জুমবাংলা ডেস্ক : অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে পাপুল এরইমধ্যে বিদেশে অবস্থান করায় তার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আর দেশে এসে থাকলে যেন বিদেশ যেতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্যরা হলেন- পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও সেলিনার বোন জেসমিন। গতকাল বুধবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বরাবর পাঠানো চিঠিতে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞায় অনুরোধ জানিয়েছে দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ অনুরোধ করা হয়েছে। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য (পরিচালক) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল এমপির হাতে প্রতারিত দেশে ফেরত আসা শ্রমিকরা জানান, তারা কুয়েতের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আদালতের সঠিক চিত্র তুলে ধরেছেন। কুয়েত কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পুরো ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ফ্লাইটে ওঠার আগে তাদের হাতে ধরিয়ে দেয় মাত্র দেড়শ’ কুয়েতি দিনার (একচল্লিশ হাজার টাকা)। তা নিয়েই তারা দেশে ফেরেন।
কুয়েতে বন্দি এমপি শহীদের জালিয়াতির শিকার যে ১১ শ্রমিক কুয়েত আদালতে জবানবন্দি দিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেছেন তাদের মধ্যে নওগাঁর আবদুল আলিম, ময়মনসিংহের শাহ আলম, সোহাগ মিয়া অন্যতম। বিদেশ গিয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে এদের কেউ আত্মীয়-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কেউ বসতভিটা বিক্রি করে কাজী শহীদ ইসলামের মালিকানাধীন আদম ব্যবসার প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেন। কিন্তু কুয়েত গিয়ে বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন।
ভাগ্যবিড়ম্বিত সোহাগ মিয়া জানান, কাজী শহীদ টাকা খরচ করতেন পানির মতো। সে দেশের প্রশাসনের লোকজনকে ঘুষ দিয়ে হুন্ডি-টাকা পাচার করতেন। পার্টি দিয়ে প্রচুর অর্থ খরচ করতেন। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন দিতেন না। বেতন চাইলেই নানাভাবে জুলুম নির্যাতন করা হতো।
ময়মনসিংহের মল্লিকবাড়ি এলাকার ২৯ বছর বয়সী শাহ আলম কাজী শহীদের ফকিরাপুলস্থ ‘মারাফি কুয়েতিয়া’কে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দেন। তিনি কাজের ভিসা নিয়ে কুয়েত যান। তাকে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে ভিসা দেয়া হয়। মাসে বেতন দেড়শ’ দিনার। শাহ আলম বলেন, কিন্তু আমি চাকরি পাইনি। কোম্পানি দুই মাসের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। তারপর বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। সেখানে কাজ পাই। বিমানবন্দরে কাজ পাওয়ার জন্যে শহীদের লোকদের প্রতিদিন ১০ দিনার দিতে হতো। আসলে কুয়েতের সিআইডি কর্মকর্তা ও শহীদের লোকদের মধ্যে যোগসূত্র আছে। তারা সবাই আমাদের বোকা বানিয়েছে। সব হারিয়ে দেশে ফিরেছি।
৪৩ বছর বয়সী নওগাঁর আব্দুল আলিম ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় শহীদের এজেন্সিকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দেন। দুই সন্তানের জনক আলিম সংবাদিকদের বলেন, পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কর্মভিসা ছিল। আট ঘণ্টার শিফট মাসে বেতন ১৪০ দিনার। গিয়ে দেখি প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টার শিফট। বেতন মাসে ১০০ কুয়েতি দিনার। সেখানে শহীদের লোকদের প্রতিদিন আট দিনার করে দিতে হতো। আমান ও মাহবুব নামের দুই জন সেই টাকা নিত। করোনার কারণে লকডাউন শুরু হলে কুয়েতের আব্বাসিদ এলাকায় তার মালিকানাধীন একটি ভবনে নিয়ে আসা হয়। কয়েকদিন পর মরুভ‚মিতে সেই প্রতিষ্ঠানের একটি ক্যাম্পে পাঠানো হয়। একদিন রাতে কুয়েতের সিআইডি পুলিশ সেই ক্যাম্পে অভিযান চালায় এবং আমাদের সিআইডি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে আরও ১১ জনকে দেখি। সিআইডি ভবনে শহীদ ও তার সহযোগী রাশেদকে দেখতে পাই। সিআইডি কর্মকর্তারা জানান যে, আমাদের কোম্পনি অবৈধ। তাই কুয়েতে থাকাটাও অবৈধ। সিআইডি অফিসে জানতে চাওয়া হয়, শহীদকে কতো টাকা দিয়েছি। তারা লোভ দেখায়, যে টাকা খরচ করেছি তা ফিরিয়ে দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু হঠাৎ ১২ জনকে তারা গত সোমবার রাতে বিমানবন্দরে নিয়ে এসে সবাইকে দেড়শ’ দিনার ধরিয়ে দিয়ে বলেন. বাকিটা পরে দেয়া হবে।
উল্লেখ, প্রতারণা-মানবপাচার-অর্থ পাচারের অভিযোগে লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা পাচার, প্রতারণার অভিযোগ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পেয়েছে বলে খবর দিয়েছে সে দেশের গণমাধ্যম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।