জুমবাংলা ডেস্ক : বাবা হারা জান্নাতুল নামে দুই বছরের শিশু সন্তানকে মেনে নিয়ে আকলিমা নামে এক গৃহবধুকে তৃতীয় বিয়ে করেন বাবুল মিয়া। বিয়ের পর স্ত্রী সন্তান নিয়ে কখনও গাজীপুর, কখনও নারায়নগঞ্জ এলাকায় কাজ করতেন তারা। শিশু জান্নাতুলকে মেনে নিয়ে আকলিমাকে বিয়ে করলেও তার শিশু কন্যাকে সহ্য করতে পারতেন না বাবুল। প্রায়ই মারধর করতেন।
গত ৮ মার্চ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে কোথাও কোন কাজ করতে না পেরে চলে আসেন নিজ গ্রামের বাড়িতে। এরই মাঝে গত ১৮ মার্চ জান্নাতুলকে বারান্দায় বসিয়ে মা আকলিমা বাইরে লাকড়ি কুড়াতে যান। এসময় শিশু জান্নাতুল পায়খানা প্রস্রাব করে বারান্দার সব কিছু নষ্ট করে ফেলে।
এই সময় বাবুল মিয়া বাজার থেকে এ অবস্থা দেখে শিশুকে চড় থাপ্পর দিয়ে গলায় চেপে ধরেন। জান্নাতুলের কান্না শুনে মেয়ের কান্না না শুনে মা আকলিমা দৌঁড়ে বাড়িতে এসে দেখেন তার মেয়ে ছটফট করছে।
ওই সময় জান্নাতুলকে বারান্দা থেকে উঠানে ফেলে দেন বাবুল।। শিশুর প্রাণ ফেরাতে মা অনেক চেষ্টা করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিক কি করবে বুজতে না পেরে সৎ বাবা ও মা শিশুর জান্নাতুলের লাশ রেললাইনের পাশে রেখে দুজনেই পালিয়ে যান গাজিপুরে।
শিশু জান্নাতুল হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৬ মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। মা ও সৎ বাবা শুক্রবার হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন আদালতে। এমন ঘটনাই ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কাশেম। তিনি বলেন, গত ১৯ মার্চ গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনের ২ নম্বর গেটের কাছ থেকে শিশু জান্নাতুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই দিনই গৌরীপুর থানা পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠান। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বেরিয়ে আসে শিশুটিকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।
পরে ১৭ আগস্ট গৌরীপুর থানার এসআই উজ্জল মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গৌরীপুর থানা পুলিশ প্রায় দেড়মাস তদন্তের পর মামলার কুলকিনারা করতে না পেরে ময়মনসিংহ পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশের কাছে মামলা হস্তান্তর করেন।
মামলার তদন্তভার গ্রহন করেন পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কাশেম। তিনি প্রযুক্তির সহায়তায় প্রধান আসামি বাবুল মিয়া ও শিশুটির মা আকলিমা খাতুনকে টঙ্গীর পূর্বথানা এলাকার অরিচপুর থেকে বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) গ্রেপ্তার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন শিশুর সৎ বাবা ও মা। পরে শুক্রবার (২ অক্টটোবর) বিকেলে সৎ বাবা ও মাকে ময়মনসিংহ আদালতে হাজির করা হলে হত্যার স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি দেন।
তিনি আরও বলেন, দুই বছরের শিশুটিকে সহ্য করতে পারতেন না সৎ বাবা। সে কারণেই হত্যা করে ফেলেন। আর লাশটি গুম করতে সহায়তা করেন শিশুটিরই মা। ঘটনার প্রায় ৬ মাস পর রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।