একলাছ হক : রাজধানী ঢাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে গণপরিবহন ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা। এসব যানবাহনে সিএনজির মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার যেন কোনো ব্যাপারই না। সবাই যেন এ ব্যাপারে উদাসীন। যানবাহনের মালিক কিংবা চালক কারো যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই বিষয়টি নিয়ে। মাঝে মাঝে কোথাও কোথাও সিএনজি চালিত গাড়ি বা সিএনজি স্টেশনে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটলেও পরবর্তী সময়ে সবাই ভুলেই যায়। শুধু ঢাকা শহরেই চলছে লাখ লাখ সিএনজি চালিত অটোরিকশা। এছাড়া সিএনজি চালিত প্রাইভেটকার ও গণপরিবহনতো রয়েছেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, সিএনজি চালিত যানবাহনের বিষয়ে আরো বেশি দায়িত্বশীল তদারকির ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমরা লক্ষ করি ঢাকায় যেসব সিএনজি পুরোনো হয়ে যায় এর অনেকগুলো আবার গ্রাম এলাকায় ব্যবহার করে এতেও কিন্তু ঝুঁকি রয়ে যায়। এগুলো ব্যবহারে ঝুঁকিতে ফেলেন সাধারণ মানুষকে। এসব নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কঠোর হয়ে কাজ করতে হবে। কোনো ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটি করেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। তা না করে টেকনিক্যাল লোকজন দিয়ে কাজ করাতে হবে। বড় দুর্ঘটনায় শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে। নাহলে তদন্ত থেমে যাবে। আমলা নির্ভর কোনো কিছু করা যাবে না। জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। উচ্চপদে অসীন যারা তাদের নৈতিকতার সাথে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। ঢাকা একটা মেগাসিটি, এখানে প্রচুর মানুষ প্রচুর গাড়ি। একটা বø্যাস্ট যদি হয় তাহলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। দুর্ঘটনার মধ্যে সিএনজি বø্যাস্ট করে। এই ঝুঁকির মাত্রাটা যারা অনুমোদন দিয়েছেন তাদেরই কিন্তু রেগুলেট করার কথা। যেহেতু তাদের লোকবল নেই সেক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে চলে যাওয়া উচিত।
সারাদেশে অসংখ্য মেয়াদোত্তীর্ণ এবং নিম্নমানের সিলিন্ডার ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে চড়ছে যাত্রীরা। পাঁচ বছর পর পর সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা করতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ মালিক কিংবা চালকই এসবের কিছুই জানেন না। ঢাকায় চলাচল করা একেকটি গণপরিবহন যেন একেকটি চলমান বোমা। নিয়মিত গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করার কারণে গণপরিবহনগুলো মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই যদি কঠোর নজরদারী করা না হয় তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে। জ্বালানি সাশ্রয়ে রাজধানীর অধিকাংশ যানবাহনে ব্যবহার করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান, লেগুনায় ব্যবহার করা এসব গ্যাস সিলিন্ডার। ব্যবহারের অনুপযুক্ত এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় মানুষসহ যানমালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ মানহীন ও সময়মতো পুনঃপরীক্ষা না করানোয় এসব সিলিন্ডার মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসবে দায় চাপাচ্ছে বিআরটিএর (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) ওপর। দেশে প্রায় ৫ লাখ সিএনজিচালিত যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে একই সিলিন্ডার পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা গাড়ির সংখ্যা অন্তত ৭০ শতাংশ। পুনঃপরীক্ষা ছাড়াই সড়ক-মহাসড়কে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার নিয়েই অসচেতনতা আর আইন প্রয়োগের ঘাটতি থেকেই ঘটে দুর্ঘটনা। কারণ জ্বালানি খরচ কমাতে সিলিন্ডার ব্যবহারে গাড়ির মালিকরা যতটা উদ্যোগী, ঠিক ততটাই উদাসীন রক্ষণাবেক্ষণে। যে কারণে মাঝে মাঝেই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। গ্যাস চাপের ক্ষমতা অনুযায়ী সিলিন্ডারের মেয়াদ ধরা হয় ১০ থেকে ১৫ বছর। নিয়ম হলো, প্রতি ৫ বছর পর পর সর ধরনের সিলিন্ডার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তবে সেটি যে হয় না। এছাড়া গাড়িতে গ্যাস নেয়ার সময় যাত্রীদের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হয় সেটি প্রায় সবারই জানা। কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি জেনেও এ যেনো এক নিয়ম ভাঙার নীরব প্রতিযোগিতা। অটোরিকশা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গাড়ি, গ্যাস নেয়ার সময় যানবাহন থেকে নামেন না বহু মানুষ। জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইন প্রয়োগে কঠোর হবার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার সময় সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো গ্যাসটা যেন লিকেজ না হয়ে যায়। কারণ গ্যাস ভরার সময় লিকেজ হয়ে চারপাশে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। সেটাই বিস্ফোরণ হয়। প্রচলিত জ্বালানির চেয়ে অর্ধেক বা এরও কম খরচে এই জ্বালানি ব্যবহার করা যায়। তাই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অনুমোদিত এবং অননুমোদিত সিএনজি রূপান্তরের বহু প্রতিষ্ঠান। রয়েছে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগও, যার খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর ল²ীপুরে একটি বাসে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই তিন জন নিহত হয়েছেন। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের কয়েকজনের হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর আগে ঢাকা-লক্ষীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত গ্রিন লাইফ ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস নেওয়ার সময় একটি বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়।
চালকরা জানান, সিলিন্ডার চেক করানো বা সিলিন্ডারের পরীক্ষা করানোর কথা আমাদেরকে মালিকরা কখনো বলে না। মালিকরা গাড়ি দিয়েছে আমরা শুধু চালাই। বালু জমলে ফিল্ডার পরিষ্কার করি কিন্তু সিলিন্ডার করা হয় না। পরীক্ষা করা উচিত কিন্তু কিভাবে করতে হবে তা তো জানি না। সূত্র : ইনকিলাব
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।