পৃথিবীতেই যার আসার কথা ছিল না, তিনিই আজ বিশ্ব মাতাচ্ছেন
স্পোর্টস ডেস্ক : ফুটবল ইতিহাসের সেরাদের খুব সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও নিশ্চিতভাবে থাকবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। গত দেড় দশকে জাদুকরী ফুটবল উপহার দিয়ে জয় করে নিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের মন। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া তারকাদের একজন তিনি। গত দেড় দশকের ফুটবলে মেসির সঙ্গে অবিসংবাদিত সেরা তিনিই। পাঁচবারে ব্যালন ডি’অর জয়ী এই তারকা ক্লাবপর্যায়ে সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেন। জাতীয় দলের হয়েও অর্জনটা কম নয়। আজ এই মহাতারকার ৩৮তম জন্মদিন।
১৯৮৫ সালে পর্তুগালের ফুনচালের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম রোনালদোর। বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান রোনালদোর অবশ্য পৃথিবীর আলো দেখারই কথা ছিল না। তিনি যখন মায়ের গর্ভে তখনই দারিদ্র্যের কারণে গর্ভপাতের কথা ভাবছিলেন তার বাবা-মা। তবে ডাক্তারের আপত্তিতে পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ হয় তার।
১২ বছর বয়সে তিনি স্পোর্টিং সিপির একাডেমিতে যোগ দেন। ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়তে স্কুল ছেড়ে দেয়া রোনালদো ১৫ বছর বয়সে হৃদ্যন্ত্রের স্পন্দনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হলে শঙ্কা জাগে ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার। অবশ্য অস্ত্রোপচার করিয়ে ফের ফুটবলে ফেরেন তিনি।
২০০২-০৩ মৌসুমে রোনালদো স্পোর্টিং সিপির সিনিয়র দলে সুযোগ পান। প্রথম মৌসুমেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে নজর কাড়েন ইউরোপের পরাশক্তিদের। আর্সেনালে তার যোগ দেওয়াটা যখন প্রায় নিশ্চিত, তখনই দৃশ্যপটে হাজির ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন। টিনএজার ফুটবলারের দলবদলের ইংলিশ রেকর্ড গড়ে ১৮ বছর বয়সী রোনালদোকে দলে ভেড়ায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
২০০৭-০৮ মৌসুমে রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ডাবল জয় করেন। সে মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৪২ গোল করে প্রথমবারের মতো জেতেন ব্যালন ডি’অর। ক্লাবটির হয়ে ২৯২ ম্যাচে ১১৮ গোল করে ২০০৯ সালে ট্রান্সফার ফির বিশ্বরেকর্ড গড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন তিনি।
রিয়াল মাদ্রিদে এসে এই পর্তুগিজ পরিণত হন ভয়ংকর এক গোল স্কোরারে। মাদ্রিদের রাজকীয় দলটির হয়ে ম্যাচপ্রতি গড়ে একটির বেশি গোল করেছেন তিনি। ৯ বছরের ক্যারিয়ারে ৪৩৮ ম্যাচ খেলে তিনি করেন ৪৫০ গোল। এ সময়ে তিনি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৩১টি! রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ঘরোয়া লিগে যেমন সাফল্য পেয়েছেন, তেমনি ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় রিয়াল মাদ্রিদকে পরিণত করেছিলেন অপ্রতিরোধ্য এক দলে। পাঁচ বছরে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথে রোনালদো গোলের বন্যা বইয়ে দেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মাদ্রিদের হয়ে ১০১টি ম্যাচ খেলেই ১০৫টি গোল করেছেন তিনি। ক্লাবটির ইতিহাসে তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতা।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সফল ৯টি মৌসুম কাটিয়ে ২০১৮ সালে সিরি ‘আর জায়ান্ট য়্যুভেন্তাসে যোগ দেন তিনি। ক্লাবটির হয়ে ৩ মৌসুমে ১৩৪টি ম্যাচ খেলে ১০১টি গোল করেন তিনি। ২০২১ সালে ফের তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরেন। তবে ইউনাইটেডে নিজের দ্বিতীয় অধ্যায়টা ভালো কাটেনি সিআর সেভেনের। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিকপক্ষ ও কোচ এরিক টেন হাগের কড়া সমালোচনা করেন রোনালদো। দাবি করেন, তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এর কয়েক দিনের মধ্যে ‘দুপক্ষের সমঝোতায়’ তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ইউনাইটেড।
ইউনাইটেড ছাড়ার পর প্রায় দেড় মাস ক্লাবহীন ছিলেন রোনালদো। বেশকিছু ক্লাবের সঙ্গে গুঞ্জন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত সৌদি ক্লাব আল নাসরের সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি করেন তিনি।
২০০৩ সালের ২০ আগস্ট কাজাখস্তানের বিপক্ষে পর্তুগালের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। জাতীয় দলের জার্সিতে পাঁচটি বিশ্বকাপ ও ৫টি ইউরো খেলেছেন রোনালদো। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে তিনিই সর্বোচ্চ গোলের মালিক।
জাতীয় দলের জার্সিতে ১৯১টি ম্যাচ খেলা রোনালদো আন্তর্জাতিক ফুটবলে পুরুষ ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলের মালিক। ২০২১ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে জোড়া গোল করে তিনি ভেঙে দেন ইরানের আলি দাইয়ির ১০৯ গোলের রেকর্ড।
শুধু আন্তর্জাতিক ফুটবলেই নয়, পেশাদার ফুটবলের ইতিহাসে আনুষ্ঠানিক গোলের হিসেবে রোনালদোই সর্বোচ্চ গোলের মালিক। এখন পর্যন্ত ১১৩৯ ম্যাচ খেলে ৮১৮ গোল করেছেন এই কিংবদন্তি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।