জুমবাংলা ডেস্ক: ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নিয়ম ভেঙে গোপনে দল বেঁধে বিভিন্ন জেলায় নিজ বাড়ি ফিরছেন। গত কয়েক দিন তাদের বাড়ি ফেরার ঘটনায় এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।
জাতীয় দৈনিক সমকালের বিভিন্ন অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
কিশোরগঞ্জ :গত সোমবার গভীর রাতে কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম এলাকায় একটি পিকআপ ভর্তি মানুষ বাড়ি ফেরে। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের কাছে এত রাতে কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলে তারা সঠিক তথ্য না দিয়ে কয়েকজনকে নামিয়ে দিয়ে অন্যদের নিয়ে দ্রুত চলে যায়। একইভাবে নদী ও সড়কপথে করিমগঞ্জ, বালিখলা, বাজিতপুর, নিকলী হয়ে অনেক শ্রমিক হাওরাঞ্চলে প্রবেশ করে নিজ নিজ গ্রামে ঢুকছে।
কটিয়াদী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুস সোবহান বলেন, পুলিশ কঠোরভাবে মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ ধরনের ঘটনা নজরে এলে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আক্রান্ত এলাকা থেকে এভাবে মানুষ এলে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হতে পারে বলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) জেলা সভাপতি ডা. দীন মোহাম্মদসহ স্থানীয় কয়েক চিকিৎসক জানান।
পটুয়াখালী :গত ৪ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে সড়ক ও নদীপথে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ আসে পটুয়াখালী সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। স্থানীয় প্রশাসন এসব লোককে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিলেও কেউ তা মানছে না। এমনকি তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও চলাচল করছে না। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর মানুষ। গত ৯ এপ্রিল দুমকীতে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক গার্মেন্টস কর্মীর মৃত্যু ও তার বড় বোন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম জানান, যারা অন্য জেলা থেকে আসছে তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়ে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর :গত এক সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ থেকে শতাধিক ব্যক্তি লক্ষ্মীপুরে এসেছে। এর মধ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রায় ৫০ জনকে খুঁজে বের করে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে। অন্যরা আত্মগোপনে আছে। এর মধ্যে অনেকেই পাড়া-মহল্লা, হাটবাজারে অবাধে বিচরণ করছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে জেলাব্যাপী। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে রামগঞ্জ ও ঢাকা থেকে রামগতিতে আসা করোনায় আক্রান্ত দুইজন শনাক্ত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী গাড়ি ও ট্রলারযোগে কৌশলে তারা আসে।
মাগুরা :গত ৪-৫ দিনে নারায়ণগঞ্জ থেকে কয়েকশ’ মানুষ মাগুরার বিভিন্ন স্থানে ঢুকেছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, মাঠ পর্যায়ে কর্মী নামিয়ে তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এ পর্যন্ত জেলায় বিদেশফেরত ৪০০ জনের কোয়ারেইটাইন শেষ হয়েছে। এখন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ৬৭৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে।
কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) :নারায়ণগঞ্জ থেকে শ্রমজীবীদের আসা কোনোভাবেই আটকানো যাচ্ছে না। এতে কাশিয়ানী উপজেলায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন স্থানীয়রা। মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও গ্রামের বিকল্প রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করেছে তারা। ইউএনও সাব্বির আহমেদ বলেন, বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের ঘরে থাকতে বলছি। কেউ কোয়ারেন্টাইন অমান্য করলে সাজা দেওয়া হচ্ছে।
পটিয়া (চট্টগ্রাম) :ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে অন্তত দেড় শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা এসেছেন পটিয়ায় নিজ বাড়িতে। এদের অনেকের এলাকায় আসার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে হোম কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও বেশিরভাগই সে নিয়ম মানছে না। ইউএনও ফারহানা জাহান উপমা বলেন, ব্যাংকারদের অনেকেই বাইরে ঘোরাঘুরি করছে বলে অভিযোগ পাচ্ছি। কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) :ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে গার্মেন্টস ও কল-কারখানার শ্রমিকরা গোপনে বাড়িতে এসে লুকিয়ে থাকলেও এদের পরিবারের লোকজন এলাকার মানুষদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করায় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। ইতোমধ্যে উপজেলায় একজনের দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ইউএনও এএফএম ফিরোজ মাহমুদ জানান, কেউ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।