টেকনোলজি ও ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তিই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে ডিজিটাল আসক্তি নামে পরিচিত। ডিজিটাল আসক্তির তিনটি ধরন রয়েছে, যথা ফোন আসক্তি, ইন্টারনেট আসক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি। সব বয়সের মানুষের মধ্যে এ আসক্তি দেখা দিলেও কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীরা এ আসক্তিতে বেশি আক্রান্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, চার থেকে ১৭ বছর বয়সী অন্তত ৬০ লাখ শিশু-কিশোর বর্তমানে ‘এডিএইচডি’তে (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার) আক্রান্ত। মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট ও মোবাইলের প্রতি আসক্তি এডিএইচডি নামক মানসিক রোগের সৃষ্টি করে। এই ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোন কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে না। গত দুই দশকে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে এবং মোবাইল ডিভাইসে অতিরিক্ত আসক্তিকেই এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের কল্পনাশক্তি এবং চিন্তাশক্তিও কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইন্টারনেটের আসক্তিকে কীভাবে প্রতিরোধ যায়, সে সম্পর্কে নিম্নের কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে :
১। মোবাইল বা কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় পর্যাপ্ত অপ্রাসংগিক নোটিফিকেশন বা বিজ্ঞাপন ভেসে ওঠে, যা ছেলেমেয়েদের অনলাইনে যাওয়ার ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়। এ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে পারলে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল আসক্তি দূর করতে সহযোগিতা করবে।
২। অভিভাবক বা শিক্ষকদের মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা-মা বা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যা করতে দেখে তাই অনুকরণ করে থাকে। তাই অভিভাবকদের অনলাইন ব্যবহারের অভ্যাস পর্যালোচনা করে নেতিবাচক আচরণ বর্জন করতে হবে। তাহলে সন্তানদের ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে মুক্ত রাখা সহজ হবে।
৩। অন্যের সঙ্গে তথা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক দৃঢ় রাখতে হবে এবং তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সময় ব্যয় করতে হবে। ইন্টারনেটে বেশি সময় ও শক্তি ব্যয় করলে অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক নষ্ট হয় এবং ডিজিটাল আসক্তি বৃদ্ধি পায়। সুতরাং কাছের মানুষদের সঙ্গে উপযুক্ত সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলে সন্তানদের এ জাতীয় আসক্তি থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে।
৪। সংযত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি উভয়ই ছেলেমেয়েদের কম্পিউটারে শপিং করা, গেম খেলা বা লগ ইন করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে, যা ডিজিটাল আসক্তি তৈরির অন্যতম কারণ। সুতরাং ডিভাইস ব্যবহারে নিজেদের যেমন সংযত থাকতে হবে, তেমনি সন্তানদেরও সময় নির্ধারণ করে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাহলে, ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল আসক্তি কমে যাবে।
৫। বাসাবাড়িতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রযুক্তিগত ডিভাইস ও মোবাইল থাকা এবং সেগুলো যত্রতত্র রাখা ঠিক নয়। কারণ ঘুরতে ফিরতে ছেলেমেয়েরা তা স্পর্শ করতে আগ্রহী হয় এবং ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং বাসাতে ডিভাইসগুলোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ রাখা উচিত এবং সেগুলিকে অন্য জায়গায় ব্যবহার করতে নিষেধ করতে হবে। শয়নকক্ষ, স্টাডি রুম এবং ডাইনিং অঞ্চলগুলি অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।