জুমবাংলা ডেস্ক : ‘ফেইলিওর ইন দ্য পিলার অব সাকসেস’রবার্ট ব্রুশের গল্প নিশ্চয় পড়েছেন। এই গল্প মোটামুটি ছোট থাকতেই পাঠ্য বইয়ে পড়েছেন সবাই। তবে বাস্তবে তার প্রতিরূপ খুবই কম। পরীক্ষায় খারাপ করছে কেউ, ভালো কোথাও পড়ার সুযোগ পায়নি। তাহলেই তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার এমন ভবিষ্যৎবাণী শুনতে হয় তাকে। অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা হতাশায় ডুবে গিয়ে আর জীবনে উঠেই দাঁড়াতে পারে না।
তবে আজ বলছি ভারতের মধ্যপ্রদেশের প্রফুল বিল্লোর কথা। বার বার ব্যর্থ হলেও হাল ছেড়ে না দিয়ে পরিশ্রম করে গেলে যে সাফল্য আসতে বাধ্য, তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মাত্র বছর ২৪ এর যুবক। তিন বার ‘ক্যাট’ পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেননি। ভাঙা হৃদয়ে শেষে রাস্তায় রাস্তায় চা বিক্রি করতে শুরু করলেন। হয়ে উঠলেন ভারতের জনপ্রিয় চা বিক্রেতা ‘এমবিএ চাওয়ালা’। সেরা বিজনেস স্কুলে সুযোগ পাননি ঠিকই, কিন্তু অন্যতম সেরা ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন।
প্রফুলের এই এমবিএ চাওয়ালা হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে শুধুই ব্যর্থতা। তবে দমে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। ব্যর্থতাই জীবনকে অন্য ভাবে দেখতে শিখিয়েছে তাকে। আজ বিশ্বের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভাষণ দিয়ে আসেন তিনি। যেখানে পরপর তিনবার পরীক্ষা দিয়েও ভর্তির সুযোগ পাননি তিনি। যেখানে প্রকৃত ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার শিক্ষা নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনিই তা হয়ে ওঠার মন্ত্র শেখাতে যান।
২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেতে টানা ৩ বছর ‘ক্যাট’ পরীক্ষা দেন প্রফুল। দিন রাত জেগে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু ওই ৩ বারই তিনি ব্যর্থ হন। অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিলেন। শেষে আহমেদাবাদে যেয়ে ম্যাকডোনাল্ডের আউটলেটে কাজ শুরু করলেন। সারাদিন ধরে ঝাড়ু দিতেন আউটলেটে। কখনো কখনো ক্রেতাদের থেকে অর্ডারও নিতেন এবং খাবার পরিবেশন করতেন। এ ভাবেই চলছিল। কিন্তু নিজের কিছু করার ইচ্ছা থেকেই চা বিক্রির কথা মাথায় আসে তার। এমবিএ করার ইচ্ছা ততদিনে মুছে ফেললেও বাড়িতে সেটা জানানোর সাহস ছিল না।
এমবিএ কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়ে কেটলি, কাপ, ট্রে এবং চা তৈরির সমস্ত কাঁচামাল কিনে পরদিন থেকেই রাস্তায় বিক্রি করতে শুরু করেন। ইংরেজি বলা চাওয়ালাকে পছন্দ করতে শুরু করলেন মানুষ। প্রথম দিন কোনো গ্রাহক পাননি। পরদিন ফের রাস্তায় দোকান দিলেন। এবার নিজে গ্রাহকের কাছে চলে যেতে শুরু করলেন। গ্রাহকের কাছে গিয়ে অর্ডার নেয়া এবং তাদের হাতে চা পৌঁছে দিলেন।
ইংরেজি বলা চাওয়ালাকে পছন্দ করতে শুরু করলেন মানুষ। প্রথম দিন ৫ জন গ্রাহক, পর দিন ২০ জন, তার পর দিন ১০০ জন। এভাবেই আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে বিক্রিবাটা। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে তার ব্যবসা এতটাই ফুলে ফেঁপে ওঠে যে আশেপাশের চা বিক্রেতাদের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠলেন। জোর করে তার দোকান তুলে দেয়া হল। পরের কয়েক সপ্তাহ আর দোকান দিতে পারেননি তিনি।
সে সময় গ্রাহকেরাই তাকে খুঁজতে শুরু করলেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন অনেকে। ফের চায়ের কেটলি নিয়ে আহমেদাবাদের অন্য জায়গায় দোকান দেন তিনি। প্রফুল শুধু চা বেচতেন না, গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নিত্যনতুন ভাবনা নিয়ে হাজির হতেন। নিজের দোকানের নামকরণ করলেন ‘এমবিএ চাওয়ালা’। এমবিএ-র পুরো অর্থ মিস্টার বিল্লোরে আমদাবাদ।
এর মাঝে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বাবাকে মিথ্যা বলে ফের ৫০ হাজার রুপি চেয়ে নিয়েছিলেন। বাবা জানতেন, ছেলে এমবিএ কলেজে ভর্তি হয়েছেন। বাবা যাতে তার ব্যবসায় বাধা হয়ে না দাঁড়ান তাই এক কলেজে ভর্তি হয়েও যান প্রফুল। কিন্তু কয়েকদিন ক্লাস করার পর আর কলেজের আঙিনায় পা রাখেননি। আহমেদাবাদে ৩০০ বর্গ ফুটের দোকান রয়েছে তার। তাতে এখন ২০ জন কর্মচারী কাজ করেন। সেরা বিজনেস স্কুলে ভর্তি না হয়েও প্রফুল আজ কোটিপতি। ২০১৯-২০২০ সালে ব্যবসার টার্নওভার ছিল ৩ কোটি টাকা।
প্রফুলের এ গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংবাদমাধ্যম সবখানেই ছড়িয়ে পড়ে। তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নজির গড়েন তিনি, তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রতিষ্ঠিতরা। অনেক নামীদামী মানুষও এখন এমবিএ চাওয়ালার নিয়মিত গ্রাহক। শিক্ষার্থীদের ভাষণ দিতে আইআইএম কিংবা হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে প্রায়ই ডাক পান। তার কাহিনী মনোবল বাড়ায় শিক্ষার্থীদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।