নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রাখালিয়াচালা এলাকায় তিন দিন বয়সী শিশু সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন তার মা। এর বিনিময়ে ৫ হাজার টাকা নিয়ে এলাকা ছেড়ে তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
তুহিন আক্তার গর্ভে সন্তান ধারণের ছয় মাস পর পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর পলিথিন কারখানায় কাজ করে কোনোরকমে চলছিল তার সংসার। সেই চাকরিও তিনি কয়েক মাস আগে ছেড়ে দেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্তানের জন্ম হয়। তুহিন আক্তার দিনাজপুরের বিরল উপজেলার জোসরাল গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী। তিনি গাজীপুর উপজেলার সফিপুর পূর্বপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে তুহিন আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী আমারে ছাইড়া চইলা গেছে। বাচ্চা পালার টাকা পয়সা নাই। এ জন্য বাচ্চাটা আমি তাদের দিয়া দিছি। আমি বেঁচে দেইনি। তারা খুশি হইয়া আমারে একটা থ্রিপিচ ও তিন হাজার টাকা দিচ্ছে। আমি এখন গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি, কথা পরে বলব।’
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তুহিন আক্তারের স্বামী সেলিম হোসেন তিন মাস আগে আরেক নারীকে বিয়ে করে পালিয়ে যায়। এ সময় তুহিন আক্তার গর্ভবর্তী ছিলেন। অনেক খোঁজাখুজি করে স্বামীকে না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়ে তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে তুহিন পুত্র সন্তান প্রসব করেন। শিশুটি লালনপালন করতে না পারায় দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তুহিন আক্তার ও শিশুর দাদি খাদিজা বেগম। পরে উপজেলার রাখালিয়াচালা গ্রামের প্রবাসী মনির হোসেনের স্ত্রী নাসিমা বেগম শিশুটি দত্তক নেন। এ সময় নাসিমা বেগম স্থানীয়দের মাধ্যমে নগদ ৫ হাজার টাকা দেন তুহিন আক্তারকে। পরে একটি সাদা নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে এলাকাবাসীর কয়েক জনের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর রেখে তুহিন আক্তারকে বিদায় দেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে উৎসুক মানুষ শিশুকে দেখতে মনির হোসেনের বাড়িতে ভিড় করেন।
তুহিন আক্তারের মা খাদিজা আক্তার বলেন, ‘তুহিনের আগেও তিন সন্তান রয়েছে। আমার মেয়েকে গর্ভবর্তী অবস্থায় রেখে তার স্বামী আরেক নারীকে বিয়ে করে পালিয়ে যায়। তুহিনের তিন সন্তানের মধ্যে আশরাফুল আলম (৬), সারমিনা আক্তার (৩) ও তানিয়া আক্তার (দেড় বছর)। তার তিন সন্তান লালনপালন করতেই হিমশিম খাইতে হচ্ছে। তাই জন্ম নেওয়া শিশুপুত্রকে দত্তক দেওয়া হয়েছে।’
এলাকাবাসী জানায়, নাসিমা বেগমের একটি কন্যা সন্তান হওয়ার পর দীর্ঘ ১৫ বছর কোনো সন্তান না হওয়ার কারণে ওই পুত্র সন্তানকে দত্তক নেন। সন্তানের বিনিময়ে স্থানীয়দের কাছে তিনি ৫ হাজার টাকা দেন।
কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা এখনও পর্যন্ত জানি না। তবে এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।