জুমবাংলা ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে জুলাইয়ের চেতনা ধারণকারী প্রায় একশটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘জুলাই ঐক্য’।
রবিবার (২৫ মে) বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্ল্যাটফর্ম সংশ্লিষ্টরা। সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, শহীদ পরিবারের সদস্য, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, সাবেক সেনা অফিসারসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় রণ সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। জুলাইয়ের শহীদ হৃদয়ের বড় ভাই আনিসুর রহমান সমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্লাটফর্মের অন্যতম সংগঠক এবি যোবায়েরের সঞ্চালনায় সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জুলাই ঐক্যের সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ।
সমাবেশে বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, জুলাইয়ের গাদ্দার তারা, যারা গণহত্যার বিচার নিয়ে গড়িমসি করছে, যারা জুলাইয়ের চেতনা ব্যবসা করছে। একাত্তরের পরে আমরা দেখেছি যারা নতুন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তারা হয়েছে একাত্তরের স্বপক্ষের শক্তি। একইভাবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে যারা নয়া বন্দোবস্তে যোগ দেয়নি তারা জুলাইয়ের বিপক্ষের শক্তি হয়ে গেছে। এই সরকারের মধ্যে জুলাইয়ের গাদ্দার রয়েছে। তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে প্রহসন করেছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম বলেন, জুলাইয়ের আসল নায়ক হলো শহীদ ও আহতরা। কিন্তু আমরা এখন দেখছি, একটা মহল জুলাইকে নিজেদের কুক্ষিগত করে নিয়েছে। জুলাইয়ে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। জুলাইয়ের ঠিকাদাররা আলেমদের বঞ্চিত করেছে। এখনো আমাদের বিচারের দাবিতে রাজপথে নামতে হচ্ছে।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যদি দায়িত্ব নিতে না পারেন তাহলে পদত্যাগ করুন। যদি জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ না করেন, শহীদদের সঙ্গে যদি গাদ্দারি করেন, তাহলে খুনি হাসিনার মতো আপনাদেরও একই পরিণতি হবে।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, আমরা একটা কঠিন সময় পার করেছি। আমরা শুনেছি যেসব দল সরকারকে অসহযোগিতা করেছে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু আমরা জানতে চাই, যেসব উপদেষ্টা জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে তাদের তালিকা কবে প্রকাশ হবে? ৫ আগষ্ট আমরা জুলাই যোদ্ধারা দিল্লির আধিপত্যবাদকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। আগামীতেও এই বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের কোনো ঠাঁই হবে না।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, গত পনেরো বছর ধরে ভারতীয় আধিপত্যবাদ এদেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে যেভাবে জেঁকে বসেছে এই ভারতীয় আধিপত্যবাদকে সব সেক্টর থেকে উৎখাত করতে হবে। গতকাল রাজনৈতিক দলগুলো কেবল নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছে। কিন্তু এই শহীদ পরিবারগুলোর কেউ কথা বলেনি। আমরা সরকারকে বলবো, আপনারা শহীদ পরিবারগুলোকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন আগে সংস্কার না নির্বাচন। আগে গণহত্যার বিচার না নির্বাচন। আগামীতে যারা ভারতের সুরে কথা বলবে তাদেরকে এদেশের জনগণ হাসিনার মতো ভারতে পাঠিয়ে দেবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সংস্কার, নির্বাচন, গণহত্যার বিচার ও জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদানসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাইয়ে জনগণ জীবন দেয়নি। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গণহত্যার বিচার শেষেই নির্বাচন দিতে হবে।
সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিগত সরকার ছিল একটা খুনী সরকার। তারা এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে। জুলাইয়ের দশ মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা এখনো শহীদদের তালিকা করতে পারিনি। আহত পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না। অনেক শহীদ পরিবার করুণ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। জুলাইয়ে যারা জীবন দিয়েছে তারা কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জীবন দেয় নাই। তাদের রক্তের ওপর দিয়ে যারা ক্ষমতায় বসেছে তাদের দায়িত্ব এই পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
এছাড়াও সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ইমরান হোসাইন নুর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফেরদাউস আজিজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংগঠন পুনাব ও পুসাবের প্রতিনিধি, স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটির (স্বারক) প্রতিনিধি প্রমুখ।
নিশ্চিত থাকেন, দেশের অনিষ্ট হয় এমন কোনো কাজ হবে না : ড. ইউনূস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।