আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি হিসাবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনায় এরই মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৯৮৩ জনের। আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে একই ধরণের মহামারিতে কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। করোনা মহামারি শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের শেষের দিকে। আগের মহামারিটি আঘাত হেনেছিল ১৯১৮-১৯১৯ সালে।
কোভিড-১৯ এর তুলনা শুরু হয়েছে ‘স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা’ মহামারীর সঙ্গে। আজ থেকে ঠিক এক শতক আগের এই মহামারি মানবজাতির সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম, যা পৃথিবী জুড়ে কেড়ে নিয়েছিল ২ থেকে ৫ কোটি মানুষের প্রাণ। ১৯১৮-১৯১৯ সময়ে সারাবিশ্বে ছড়ানো সেই ইনফ্লুয়েঞ্জার উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছিল তা জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, ওই ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যু হয়েছিল ৫০ লাখ মানুষের এবং আক্রান্ত হয়েছিল ৫০ কোটি মানুষ। H1N1 ভাইরাসের কারণে ওই ইনফ্লুয়েঞ্জাটি ছড়িয়েছিল। এ ভাইরাসের কারণে ওই সময় শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রাণ হারিয়েছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও এত মানুষের প্রাণহানি হয়নি। বিশ্ব ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক মহামারি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ১৩৪৭ সালে থেকে ১৩৫১ সময় প্লেগ রোগে চার বছরে যত মানুষ মারা গিয়েছিল ১৯১৮-১৯ ব্যাপী এক বছর ওই ভাইরাসে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়, ওই ইনফ্লয়েঞ্জা পরিচিতি পেয়েছিল ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ বা লা গ্রিপি নামে। বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ মানুষ তাতে আক্রান্ত হয়েছিল।
শতবছর আগের প্রকৃতির এই নিধনযজ্ঞের কেন্দ্রে ছিল ভারতবর্ষ, প্রাণ হারিয়েছিলেন ১ থেকে ২ কোটি মানুষ। দুটি ধাপে ভারতকে গ্রাস করে স্প্যানিশ ফ্লু – প্রথম ধাপে এর প্রভাব ছিল অপেক্ষাকৃত মৃদু, কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে সারা দেশে আছড়ে পড়ে মহামারি ১৯১৮ সালের শেষ ভাগে। মনে করা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরতে থাকা সৈনিকদের হাত ধরেই ভারতে প্রবেশ করেছিল স্প্যানিশ ফ্লু।
এই মহামারির তীব্রতা, বিস্তারের গতি, এবং স্থায়িত্ব অনুমান করতে তৎকালীন ৯টি প্রদেশের ২১৩টি জেলায় সাপ্তাহিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান ভিত্তিক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। সেই গবেষণাপত্রের লেখকরা বলছেন, তাঁদের অনুমানের উদ্দেশ্য হলো স্থান- এবং সময়-ভিত্তিক তথ্য ব্যবহার করে ১৯১৮’র মহামারির বিস্তার, মৃত্যুর হার, এবং বিবর্তনের চরিত্র নির্ধারণ করা।
তবে স্প্যানিশ ফ্লুতে ৫ বছরের নিচে, ২০-৪০ বছর বয়সী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার হার ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে তখন কোনো প্রচলিত চিকিৎসা ছিল না। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন, ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল যা এখন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও করা হচ্ছে। করোনারও কোন সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
মারাত্মক ছোঁয়াচে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি নিছক সাধারণ কোন ফ্লু ভাইরাস নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিনের গঠন বদলে প্রতিনিয়ত এই ভাইরাস নিজের চরিত্রই বদলে ফেলছে এবং আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এত বেশি নিজেকে বদলাচ্ছে এই ভাইরাস যে এর মতিগতি বোঝাই অসম্ভব হয় পড়ছে বিশ্বের বাঘা বাঘা ভাইরোলজিস্টদের কাছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



