জুমবাংলা ডেস্ক : ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর আফ্রিকার এক বড় অংশ জুড়ে তাপপ্রবাহ চলছে। তীব্র্র দাবদাহের ফলে ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, গ্রিস, মরক্কোসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল যা সামাল দিতে দেশগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ব্রিটেনের ইতিহাসেও এতো গরম কখনো পড়েনি। এর ফলে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি জরুরি সতর্কতা ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও বৃষ্টিপাতের অভাবে আবহাওয়া রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে যার ফলে গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ।
নজিরবিহীন এই তীব্র গরমের কারণে কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং আরো বহু মানুষ মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সবার স্বাস্থ্যের উপরেই এই গরমের প্রভাব পড়তে পারে, তবে কিছু কিছু মানুষের – বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের – ঝুঁকি বেশি। তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
তীব্র গরমে কী হয় মানুষের শরীরে?
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের শরীরও গরম হয়ে যায়। এর ফলে রক্তনালীগুলো খুলে যায়।
এর জের ধরে রক্ত চাপ কমে যায় যে কারণে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা হৃদপিণ্ডের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
এসব কারণে মৃদু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যার মধ্যে রয়েছে ত্বকে ফুসকুড়ি পড়া, চুলকানি এবং পা ফুলে যাওয়া যা রক্তনালী উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
এছাড়াও প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীরে তরল পদার্থ ও লবণের পরিমাণ কমে যায়, গুরুতর ক্ষেত্রে দেহে এ-দুটো জিনিসের মধ্যে যে ভারসাম্য আছে তাতেও পরিবর্তন ঘটে।
এসব কিছু একসাথে মিলিয়ে গরমে শরীর পরিশ্রান্ত হয়ে যেতে পারে এবং তার লক্ষণগুলো হচ্ছে:
মাথা চক্কর দেওয়া, বিবমিষা বা বমি বমি ভাব, নিস্তেজ হয়ে পড়া,মূর্ছা যাওয়া, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়া, পেশি সংকুচিত হওয়া, মাথা ব্যথা, প্রচণ্ড ঘাম হওয়া, ক্লান্তি আর রক্তচাপ খুব বেশি কমে গেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
কেন দেহ এভাবে সাড়া দেয়?
আমরা যেখানেই থাকি না কেন, – তুষার-ঝড়ই হোক কিম্বা প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যেই হোক – আমাদের শরীর সবসময়ই তার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে চেষ্টা করে। কারণ এই তাপমাত্রার মধ্যেই আমাদের দেহ ঠিকমত কাজ করতে পারে।
কিন্তু আবহাওয়া যখন গরম হয়ে যায়, তখন দেহের ভেতরের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখার জন্য আমাদের শরীরকে অনেক কাজ করতে হয়।
শরীর থেকে তাপ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চামড়ার কাছাকাছি যেসব রক্তনালী আছে সেগুলো খুলে যায় এবং দেহে ঘাম হতে শুরু করে।
ওই ঘাম যখন জলীয় বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, তখন নাটকীয়ভাবে আশপাশের তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায়, কিন্তু এর ফলে ত্বক ঠাণ্ডা হয়ে আসে।
কিভাবে নিরাপদ থাকতে পারি?
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা এবিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে:
কারা নিজেদের ঠাণ্ডা রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখুন, বিশেষ করে বয়স্ক লোকজন যাদের নানা ধরনের স্বাস্থ্য-জনিত সমস্যা রয়েছে এবং যারা একা থাকেন।
ঘরের ভেতরে অবস্থান করুন। যেসব জানালা সূর্যের দিকে মুখে করে আছে সেগুলোর পর্দা টেনে দিন। প্রচুর পানীয় পান করুন। কাউকে বিশেষ করে শিশুদেরকে কোনো ঘরে বা গাড়িতে একা রেখে যাবেন না।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত নিজেকে সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন। এই সময়ে সূর্যের রশ্মি সবচেয়ে তীব্র হয়। ছায়ার মধ্যে আশ্রয় নিন। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। মাথায় লম্বা বারান্দা-ওয়ালা টুপি পরুন। দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করা পরিহার করুন।
কোথাও গেলে সঙ্গে করে পানি নিয়ে যাবেন।
কোথাও পুকুর বা খাল বিল দেখলেই নিজেকে ঠাণ্ডা করার জন্য সেখানে নেমে পড়বেন না, কারণে তাতে আরো অনেক বেশি বিপদ হতে পারে যা হয়তো আপাতত চোখে পড়ছে না। রাতের ঘুমানোর সময় ঠাণ্ডা মোজা পরতে পারেন, এবং অন্যান্য দিন আপনি যে সময়ে ঘুমান ওই একই সময়ে বিছানায় যাবেন।
ঝুঁকি বেশিকাদের
বয়স্ক মানুষ অথবা যারা দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগের মতো অসুখে ভুগছেন, গরমের কারণে তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তীব্র গরম তাদের শরীরে যে ধরনের চাপ তৈরি করে তারা সেটা সামাল দিতে ব্যর্থ হতে পারেন।
যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের শরীরের পানি খুব দ্রুত কমে যেতে পারে। এছাড়াও এই রোগের কারণে রক্তনালীতে পরিবর্তন ঘটতে পারে যার ফলে শরীরে ঘাম হওয়ার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। শিশুদের মধ্যেও এই ঝুঁকি বেশি।
যারা ডিমেনশিয়ার মতো মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা হয়তো গরমের বিষয়ে অসচেতন থাকতে পারেন এবং এবিষয়ে কিছু করতেও তারা অক্ষম। যাদের বাড়িঘর নেই তারা অনেক বেশি সময় ধরে সূর্যের নিচে থাকার কারণে ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
যারা ভবনের সবচেয়ে উপরের ফ্ল্যাটে থাকেন তাদেরও বেশি তাপ সহ্য করতে হয়।
গরমের কারণে কি মৃত্যু হতে পারে?
প্রতি বছরই গরমে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। ইংল্যান্ডে এই সংখ্যা প্রায় ২ হাজার।
এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটে গরম-জনিত হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণে। বেশিরভাগ সময় শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে গিয়েই এসব ঘটে থাকে।
তাপমাত্রার বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোতে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।