দেশজুড়ে চলমান দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের চাপ সহ্য করতে না পেরে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী রোসেন ঝেলিয়াজকভ। মাত্র এক বছরের বেশি সময়ের শাসনের মধ্যে রক্ষণশীল সরকারটি জনঅসন্তোষের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলো।
বুলগেরিয়ার সরকার টানা বিক্ষোভ এবং দুর্নীতি দমন ব্যর্থতার অভিযোগের মুখে পদত্যাগ করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি জানায়, বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী রোসেন ঝেলিয়াজকভ আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন।
রাজধানী সোফিয়া থেকে কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী নগরীগুলোতে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দেন। প্রথমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দ্রুত সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে দরিদ্র সদস্য রাষ্ট্র বুলগেরিয়ায় কয়েক দিন ধরে চলা এই বিক্ষোভে বিপুল জনসমাগম দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী ঝেলিয়াজকভ ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, “সরকার আজ পদত্যাগ করছে।” ক্ষমতায় আসার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তার রক্ষণশীল সরকার জনঅসন্তোষের চাপে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলো।
বিক্ষোভকারীরা সরকারের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিল। পদত্যাগের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বুলগেরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন মোড় নেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বিক্ষোভের বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখে গত সপ্তাহে প্রকাশিত ২০২৬ সালের বাজেট পরিকল্পনা। প্রথমবারের মতো ইউরোতে প্রণীত সেই প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে অবদান এবং লভ্যাংশের ওপর কর বাড়ানোর বিষয়টি সামনে আসে। বিরোধী দলসহ বিভিন্ন সংগঠন অভিযোগ তোলে—কর বাড়িয়ে অতিরিক্ত ব্যয় মেটানোর সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। বাজেট পরিকল্পনা প্রকাশের পরপরই দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা চাপের মুখে সরকার পরে প্রত্যাহার করে নেয়।
তবে বাজেট সংশোধনের সিদ্ধান্ত বিক্ষোভ থামাতে পারেনি। বরং বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশ দূর না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। গত চার বছরে সাতটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এই সঙ্কট আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল ২০২৪ সালের অক্টোবরে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আইটি পেশাজীবী অ্যাঞ্জেলিন বাহচেভানোভ বলেন, ‘বুলগেরিয়াকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর এখনই সময়। আমরা যেন অলিগার্কি, মাফিয়া ও তাদের প্রতিনিধিত্বকারী শক্তির হাত থেকে মুক্ত হতে পারি।’
দুর্নীতি, অর্থনৈতিক চাপ এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার মিশ্রণে বুলগেরিয়ার চলমান সঙ্কট নতুন এক মোড় নিলো—সরাসরি সরকারের পদত্যাগে। এখন দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোয়, তা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে ইউরোপজুড়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



