মাহফুজ শাকিল: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ওপর স্থাপিত দীর্ঘদিনের পুরাতন ফানাই বেইলি সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সহস্রাধিক গাড়ি চলাচল করছে। চালকরা মানছেন না কোনো নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়ে গত দুই বছরে আট থেকে দশ বার ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিন গিয়ে ও সওজ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পৃথিমপাশা, কর্মধা, টিলাগাঁও, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ রবিরবাজার-কুলাউড়া সড়কপথ দিয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। সড়কের রাউৎগাঁও অংশে ফানাই নদীর ওপর থাকা পুরাতন বেইলি সেতুটির ট্র্যানজাম, পাটাতন ভেঙে প্রায়ই বিকল হয়ে যায়।
চলতি বছরের ১৮ মার্চ ও ২ জুলাই সেতুটির ট্র্যানজাম ভেঙে যাওয়ায় এ পথ দিয়ে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সেতুর ওপরের অংশে থাকা স্টিলের ৩টি প্লেট খুলে যায়। গত কয়েক দিন আগে বেইলি সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রেখে ওয়েল্ডিং করে লোক দেখানো সংস্কার কাজ করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সংস্কারের কয়েক ঘণ্টা পরই সেতুর দুইটি স্টিল প্লেট আবার খুলে যায়। খুলে যাওয়া স্টিল প্লেটের মধ্যে ৪-৫ ইঞ্চি ফাঁকার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।
এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী সৈয়দ আশফাক তানভীর বলেন, ‘কুলাউড়া-রবিরবাজার-টিলাগাঁও সড়কটি দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ ছিল। সড়কটি সম্প্রতি নতুন করে পুনঃসংস্কার হয়েছে। কিন্তু সড়কের ফানাই বেইলি সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়নি। দীর্ঘদিনের পুরাতন সেতুটি জোড়াতালী দিয়ে সংস্কার করে সচল রাখা হয়েছে। সেতুটি পুরাতন ও ঘন ঘন ভেঙে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন ছোট-বড় গাড়ির সঙ্গে বালু ও পণ্যবোঝাই ট্রাক যাতায়াত করে। বিকল্প ব্রাহ্মণবাজার-শমসেরনগর সড়ক থাকা সত্ত্বেও সহজ দূরত্বের জন্য রবিরবাজার সড়কটি দিয়ে ভারী যান চলাচল করে।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কমরেড আব্দুল লতিফ বলেন, ফানাই বেইলি সেতুটি প্রায় তিন দশকেরও বেশি পুরোনো। সেতুটির অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রাজাপুর সেতু চালু হলে চাতলাপুর চেকপোস্ট থেকে এ পথ দিয়ে ভারী যান চলাচল আরো বৃদ্ধি পাবে। সেতুটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে নির্মাণ করা উচিত।
স্থানীয় রাউৎগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামাল বলেন, সেতুটি গত দুই বছরে ৮-১০ বার ভেঙে যায়। সেতুটির নিচের অংশ অনেকটাই দেবে গেছে। স্টিলের প্লেটগুলো সংস্কার করা হলেও প্লেটগুলো আবার খুলে যায়। সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
সড়ক ও জনপথ কুলাউড়া কার্যালয়ের উপ সহকারী প্রকৌশলী সুভাষ পুরকায়স্থ বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু গাড়ি চালকরা বাধা না মেনে ওইদিন সন্ধ্যা থেকে সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু করায় স্টিল প্লেটের ঝালাই ছুটে গেছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন আজ বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, বেইলি সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করার জন্য একাধিকবার প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। কিন্তু নতুন সেতুর অনুমোদন পাইনি। স্থানীয় সাংসদের ডিও লেটারও পাঠিয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজুর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেতুটি দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কুলাউড়া-রবিরবাজার সড়কে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। কিন্তু চালকরা সেই নিষেধাজ্ঞাটি তোয়াক্কা না করেই ভারী যানবাহন নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।