জুমবাংলা ডেস্ক : ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করায় জয়পুরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলার বাদী মুন্নুজান বিবিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ওই নারীর বাড়ি সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে। গত মঙ্গলবার আদালতের বিচারক মো. রুস্তম আলী এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ১৭ আগস্ট জয়পুরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম খঞ্জনের স্ত্রী মুন্নুজান বিবি বাদী হয়ে তার মেয়ে মাদ্রাসাছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগ করেন জয়পুরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। এতে একই গ্রামের মারুফ হোসেন ও তার বাবা-মাসহ চারজনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগের পর আদালত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা হওয়ার আগেই গত মঙ্গলবার মুন্নুজান বিবি আসামিদের সঙ্গে আপস করার দাবি করে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এ সময় তিনি মামলার অভিযোগ সত্য নয় বলেও আদালতের কাছে স্বীকার করেন। এতে বিচারক মো. রুস্তম আলী মিথ্যা অভিযোগ করায় বাদী মুন্নুজান বিবিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালের কোনো এক রাতে জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মোন্নাপাড়ার রবিউল ইসলাম খঞ্জনের মেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মিম্মার সঙ্গে তারই আপন বড় চাচা আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মারুফ হোসেনের বাল্য বিয়ে হয়। বিয়ের পরই মারুফ যে বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতেন অর্থাৎ প্রতিবেশী গোলাম নবীর বাড়িতে স্ত্রীসহ বসবাস করতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই শাশুড়ি মুন্নুজান বিবির নির্দেশ পেয়ে মারুফ স্ত্রীকে নিয়ে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করতে থাকে।
এরই মাঝে সঞ্চয় ও কিস্তির ৬০ হাজার টাকা মারুফ হোসেনের কাছ থেকে মুন্নুজান বিবি বাগিয়ে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে মারুফ ঢাকায় চলে গেলেও স্ত্রীকে কাছে পাওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিতে থাকেন। কিন্তু মুন্নুজান বিবি মেয়েকে মারুফের ভাত খাওয়াবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। পরে মারুফ আরেকটি বিয়ে করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মুন্নুজান। পরে স্থানীয় আবদুল কাদের নামে এক দালালের প্ররোচনায় চলতি বছর গত ১৭ আগস্ট জয়পুরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মারুফ হোসেন, তার বাবা আবদুর রাজ্জাক, মা মরিয়ম বিবি ও প্রতিবেশী গোলাম নবীর নামে ধর্ষণের মামলা করেন। অভিযোগের পর আদালত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।
ধলাহার ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, গত বছর কোনো এক রাতে স্থানীয় বিষ্ণুপুর এবতেদায়ি কোবানিয়া মাদ্রাসার সুপার মাওলানা সাকোয়াত হোসেনের উপস্থিতিতে পারিবারিক সিদ্ধান্তে মারুফ হাসান ও মিম্মা খাতুনের বাল্য বিয়ে দেওয়া হয়। জামাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এতদিন পরে এসে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়ে অসহায় পরিবারটিকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন মুন্নুজান বেগম। কিন্তু আদালত ন্যায়বিচার করেছেন। এ মামলা করাতে স্থানীয় দালাল আবদুল কাদের মুন্নুজান বিবিকে প্ররোচিত করেছেন বলেও জানান আনোয়ার হোসেন।
এ বিষয়ে মারুফ হাসানের বাবা আবদুর রাজ্জাক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার আপন ছোট ভাই এবং তার স্ত্রী মিলে আমাদের যে সর্বনাশটা করতে চেয়েছিল, তা আদালত মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। ন্যায়বিচার পেয়ে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
এ ব্যাপারে বাদী মুন্নুজান বিবির স্বামী রবিউল ইসলাম খঞ্জন বলেন, ‘যা কিছু হয়েছে, আমার স্ত্রীর জন্যই হয়েছে। এখানে আমার বলার কিছু নেই। তবে বাদী মুন্নুজান বিবি কারাগারে থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘আমার বাদী ন্যায়বিচার পাননি। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করছি আদালত আমার বাদীকে বেকসুর খালাস দেবেন।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ ম-ল বলেন, ‘জয়পুরহাটে নারী-শিশু ধর্ষণের মামলা ক্রমেই বাড়ছে। এই মামলাগুলো নিছক কারণেই করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলার কারণে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালত মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই বাদীকে ৫ বছর করে সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন। এটি একটি গ্রেট মেসেজ। এ ধরনের মিথ্যা মামলার বাদীকে যদি সাজা দেওয়া হয়, তা হলে আগামীতে মিথ্যা মামলা করা থেকে মানুষ বিরত থাকবে বলেও আমার বিশ্বাস।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।