জুমবাংলা ডেস্ক : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন উপেক্ষা করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে ভূমি ক্রেতাদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌর সভার ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে ১৮ থেকে ২০% টাকা। দুই যুগ ধরে তাড়াশ দলিল লেখক সমিতির নামে সিন্ডিকেট করে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে মাত্রা অতিরিক্ত কমিশন আদায় করা হচ্ছে ভূমি ক্রেতাদের কাছ থেকে।
এদিকে হেবা বা দানপত্র ভূমি রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় খরচ ২ হাজার টাকার স্থলে ১০ হাজার টাকা অবধি আদায় করছেন বলে অভিযোগ ভূমি দানকারীদের। সরকারি আইন অনুযায়ি রেজিস্ট্রেশন খরচ দিয়ে ভূমি কিনতে চাইলে দলিল লেখকরা দলিল লিখতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়েদেন ভূমি ক্রেতাদের।
তাড়াশ পৌরসভার কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র প্রভাষক রোখসানা খাতুন বলেন, আমি পৌর এলাকার মধ্যে সারে ৪ শতক জায়গা কিনেছি ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে। সরকারি দলিল সেবা অ্যাপের দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিস ক্যালকুলেটরের হিসাব অনুযায়ি ভূমি রেজিস্ট্রেশন খরচ আসে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৫ টাকা। কিন্তু আমার কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন খরচ নেওয়া হয়েছে পুরো ২ লাখ টাকা।
আরেক ভুক্তভোগী উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের আব্দুল করিম ফকির বলেন, বিনসাড়া মৌজায় আমি ও আমার ছেলে আবু তালহা যৌথ নামে সারে আট শতক আবাদি শ্রেণির জায়গা কিনেছি ১৪ লাখ টাকা মূল্যে। সরকারি খরচ ১ লাখ ৬ হাজার ১০ টাকা হওয়ার কথা। অথচ আমাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।
বারুহাস ইউনিয়নের কাজিপুর গ্রামের মজিবর রহমান বলেন, গত বুধবার কাজিপুর মৌজার বিস্তীর্ন মাঠের ২৪ শতক আবাদযোগ্য জমি কিনেছি। জমির মূল্য ৩ লাখ টাকা। আমার কাছ থেকে প্রতি লাখে ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে রেজিস্ট্রেশন খরচ।
মজিবর রহমানের সহদর ভাই এমএ মতিন বলেন, মোট ৩২ শতক জমির মধ্যে আমার নামে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে ৮ শতক। জমির মূল্য ধরা হয়েছে ১ লাখ টাকা। আমার কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন খরচ নিয়েছেন ১ লাখে ১৬ হাজার টাকা।
দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ছোট মাঝদক্ষিণা গ্রামের মো. ইসরাফিল হোসেন বলেন, আমি ৬ লাখ টাকা মূল্যে দুলিশ্বর মৌজায় ৩৫ শতক জায়গা কিনেছি। আমার কাছ থেকে প্রতি লাখে ১৬ হাজার টাকা নিয়েছেন।
অপরদিকে তাড়াশ পৌর এলাকার জাহাঙ্গীর গাঁতী গ্রামের রাহেলা খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে ২.২৫ শতক জায়গা দান করেছি। দানপত্র দলিলে রেজিস্ট্রেশন খরচ নিয়েছেন ৮ হাজার ৫০০ টাকা। আরেকটা কাগজ সংগ্রহের কথা বলে নিয়েছেন ২ হাজার টাকা। বিশেষ করে ভূমি ক্রেতাদের কাছ থেকে অধিক হারে টাকা হাতিয়ে নিলেও কোন রশিদ দেওয়া হয় না।
দীর্ঘ অনুসন্ধান ও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জানা গেছে, ভূমি ক্রেতারা জিম্মি দলিল লেখক সমিতি নামক সিন্ডিকেটের কবলে। তাড়াশে দলিল লেখক সমিতি গঠন হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে সভাপতির পদে রয়েছেন কামরুজ্জামান। তিনি এরই মধ্যে ভূমি ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণের অর্থ। সর্বপরি দলিল লেখক সমিতির সভাপতির দুর্নীতির সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ভুক্তভোগী ভূমি ক্রেতারা। এ ক্ষেত্রে তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গত সোমবার সাক্ষাতে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কামারুজামানকে সমিতির নামে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার কথা বলা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তাড়াশ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার রবিউল ইসলাম বলেন, আমি তাড়াশে নতুন। মাত্র দুই দিন অফিস করেছি। সমস্যা দীর্ঘদিনের। জেলা রেজিস্টার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্যারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, বিষয়টি অতিব গুরুত্ব সহকারে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দলিল লেখক সমিতির নামে সভাপতি কামারুজ্জামান সিন্ডিকেট করে রেখেছেন। তিনি দলিল লেখকদেরও নির্যাতন করেন। মূলত তিনি তাড়াশের মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছেন। আমরা শিগগিরই ভূমি ক্রেতাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।