“আমাকে দেখিয়ে হস্তমৈথুন করা শুরু করল সে…”— এই বাক্যটি শুনেই চোখ কপালে উঠবে যে কারও। এমন ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা শুনে কাঁপবে হৃদয়। এটি কোনও সিনেমার দৃশ্য নয়, বাস্তব জীবনের করুণ অধ্যায়। বলিউডের কিংবদন্তি কৌতুকশিল্পী জনি লিভারের মেয়ে জেমি লিভার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তাঁর শৈশবের বিভীষিকা ভাগ করে নিয়েছেন, যা আমাদের সমাজের গোপন অন্ধকার দিকটি তুলে ধরে।
জনি লিভারের মেয়ে জেমি লিভার: শৈশবের অভিশপ্ত স্মৃতি
জনি লিভারের মেয়ে জেমি লিভার জানিয়েছেন, মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি এমন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন যা তাঁর জীবনধারা ও মানসিকতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। স্কুল ছুটির পর যখন তিনি গাড়িতে বসে ছিলেন, তখন এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি গাড়ির জানলার পাশে এসে দাঁড়ায় এবং হঠাৎই অশ্লীল আচরণ করতে শুরু করে। চোখের সামনে হস্তমৈথুন করতে দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন জেমি। “আমি তখন কিছু বুঝিনি, ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম ওই লোকটা দরজা খুলে কিছু করে বসবে,”— বলেন তিনি।
Table of Contents
ঘটনাটির সময় জেমি দ্রুত গাড়ির দরজা লক করে চুপ করে বসে থাকেন। এমনকি তাঁর বন্ধু, যিনি তখন পাশে বসে ছিলেন, তাকেও কিছু বলেননি। তিনি ভান করেন যেন কিছুই দেখেননি, যাতে সেই ব্যক্তি সরে পড়ে। এমন অভিজ্ঞতা একজন শিশুর জন্য কতটা ভয়ানক হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
স্কুলবাসেও নিরাপদ ছিলেন না: দ্বিতীয় দুঃস্বপ্ন
জেমি জানান, এই একটি ঘটনার পর তাঁর জীবনে আরও একটি দীর্ঘমেয়াদি আতঙ্কের অধ্যায় শুরু হয়—স্কুলবাস। সেখানে কন্ডাক্টর ছিল অত্যন্ত অশালীন ও অশোভন আচরণকারী। তিনি জেমিকে ও অন্য ছাত্রীদের অনুচিতভাবে স্পর্শ করতেন। “আমি বহুবার এসব ঘটনা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আজও মনে হয় সেগুলো দুঃস্বপ্ন ছিল,”— বলেন জেমি।
এইসব ঘটনার প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে, দীর্ঘসময় ধরে তিনি পুরুষদের প্রতি অবিশ্বাসে ভুগেছেন। তাঁর কথায়, “আমি নিজেকে চারপাশে এক প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলেছিলাম। অনেক বছর কারও সঙ্গে ডেট করিনি। কেবলমাত্র ২০ বছর বয়সে বিদেশে গিয়ে প্রথম সম্পর্কের কথা ভাবতে পারি।”
মানসিক ট্রমা ও সমাজের করণীয়
একজন শিশুর উপর যৌন হয়রানির এমন প্রভাব শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না, এর পরোক্ষ প্রভাব পড়ে তাঁর পরিবার ও ভবিষ্যতের সম্পর্কগুলির উপরেও। জেমি কখনও এই ঘটনা তাঁর বাবা-মা জনি লিভার ও সুজাতাকে জানাননি। “আমি নিজেই ঠিকমতো বুঝিনি আমার সঙ্গে কী হচ্ছে,”— বলেন তিনি। শিশু বয়সে এমন বিভ্রান্তি ও ভয় কেবলমাত্র সচেতনতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে কমানো সম্ভব।
এই ধরনের ঘটনার মোকাবিলা করতে হলে সমাজের সব স্তরের মানুষেরই এগিয়ে আসা প্রয়োজন। শুধু পরিবার নয়, স্কুল ও পরিবহন ব্যবস্থাতেও শিশুদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকা জরুরি। জেমির এই কনফেশন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমরা কতটা পিছিয়ে আছি এই বিষয়ে।
জনসচেতনতা বাড়াতে এই বক্তব্যের তাৎপর্য
এটি কোনও গসিপ বা চটকদার খবর নয়। এটি এক সামাজিক বার্তা। একজন পরিচিত অভিনেত্রী ও মেয়ে হিসেবে নয়, একজন নারী হিসেবে জেমি যে সাহসিকতার সঙ্গে নিজের গল্প শেয়ার করেছেন, তা আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। এটি সেই পরিবর্তনের সূচনা, যেখানে ভয় নয়, সাহস ও সচেতনতা হবে প্রধান অস্ত্র।
জেমি লিভারের ক্যারিয়ার: কৌতুক থেকে সিনেমা
জেমি লিভার বলিউডে শুধু জনি লিভারের মেয়ে হিসেবে পরিচিত নন, তিনি নিজেও একজন প্রতিভাবান কৌতুকশিল্পী ও অভিনেত্রী। ‘হাউজফুল ৪’, ‘ভূত পুলিশ’ ছাড়াও ২০২৪ সালে তিনি দক্ষিণী সিনেমা ‘আ ওকাট্টি আদাক্কু’-তে কাজ করেছেন। ওয়েব সিরিজ ‘পপ কৌন’-এও তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করেছে।
এই সফল ক্যারিয়ারের পেছনে যে ভয়াবহ শৈশব লুকিয়ে রয়েছে, তা অনেকেরই অজানা ছিল। জেমির কাহিনি আমাদের শেখায়—আঘাতের মধ্যেও উঠে দাঁড়ানো যায়, সাহসের সঙ্গে সব কিছু বলা যায় এবং সেখান থেকেই শুরু হতে পারে নতুন পরিবর্তনের যাত্রা।
মানসিক নির্যাতন ছাড়াও নানা ধরনের শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমাদের দেশে একাধিকবার উঠে এসেছে। প্রবন্ধে শিশু নির্যাতন ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
জনি লিভারের মেয়ে জেমি লিভারের এই সাহসী স্বীকারোক্তি কেবল ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক বার্তাও বহন করে। শিশুদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে আমাদের সবারই এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে।
FAQs
জনি লিভারের মেয়ে জেমি লিভার কে?
জেমি লিভার বলিউডের জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী জনি লিভারের মেয়ে। তিনি নিজেও একজন কৌতুকশিল্পী ও অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত।
জেমি লিভার কী ধরনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন?
তিনি তাঁর শৈশবে একজন অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা যৌন হয়রানির ভয়ানক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন, যা তাঁকে মানসিকভাবে আঘাত করে।
এই অভিজ্ঞতার প্রভাব কী ছিল তাঁর জীবনে?
এই অভিজ্ঞতা তাঁর মধ্যে পুরুষদের প্রতি ভীতি ও অনাস্থা তৈরি করে এবং দীর্ঘসময় ধরে তিনি মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ছিলেন।
জেমি লিভার এই ঘটনা কাকে বলেননি?
তিনি কখনওই তাঁর বাবা জনি লিভার বা মা সুজাতাকে এসব জানাননি, কারণ তিনি নিজেই বুঝতে পারেননি তখন ঠিক কী ঘটেছিল তাঁর সঙ্গে।
এই অভিজ্ঞতার সামাজিক গুরুত্ব কী?
এই অভিজ্ঞতা সমাজে শিশুদের নিরাপত্তা, সচেতনতা ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।