আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পূর্ব এশিয়ার দেশ তাইওয়ান স্বল্প মূল্যে শিক্ষা প্রদানে সক্রিয়। তাইওয়ানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন , উচ্চ পরীক্ষার ফলাফল এবং উচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের হার প্রচারে ভূমিকার কারণে তাইওয়ানের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রশংসিত।
কেনো তাইওয়ানে পড়তে যাবেন
বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থার দৌলতে উন্নত হয়েছে দেশটির বিভিন্ন সেক্টরের বাজারগুলো। কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং-এর প্রথম শতকের মধ্যে ৬৮-তম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি। এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগগুলো তারই প্রমাণ বহন করে। এরই ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে আরো বেশি গবেষণার সুযোগ, যা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনের পথকে সুগম করেছে।
তাইওয়ানের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
• ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি
• ন্যাশনাল সিং হুয়া ইউনিভার্সিটি
• ন্যাশনাল চেং কুং ইউনিভার্সিটি
• ন্যাশনাল ইয়াং মিং চিয়াও তুং ইউনিভার্সিটি
• ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড-টেকনোলজি
• ন্যাশনাল তাইপেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
• ন্যাশনাল তাইওয়ান নরমাল ইউনিভার্সিটি
• ন্যাশনাল সান ইয়াত-সেন ইউনিভার্সিটি
• তাইপেই মেডিকেল ইউনিভার্সিটি
• চাং গুং ইউনিভার্সিটি
তাইওয়ানে অধ্যয়নের জন্য জনপ্রিয় কোর্স
ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি, সোশ্যাল সায়েন্স, ম্যানেজমেন্ট, ন্যাচারাল সায়েন্স, লাইফ সায়েন্স, মেডিসিন, আর্টস, হিম্যানিটিস, ম্যান্ডারিন চাইনিজ|
আবেদনের যোগ্যতা ও আবেদন
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন ডক্টরাল ডিগ্রির জন্য আবেদন করার পূর্বশর্ত। দেশটিতে স্নাতক করতে হলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বা সমমানের ডিপ্লোমা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য দরকার হবে স্নাতক ডিগ্রির সনদ। তাইওয়ানের প্রধান ভাষা তাইওয়ানিজ ম্যান্ডারিন ও স্ট্যান্ডার্ড। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাচেলর ও মাস্টার্সের প্রতিটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত ইংরেজি ভাষার কোর্স। তাই ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য প্রয়োজন হবে আইইএলটিএস স্কোর ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ স্কোর কিংবা টোফেল আইবিটি স্কোর ৭১ থেকে ৮০।
সেপ্টেম্বর (ফল) এবং ফেব্রুয়ারি (স্প্রিং); এই দুই মাস হলো তাইওয়ানিজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি মৌসুম। তন্মধ্যে ফল তথা সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোর্স বাছাইয়ের সুযোগ থাকে। ভর্তির আবেদন সম্পন্ন করা হয় সম্পূর্ণ অনলাইন মাধ্যমে। এর জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম। আবেদনের শেষ সময়সহ ভর্তি সুনির্দিষ্ট শর্তসমূহ জানার জন্য অবশ্যই এই ওয়েবসাইটগুলো পরিদর্শন করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
• উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বা সমমানের ডিপ্লোমার সনদ
• একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (মার্কশিট)
• অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র
• পাসপোর্ট সাইজের ছবি
• জাতীয় পরিচয়পত্র
• পাসপোর্ট
• ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (আইইএলটিএস বা টোফেল স্কোর)
• আবেদন ফি ( বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যেই আবেদন গৃহীত হয়।)
• একাধিক রিকমেন্ডেশন লেটার
• আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণপত্র
• স্টাডি প্ল্যান
• স্টেটমেন্ট অব পারপাস
• গবেষণার প্রস্তাব (পিএইচডির জন্য)
স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন
১. বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য তাইওয়ানে যেতে হলে দেশটির রেসিডেন্স ভিসার আবেদন করতে হবে। এই ভিসায় ১৮০ দিন বা ৬ মাসের অধিক সময় তাইওয়ানে বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায়, যার মেয়াদ থাকে ১ বছর।
২. আবেদনের জন্য সরাসরি https://visawebapp.boca.gov.tw- লিংকে যেয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদান করতে হয়। এ সময় ভিসার প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্ক্যান করে আপলোড দিতে হবে।
৩. আবেদন সাবমিটের পর তা ডাউনলোড করে তার একটি প্রিন্ট আউট নিতে হবে। এখানে খেয়াল রাখতে হবে, আবেদনপত্রে যেনো অবশ্যই বারকোড থাকে। তারপর নির্দিষ্ট স্থানে সই করলেই আবেদনের প্রাথমিক কাজ শেষ।
৪. বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য তাইওয়ানের রেসিডেন্স ভিসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গ্যারান্টি লেটার। এখানে মূলত তাইওয়ানে বসবাসরত ব্যক্তি ভিসা প্রার্থীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠিটি তৈরি করবেন।
ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
• সইসহ অনলাইনে পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম।
• তাইওয়ান গমনের উদ্দেশ্য, অধ্যয়নের ধরন এবং সময়কাল উল্লেখপূর্বক ভিসার অনুরোধপত্র
• সাদা পটভূমিতে সদ্য তোলা ২টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩ দশমিক ৪ x ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার)
• ন্যূনতম ৬ মাসের বেশি মেয়াদ সম্পন্ন বৈধ পাসপোর্ট, যেখানে কমপক্ষে ২টি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে
• তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার লেটার
• সর্বশেষ ডিগ্রির সনদ এবং ট্রান্সক্রিপ্ট বা মার্কশিটের ফটোকপি। মূল কপিগুলো রেফারেন্স হিসেবে কাউন্টারে দেখানোর জন্য সঙ্গে রাখা উচিত। সনদগুলো অবশ্যই ইংরেজিতে অনূদিত হতে হবে।
• গ্যারান্টি লেটার
• ৩ মাসের মধ্যে জারিকৃত স্বাস্থ্য প্রশংসাপত্র
• আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণপত্র (এখানে ব্যয়ভার বহনকারীর ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন এবং বিগত ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে। এখানে উল্লেখিত অর্থের পরিমাণ অন্তত একটানা ৬ মাসের জীবনযাত্রার খরচের জন্য হতে হবে।
• স্কলারশিপ পেয়ে থাকলে তার প্রশংসাপত্র। এখানে অবশ্যই তার সময়কাল এবং পরিমাণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
• ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
• পুলিশ ক্রিমিনাল রেকর্ড সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
• এই নথিগুলো অবশ্যই আরওসি (রিপাবলিক অফ চায়না)-এর ফরেন মিশন কর্তৃক প্রত্যয়ন করে নিতে হবে।
• ভিসার কাগজপত্র জমা ও বায়োমেট্রিক নিবন্ধন
• বাংলাদেশে তাইওয়ানের কোনো দূতাবাস নেই, তাই ভিসার নথিগুলো জমা এবং সাক্ষাতকারের জন্য ভারতে অবস্থিত তাইওয়ান কনস্যুলার অফিসে যেতে হবে।
• তাইওয়ান দূতাবাসের ঠিকানা: ৩৪, পশ্চিমী মার্গ, বসন্ত বিহার, নতুন দিল্লি-১১০০৫৭, ভারত।
• কাগজপত্রে জমা নেয়ার পাশাপাশি প্রার্থীর ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং ছবি তোলার মাধ্যমে তার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। অতঃপর ভিসার যাবতীয় ফি গ্রহণপূর্বক আইসিআর (ইনভয়েস-কাম-রিসিপ্ট) সরবরাহ করা হবে। ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট গ্রহণের সময় এই রশিদটি সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।
তাইওয়ানে স্কলারশিপের সুবিধা
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন এবং জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর জন্য দেশটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত স্কলারশিপের সুযোগ। তন্মধ্যে তাইওয়ান স্কলারশিপ প্রোগ্রামে রয়েছে ২৫ হাজার এনটিডির (৯৩ হাজার ৫৮২ টাকা) মাসিক উপবৃত্তি। তাইওয়ান আইসিডিএফ স্কলারশিপ স্নাতকদের জন্য প্রতি মাসে দিয়ে থাকে ১২ হাজার এনটিডি (৪৪ হাজার ৯২০ টাকা)। আর মাস্টার্সের জন্য বরাদ্দকৃত এই পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার এনটিডি (৬৭ হাজার ৩৭৯ টাকা)। সেই সঙ্গে মাসিক ২০ হাজার এনটিডি (৭৪ হাজার ৮৬৬ টাকা) রাখা হয় পিএইচডির জন্য। হুয়াইউ এনরিচমেন্ট স্কলারশিপের মাসিক উপবৃত্তির পরিমাণ ২৫ হাজার এনটিডি (৯৩ হাজার ৫৮২ টাকা)।
তাইওয়ানে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
স্নাতকোত্তরের জন্য বার্ষিক বাজেট রাখতে হবে ৩৩ হাজার থেকে ১৬৮ হাজার এনটিডি (১ লাখ ২৩ হাজার ৫২৭ থেকে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৭০ টাকা)। পিএইডির জন্য প্রতি বছর অধ্যয়ন ফি গড়ে ৯৬ হাজার থেকে ২ লাখ এনটিডি বা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৪ থেকে ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫৪ টাকা। বিদেশি শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার এনটিডির (১১ হাজার ২৩০ টাকা) মুদি কিনে থাকে। বাইরে খাওয়ার ক্ষেত্রে লোকাল মার্কেটে কমপক্ষে ৬০ এনটিডি (২২৫ টাকা) খরচ হতে পারে। আবাসন ভাড়া নির্ভর করে তার অবস্থানের ওপর। শহরের সিটি সেন্টারের বাইরে এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া নিতে পারে প্রতি মাসে প্রায় ১২ হাজার এনটিডি (৪৪ হাজার ৯২০ টাকা)। ইউটিলিটির জন্য মাসিক বাজেট রাখতে হবে ২ হাজার এনটিডি (৭ হাজার ৪৮৭ টাকা)।
খণ্ডকালীন চাকরি
তাইওয়ানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার চলাকালে কাজের সুযোগ রয়েছে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে এই পার্ট-টাইম কাজের জন্য তাদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে এলিয়েন রেসিডেন্স সার্টিফিকেট বা এআরসি কার্ড নেয়া। এটি তাইওয়ানে বসবাসের সময় বিদেশি শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র, যা দেশটিতে আইনি বসবাসের প্রমাণ হিসাবে কাজ করে। তাইওয়ানে বিমান থেকে নেমেই শিক্ষার্থীদের প্রথম কাজ থাকে এই কার্ডের জন্য আবেদন করা।
দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়টি হলো ওয়ার্ক পারামিট। এই পারমিটের জন্য শিক্ষার্থীকে ওয়ার্কফোর্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বরাবর আবেদন করতে হয়। প্রতিটি পারমিট সাধারণত শুধুমাত্র এক সেমিস্টার বা ছয় মাসের জন্য বৈধ থাকে। ওয়ার্ক পারমিট বৈধ থাকা অবস্থাতেই সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার আগেই পুনরায় আবেদন করা আবশ্যক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নন-একাডেমিক চাকরির মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্টে কাজ করা এবং বিক্রয় সহকারী হিসেবে কাজ করা।
চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ
তাইওয়ানে একটানা কমপক্ষে ৫ বছর অবস্থান করলে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যায়। তাই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পড়াশোনা শেষে চাকরির ব্যবস্থা বা ব্যবসা শুরু করতে হয়। এই কাজগুলো সম্পাদনে স্নাতকের পরে একজন ফ্রেশ স্নাতক তাইওয়ানে অতিরিক্ত ৬ মাস থাকার অনুমতি পান। চাকরির খোঁজার জন্য আরো সময়ের প্রয়োজন হলে আরো ৬ মাস মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা যেতে পারে।
শিক্ষার উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে: রাষ্ট্রপতি
দেশটিতে ফুল-টাইম চাকরির ক্ষেত্রে বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১ লাখ থেকে ৬ দশমিক ৭ লাখ এনটিডি। বাংলাদেশে এই পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩২৭ থেকে ২৫ লাখ ৭ হাজার ৯৯১ টাকার সমান। এই চাকরিগুলোর মধ্যে রয়েছে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, নার্স, মার্কেটিং ম্যানেজার, বিক্রয় কর্মী, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।