জুমবাংলা ডেস্ক : জুতার সূত্র ধরে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস একটি হত্যা মামলার তিন আসামিকে পাকড়াও করেছে শেরপুর পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সাগর (২০), বিল্লাল মিয়া (২৫) ও সাইম মিয়া (১৮)। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি শ্রীবরদীতে। সদর উপজেলার উত্তর নৌহাটা তাতালপুর এলাকার অটোরিকশা চালক আনসার আলীকে হত্যার ১৯ দিনের মাথায় রহস্য উদঘাটন করা হলো।
বুধবার বিকালে এএসপি (সদর) সার্কেল আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই বিকালে শ্রীবরদীর গড়জরিপা ইউপির শৈলারকান্দা গ্রামের শৈলা বিল থেকে অটোরিকশা চালক আনসার আলীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশে ভিকটিমের পায়ের জুতা ও তার পাশে আরেক জোড়া জুতা উদ্ধার করে। পরে আনসার আলীর স্ত্রী জরিনা বেগম লাশ শনাক্তের পর অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুম করার অভিযোগে শ্রীবরদী থানায় মামলা দায়ের করে। এর পরপরই পুলিশ মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে মাঠে নামে।
প্রথম অবস্থায় উদ্ধারকৃত জুতা ছাড়া আর কোন ক্লু ছিলো না এ মামলায়। সেই জুতার সূত্র ধরেই ঘটনাস্থলের আশপাশের গ্রামগুলোর জুতা ব্যবহারকারীর পরিচয় খোঁজার চেষ্টা চলে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকে।
এক সপ্তাহ পর পুলিশ জুতা ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্তের জন্য একটি ক্লু খুঁজে পায়। একইরকম নতুন একজোড়া জুতা সাগর নামে এক তরুণের পায়ে রয়েছে- এমন খবরে তাকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণ জানায় তার আগের জুতাগুলো ছিঁড়ে যাওয়ায় ২৯ জুলাই সে নতুন জুতা কিনে আনে। তার পুরনো জুতাগুলো দেখার জন্য তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ঘর থেকে সাগর পুরাতন জুতা আনবে বলে কৌশলে পালিয়ে যায়।
এরপর সাগরের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারের কললিস্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘটনার দিন ওই তরুণের অবস্থান ছিল মামলার ঘটনাস্থল শৈলার বিলে।
পরে স্থানীয় বিট পুলিশিং এর সদস্যদের মাধ্যমে সাগরের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রেখে অভিযান চালিয়ে গত ১৭ আগস্ট তাকে (সাগরকে) শ্রীবরদী পুলিশ হেফাজতে নেয়। এ সময় পুলিশের উপর্যুপরী জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদের নাম প্রকাশ করে।
তার দেয়া তথ্যমতে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত বিল্লাল মিয়া (২৫) ও সাইম মিয়াকে (১৮) গ্রেপ্তার করে। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে তারা।
আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আসামির মধ্যে দু’জন সদর উপজেলার তাতালপুর বাজার থেকে আনসার আলীর অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে কালিবাড়ি বাজারে যায়। গন্তব্যে পৌঁছে আসামিরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া দিতে চাইলে আনসার আলী তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তখন ওই দুইজন তাদেরকে আরেকটু এগিয়ে দিতে বলে এবং সেখানে তাদের লোকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দিবে বলে জানায়।
দুই আসামি কালিবাড়ি থেকে কুরুয়া সড়কে যাওয়ার সময় শৈলার বিলের মাঝামাঝি বড় ব্রিজের কাছে আনসার আলীকে ভাড়া না দিয়ে উল্টো তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। তখন সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা গ্রেপ্তার আসামির সহযোগীরা আনসার আলীকে উপর্যুপরী কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং তার পকেটে থাকা টাকা কেড়ে নেয়।
তাদের মধ্যে একজন আনসার আলীর গলা চেপে ধরে ধাক্কা দেয়। আনসার ব্রিজ থেকে পানিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন ৫/৬ জন আসামি আনসার আলীকে পানিতে চুবিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর আরও ৪/৫ জন আনসার আলীর শরীর থেকে শার্ট এবং লুঙ্গী খুলে লাশ বিলের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখে। ঘটনায় সাথে মোট ১২ জন জড়িত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।