আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আইএএসের পদ থেকে চাকরি ছেড়ে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের জন্য কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে সবে গত মার্চ মাসে রাজনৈতিক দল গড়েছেন ৩৬ বছর বয়সী শাহ ফয়সাল। কিন্তু বিজেপি সরকার জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ায় সে স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়েছে। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর গতকাল নিজের টুইটার বার্তায় তারই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তরুণ এ রাজনীতিবিদ।
টুইটারে ‘ভয়’ ও ‘হদয়ভঙ্গে’র কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘কাশ্মীরে অভূতপূর্ব আতঙ্ক। প্রতেকের মন ভেঙে গেছে। প্রতিটি মুখে পরাজয়ের ছাপ। নাগরিক থেকে প্রজা হয়ে যাওয়ার। এক বিপর্যয়কর মোড় নিয়েছে ইতিহাস। মানুষ স্তম্ভিত। প্রকাশ্য দিনের আলোয় তাদের জমি, পরিচয় ও ইতিহাস চুরি হয়ে গেছে।’
ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
সোমবার ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে বাড়তি ১০০ কোম্পানি সেনা মোতায়েন, অমরনাথ যাত্রা বাতিল, পর্যটকদের ফিরে যেতে বাধ্য করার মতো ঘটনায় গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে আশঙ্কার একটা পরিবেশ ছিলই। দীর্ঘ অশান্তির আশঙ্কায় খাবারদাবার, অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, পেট্রোল ইত্যাদি কেনা, এটিএম থেকে টাকা তোলার হুড়োহুড়িও শুরু হয়েছিল।
এর পর কাশ্মীরের প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী পিডিপির প্রধান মেহবুবা মুফতি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আব্দুল্লাহকে গ্রেফতারের খবরে উদ্বেগ তৈরি হয় গোটা দেশেই। তবে কি ফের আগুন জ্বলবে ভূস্বর্গে! গতকাল রাজ্যসভায় জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজ ও রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে দুটি কেন্দ্রশাসিত এলাকা গঠনে বিল পেশ হতেই উদ্বেগ চরমে ওঠে। গোটা কাশ্মীর হয়তো ফেটে পড়বে বিক্ষোভে! কিন্তু সেই আশঙ্কা সত্যি হয়নি শেষ পর্যন্ত।
বরং শান্তির আড়ালে যে ভয় বা থমথমে উৎকণ্ঠা জমাট বেঁধে রয়েছে, সেটাও ধরা পড়েছে নানাভাবে।
আনন্দবাজার বলছে, গতকাল শ্রীনগরের পথে পথে দিনভর ঘুরেছেন সাংবাদিকেরা, টিভি চ্যানেলের লোকজন। কোনো কাশ্মীরিকে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়নি ৩৭০ নিয়ে। টিভি সাংবাদিকেরা দেখিয়েছেন, ঠেলাগাড়ি নিয়ে ফল-আনাজ বেচছেন কয়েকজন। কয়েকজন মহিলা-পুরুষ কিনছেন। কিন্তু পিছনের ফাঁকা রাস্তা, সারি সারি বন্ধ দোকানপাট বলে দিয়েছে আসল ছবিটা। খোলা শুধু ও ষুধের দোকান। বন্ধ স্কুল-কলেজ-অফিস। চলছে ১৪৪ ধারা।
নামাজ পড়তে, চিকিৎসা বা খাবার কেনার মতো একান্ত প্রয়োজনে পথে বেরিয়েছেন হাতে গোনা মানুষ। পুলিশ ও সিআরপি প্রত্যেকের পরিচয়পত্র দেখে ও কোথায় যাচ্ছেন তা যাচাই করে তবেই এগোতে দিচ্ছে।
অর্থাৎ কাশ্মীরের বাসিন্দারা পুরোপুরি ঘরবন্দি। কার্যত ‘অদৃশ্য’ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ভূস্বর্গ। বন্ধ মোবাইল, নেট, ব্রডব্যান্ড, কেবল টিভি। ডিটিএইচ চালু থাকলেও তার বিস্তার সীমিত। বাইরে কী ঘটছে, জানতে পারছেন না। তাদের মনে কী ঘটছে, সেটাও জানতে পারছে না দুনিয়া।
শুধু কাশ্মীরের বাইরে রয়েছেন যেসব কাশ্মীরি, তাদের উৎকণ্ঠার ছবিটা ধরা পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পেশায় চিকিৎসক উমের ভাট থাকেন দিল্লিতে।
পুলিশ আর সেনায় মুড়ে ফেলা তার উপত্যকা, তার স্বজনেরা কেমন আছেন, জানতে না পারার যন্ত্রণার কথা জানিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, ‘রাতভর জেগে কাটিয়েছি। কান্নায় ভিজে গেছে দু’চোখ। সকালের আবছায়ায় নিজের মৃ’ত্যুকে দেখেছি সামনে। আল্লাহর কাছে জানতে চেয়েছি, ফ্যাসিবাদীদের আক্রমণ থেকে আমার কাশ্মীরকে বাঁচাতে কেন একটা দেওয়াল তুলে রাখোনি! জানলায় চোখ রেখে ভেবেছি, আল্লাহ সব দেখছেন। এই লড়াইটা নিজেদেরই লড়তে হবে। প্রাণ থাকতে এক ইঞ্চি জমি দেব না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।