাবে পরিচিত ছোট কমলা ফলেছে বগুড়ার মাটিতে। এই ছোট কমলা আমদানি হয়ে আসে চীন দেশ থেকে। এখনও আসে। বগুড়ার মাটির এই চীনা কমলা স্বাদে তারতম্য নেই। মিষ্টত্ব বেশি। রসে টাইটম্বুর। আগে কেউ ভাবেনি এই কমলা বরেন্দ্র মাটি (উত্তরের ১৬ জেলা এখন বরেন্দ্র এলাকা) বগুড়ায় ফলানো যাবে। বগুড়ার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের কাজী নুরইল যশোপাড়া গ্রামের দুই ভাই পারভেজ ও পল্লব এমন ছোট কমলা ফলিয়ে প্রমাণ করেছেন শুধু পাহাড়ি ভূমি নয় সমতলেও ফলে। দৈনিক জনকন্ঠের প্রতিবেদক সমুদ্র হক-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে। আগামীতেও ঘটবে। প্রকৃতিও পাল্টে যাচ্ছে। ফলফলাদি এখন আর আগের মতো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে (জিও ডাইভার্সিটি) সীমাবদ্ধ থাকছে না। যে করণে এক অঞ্চলের ফল আরেক অঞ্চলেও ফলছে। চীনা ছোট কমলা একইভাবে শুধু চীন নয় বগুড়াতেও ফলছে।
চীনা কমলা (বড় কমলার চেয়ে আকারে অনেক ছোট) সত্যি কি চীন দেশ থেকে এসেছে! এমন প্রশ্নে বগুড়ার ফল ব্যবসায়ী মিঠু জানান, বছর দশেক আগে এই কমলা প্রথম এই দেশে আসে বাইরে থেকে। আকারে ছোট হওয়ায় তখন থেকেই এই কমলার পিরিচিতি ‘চায়না কমলা কেউ বলে চীনা কমলা’। এই কমলার স্বাদ মিষ্টি। বড় কমলার রসের চেয়ে রস বেশি। ছোট ছোট কোয়া। কেজি দরে বেশি বিক্রি হয় না।
সুতার ব্যাগে ২০টি করে কমলা রেখে বিক্রি করা হয়। বড় কমলার চাহিদার চেয়ে ছোট কমলার চাহিদা বেশি। বর্তমানে বড় কমলা সিলেট চট্টগ্রাম ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়ে ফলছে। পঞ্চগড়ে কমলা ও সবুজ দুই রঙে কমলা ফলে। বগুড়ায় যে চীনা কমলা ফলেছে তার রং কমলা। তবে ছোট অবস্থায় সামান্য সবুজ।
কিভাবে এই কমলা বগুড়ায় ফলল! পল্লব (৫১) জানালেন তিন বছর আছে অন্তর্জালে (নেটে) এই কমলার ছবি ও প্রতিবেদন পড়েন। সেই থেকে উৎসাহ। তিনি দক্ষিণাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গায় বেড়তে গিয়ে দেখতে পান একজন কৃষক তার বাড়িতে ছোট্ট পরিসরে বীজ থেকে চারা বানিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছেন। তিনি সেখান থেকে দুই মাস বয়সী ২১৪ টি চারা বগুড়ায় এনে তাদের প্রায় দুই বিঘা জমিতে রোপণ করেন।
এর আগে মৃত্তিকা বিভাগ থেকে মাটি পরীক্ষা করিয়ে নেন। ওই বিভাগ জানায়, বগুড়ার মাটিতে এই কমলা ফলানো যেতে পারে। ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করা পল্লব তার বন্ধু ঢাকায় চাকরিরত কৃষি বিজ্ঞানীর কাছে পরামর্শ নিয়ে চারার নিবিড় পরিচর্যা শুরু করেন। কৃষি বিজ্ঞানী তার বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় ও পরামর্শে দুই বছরের মধ্যে সাত
থেকে দশ ফুট লম্বা হওয়া গাছে চীনা কমলার ফলন আসে।
তিনি ও তার বড় ভাই পারভেজ (যিনি রসায়নে মাস্টার্স) বৃক্ষের ফলনের নিয়মে আরও অধিক ফলনের জন্য কিছু ফল ছেঁটে দেন। তৃতীয় বছরে (বর্তমানে) থোকায় থোকায় আরও বেশি কমলা ধরেছে। প্রতিটি গাছে গড়ে দশ কেজি করে। তিনি জানান, প্রতিবছর অধিক পরিচর্যায় আরও বেশি ফলন পাওয়া যাবে। এর মধ্যেই তিনি প্রায় দশ হাজার চারা তৈরি করেছেন। যা এলাকার উৎসাহীদের কাছে দিচ্ছেন। কেউ চারা নিতে চাইলে তাকেও চারা দিয়ে চাষে সহযোগিতা করছেন।
পল্লব ও তার বড় ভাই পারভেজ আশা করেন বগুড়ার মাটিতে অন্যরাও চীনা কমলা ফলিয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বিশ^াস করেন বগুড়ায় চীনা কমলার অধিক ফলনে চীন দেশ থেকে আমদানি অনেক কমে যাবে। দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, অতীতে ভারত থেকে বেশি কমলা আমদানি করতে হতো। সিলেট চট্টগ্রাম পঞ্চগড়ে অধিক কমলার ফলনে এখন আমদানি অনেক কমেছে। বিদেশী মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে।
চীনা কমলারও যে এই অবস্থা হবে না তা কি কেউ বলতে পারে। কৌতূহলী হয়ে জানতে চাওয়া হয় তারপরও তো নাম চীনা কমলাই থাকছে। দেশীয় কোন নাম দেয়া যায় না! নতুন নাম দিলেও লোকজন চীনা কমলাই বলবে। কেউ হয়তো বলতে পারে বগুড়ার চীনা কমলা। যে নামেই ডাকা হোক এই ছোট চীনা কমলা বিদেশী জনপ্রিয় ফলের চাষে নতুন মাত্রা এনে দেবে। বড় কমলা ও ছোট কমলায় ভরে যাবে এই দেশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।