জুমবাংলা ডেস্ক : ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে উত্ত্যক্ততার অভিযোগ ছিল মো. হাবীব রানা নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। উত্ত্যক্ততার শিকার মেয়েটির অভিভাবকদের থানায় যেতে না দিয়ে রাতে সালিস বসিয়েছিল গ্রামের মাতবররা। সালিসে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করে হাবীব রানাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একই সঙ্গে তাঁকে এক দিনের মধ্যে ভাড়া বাসা ছেড়ে দেওয়ারও আদেশ দেন মাতবররা। কিন্তু জরিমানার টাকা জোগাড় করতে না পেরে সকালেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন হাবীব রানা।
রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার দক্ষিণ ভাংনাহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
হাবীব রানা (২৪) বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামের আবুল কালাম শেখের ছেলে। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার দক্ষিণ ভাংনাহাটি গ্রামের মনির হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সেখানে পাশের হ্যামস ফ্যাশন কারখানায় চাকরি করতেন তিনি।
নিহত হাবীব রানার ভাই মফিজুল ইসলাম জানান, গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে তাঁর ভাইয়ের মোবাইল নম্বর থেকে তাঁকে ফোন দেওয়া হয়েছিল। তাৎক্ষণিক ফোন ধরতে পারেননি তিনি। এক ঘণ্টা পর তাঁর ভাইয়ের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে তা ধরেন বাড়ির মালিকের ছেলের বউ। তখন তাঁকে জানানো হয়, পাশের কক্ষের এক ভাড়াটিয়ার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় হাবীব রানাকে আটকে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় সালিসে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা, চলতি অক্টোবর মাসের বাসা ভাড়া ও পাশের দোকান বাকি পরিশোধ করে এক দিনের মধ্যে বাসা ছাড়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা জেনে গতকাল রাতেই হাবীব রানার বাসায় যান তিনি। সেখানে গিয়ে তিনি জেনেছেন, তাঁর ভাইকে সালিসে মারধর করা হয়েছে।
পরে জরিমানার টাকা জোগাড় করার জন্য তিনি আজ রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু আজ সকাল ১১টার দিকে ঘর থেকে প্রতিবেশীরা তাঁর ভাইয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
মফিজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ার এক শিশু মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তাঁর ভাইয়ের কথোপকথনের রেকর্ডের সূত্র ধরে বাড়ির মালিককে জানান শিশুটির বাবা। তা জেনে তাৎক্ষণিক বাড়ির মালিক মনির হোসেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোজাম্মেল, জহিরসহ কয়েকজন প্রভাবশালী গত শনিবার রাতে হাবীব রানাকে ধরে এনে সালিস বসায়। সেখানে হাবীবকে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করে মারধর করেন। পরে জরিমানা ঘোষণা করে তা আদায়ের জন্য সময় বেধে দেন তাঁরা।
তবে বাড়ির মালিকের ছেলে নবু মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘হাবীবকে মারধর কিংবা জরিমানাও করা হয়নি। চলতি মাসের ভাড়া ও দোকান বাকি দিয়ে বাসা ছাড়তে বলা হয়েছিল।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, ‘দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর থেকে হাবীব রানার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহটি আজ দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে সালিস বসিয়ে মারধর, জরিমানা করা হয়েছিল কিনা তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সূত্র : কালের কন্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।