জুমবাংলা ডেস্ক: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আগামীকাল শনিবারের মধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চায়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে শক্ত কোনো প্রার্থী গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হননি। তবে এর উল্টো চিত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে। এই করপোরেশনের মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তীব্র লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে দুই সিটি নির্বাচনেই প্রতিপক্ষ বিএনপির দুই প্রার্থী অনেকটাই চূড়ান্ত হয়ে আছে।
জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠের আজকের সংখ্যায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আগের দিন বুধবার ঢাকার দুই সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও হাজি মোহাম্মদ সেলিম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। হাজি সেলিম গত মেয়র নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা নেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে কোনো বিতর্কিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। যাঁকে জনগণ ভালোবাসে, যাঁর জনপ্রিয়তা বেশি এবং যে প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবেন, তাঁকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ গত বুধবার মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করে। গতকাল নির্ধারিত সময় বিকেল ৫টার মধ্যে ৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। সব মিলিয়ে গত দুই দিনে ১৭ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ঢাকা উত্তরে—বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদউল্লাহ উসমানী, ভাসানটেক থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেজর (অব.) ইয়াদ আলী ফকির ও শহীদ সন্তান অধ্যাপক জামান ভুঁইয়া। দক্ষিণে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস ও হাজি মোহাম্মদ সেলিম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব এম এ রশীদ ও বঙ্গবন্ধু একাডেমির সভাপতি নাজমুল হক।
গতকাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় কেঁদে ফেলেন ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। ‘রাজনীতিতে কঠিন সময় পার করেছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে দায়িত্ব পালনকালে কখনো আমি অবহেলা করিনি। গত পাঁচ বছরে অনেক কাজ করেছি। এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। আগামীতে নির্বাচিত হলে এ কাজগুলো সম্পন্ন করতে চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন। কারণ তিনি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে অল্প সময় পেয়েছেন। তবে ঢাকা দক্ষিণে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে হবে। কারণ এখানে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়ন চেয়েছেন।
বিএনপির তিন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনেছেন : মেয়র পদে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হতে উত্তরে ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর কাছ থেকে ফরম সংগ্রহ করেন তাঁরা।
আসাদুজ্জামান রিপন বিএনপির বিশেষ সম্পাদক এবং ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। তাবিথ আউয়াল বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে। তিনি ২০১৫ সালে উত্তর সিটির নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ইশরাক মহানগর বিএনপির সদস্য। তিনি ঢাকার সাবেক মেয়র ও দলের সদ্যঃপ্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।
বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা আজ ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। ২৮ ডিসেম্বর গুলশান কার্যালয়ে বিকেলে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দুই মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে দক্ষিণের প্রার্থী ইশরাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি, সেটা বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আজকে জনগণের অধিকার জনগণের কাছে নেই। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোটের অধিকার ফিরে পেতে, খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার জন্য এবং বাংলাদেশে ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি থাকবে, তাদের যে সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া হয়েছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার, উনারা যাতে সেই পবিত্র দায়িত্বটা পালন করেন।’
জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শতভাগ আশাবাদী। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা ধানের শীষের প্রার্থী যারা আছি তারা বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।’
উত্তরের প্রার্থী আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘এই নির্বাচন থেকে প্রত্যাশা করার কিছু নেই। দেশে অনেক আগে থেকে ভোট নির্বাসিত হয়ে গেছে, দেশে গণতন্ত্র নেই, ভোট নেই, সুষ্ঠুভাবে কোনো নির্বাচনও হয়নি, যা হয়েছে জোচ্চুরিভাবে নির্বাচন। এর পরও আমার পার্টি গণতন্ত্র রক্ষার নামে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা হবে, গণতন্ত্র উদ্ধার হবে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, এই নির্বাচনে হারলে আকাশ ভেঙে পড়বে না। আসলে আকাশ ভেঙে পড়বে তাঁদের মাথায়, সে জন্য সিটি নির্বাচন কোনোভাবে নিরপেক্ষ হোক—এটা তাঁরা চাইবেন না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে যদি প্রার্থী হই, ধানের শীষে ভোটদানের আহ্বানের সঙ্গে নেত্রীর মুক্তির দাবিটা উচ্চারিত হবে, সেই লক্ষ্য থেকে আমি এই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।’
উত্তরের অপর প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘জাতির কল্যাণে কাজ করার জন্য, জনগণের সব অধিকার রক্ষা করার জন্য আমরা প্রতিদিন প্রস্তুত থাকি। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছি। আশা করি, এবার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ পাব। যদি আমরা সেই সুযোগ পাই, আশা করি আমরাই জয়লাভ করব এবং তখন আসলে জনগণের কল্যাণে আমরা কাজ করার সুযোগ পাব।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি সিইসির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, উনি এমন বক্তব্য রাখবেন, দৃশ্যমান আচরণ করবেন, যাতে জনগণ ভোটের ব্যাপারে আস্থা ফিরে পায়। সাধারণ ভোটার ও জনগণ প্রতিনিয়ত আমাদের প্রশ্ন করেন যে উনারা নিজেদের ভোট দিতে পারবেন কি না বা ভোট দিলে তা সঠিকভাবে গণনা হবে কি না। জনগণের ভোটের অধিকার ও একটা সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা তো লড়াই করবই।’
উত্তরের ভোটাররা কেন আপনাকে ভোট দেবে—এ প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, ‘ঢাকাবাসী আমাকে, ধানের শীষকে, বিএনপিকে ভোট দেবে। কারণ যে বর্তমান পরিস্থিতি, এটা শুধু ঢাকাবাসী নয়, সারা বিশ্ববাসী দেখছে। আমরা একটা দূষণের শহরে পরিণত হয়েছি, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে নিম্নস্থানে আছি, বাসযোগ্য শহরের ক্ষেত্রেও আমরা সবচেয়ে নিম্নস্থানে। আমি নিজেকে শুধু যোগ্য প্রার্থী ভাবছি না, জনগণের প্রার্থীও ভাবছি। কারণ ২০১৫ সালের নির্বাচনে আপনারা পরিষ্কারভাবে দেখেছেন, জনগণের ব্যাপক সাড়া আমার প্রতি এসেছিল। কিন্তু ওই নির্বাচনটা বানচাল করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।’
জাপার উত্তরে কামরুল, দক্ষিণে লোটনের সম্ভাবনা : দুই সিটি করপোরশন নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। এরই মধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রিও শুরু হয়েছে। গতকাল জাতীয় পার্টির (জাপা) কাকরাইলের অফিসে মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময়ে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে এবং দু-এক দিনের মধ্যে মেয়র পদে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
উত্তর সিটিতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কামরুল ইসলাম জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন বলে পার্টির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এখন পর্যন্ত কামরুল ইসলাম একাই উত্তর থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জাতীয় পার্টির দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। তাঁরা হচ্ছেন আলমগীর শিকদার লোটন ও হাজি সাইফুদ্দিন মিলন। সাইফুদ্দিন মিলন দক্ষিণ সিটিতে গত নির্বাচনেও জাপার প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন, তবে খুবই কম ভোট পান। পার্টির একটি সূত্র জানায়, এবার আলমগীর শিকদার লোটনকে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী করা হতে পারে। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উত্তরে আমাদের একজনই প্রার্থী, দক্ষিণে দুজন মেয়র প্রার্থী ফরম ক্রয় করেছেন। আমরা দু-এক দিনের মধ্যে দলীয় সভা ডেকে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করব।’
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।