জুমবাংলা ডেস্ক : প্রায় চার যুগ আগে ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। এরপর কেটে গেছে অনেক বসন্ত। ফিরেন নি বাসায়। মুক্তিযুদ্ধের পরপর যখন তিনি বাসা থেকে বের হন তখন তার ঘরে চার সন্তান। এরমধ্যে ছোট ছেলের বয়স ছিল মাত্র ৪০ দিন। সেই ছেলে এখন বড় হয়েছে। বিয়ে হয়েছে, আছে দুই ছেলেও। এছাড়া তার বড় ভাইদের ছেলে-মেয়ে আছে। সেই মেয়েরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে দাদার হারিয়ে যাওয়ার কাহিনী শুনেছে। শুনেছে পরিবারে আসা হাবিবুর রহমানের নাতীর বৌ’রাও।
সেই শোনা থেকেই কল্পনায় ছবি এঁকেছে দাদার। তাইতো ভিডিও দেখেই হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের বউ প্রথমে শনাক্ত করে হাবিবুর রহমানকে। পরে তিনি ভিডিও দেখান পরিবারের সদস্যদের। এরপর পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করেন তাকে।
জানা যায়, হারিয়ে যাওয়ার পর হাবিবুর রহমান বিভিন্ন মাজারে ঘুমাতেন। এক পর্যায়ে তিনি মৌলভীবাজারের হযরত শাহাব উদ্দিনের মাজারে থাকা শুরু করেন। আর সেই মাজারেই পরিচয় হয় মৌলভীবাজারের রায়-শ্রী এলাকার রাজিয়া বেগমের সাথে। রাজিয়া বেগমও মাজার খুব পছন্দ করতেন। সেই থেকেই তিনি হাবিবুর রহমানের দেখাশোনা শুরু করেন।
এক যুগ থেকে বিছানায় পড়েছিলেন হাবিবুর রহমান। এরমধ্যে সর্বশেষ মাসখানেক আগে তিনি নিজের খাট থেকে পড়ে যান। এতে তার ডান হাত ভেঙ্গে যায়। পরে রাজিয়া বেগম থাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে গত ৬/৭দিন আগে হাবিবুর রহমানের ভাঙ্গা হাতে ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরে ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুদিন আগে ভাঙ্গা হাতে ওপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে না পারায় অপারেশন করাতে পারেননি। আর এই বিষয়টি হাবিবুর রহমান পাশের বেডের একজনের সাথে শেয়ার করেন। পরে ঐ ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের সামগ্রিক বিষয় জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। এ ভিডিও দেখেন আমেরিকা প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের ছেলের বউ। এরপর তিনি পরিবারের সদস্যদের দেখালে পরিবারের সদস্য অনুমান করেন তিনিই হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান।
পরে পরিবারের সদস্যরা শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। এসে হাবিবুর রহমানকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞেস করেন। তবে হাবিবুর রহমান শুধু নিজের স্ত্রী ও ভাইদের নাম বলতে পারছিলেন। কখনো বলছিনলেন নিজের গ্রামের নামও। পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেন তিনিই হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান। এরপর পরিবারের সদস্যরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বের করে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ছয় তলার একটি কেবিনে শুয়ে আছেন হাবিবুর রহমান। তাকে ঘিরে আছেন নাতী কেফায়াত আহমদ। আছেন পরিবারের অন্যান্যরাও। সব মিলিয়ে হাসপাতালের কেবিনে যেন এক উৎসবের রঙ। সবাই একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছেন, কেউ কেউ কৌতুহলী প্রশ্নও করছেন হাবিবুর রহমানকে।
তবে তিনি দীর্ঘক্ষণ পরপর উত্তর দেন। বুঝতে পারার উপর নির্ভর করে তিনি প্রশ্নের উত্তর দেন। তবুও প্রশ্ন করছেন পরিবারের সদস্যরা। এসময় পরিবারের সদস্যরা তাকে দীর্ঘদিন না আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা (তারা বলতে তিনি কাকে বুঝাতে চেয়েছেন তা খুলে বলতে পারেন নি) আমাকে দেয়নি। তবে নাম জিজ্ঞেস করতেই তিনি হাবিবুর রহমান বলে উঠেন। এসময় জয়গুন নেছা কার নাম জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান নিজের স্ত্রীর নাম বলে জানান।
রাজিয়া বেগম বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর আগে এক মাজারে হাবিবুর রহমানের সাথে দেখা হয়। সেই সুবাধে তিনি আমাদের পরিচিত হয়ে উঠেন। আমিও তাকে সম্মান করে পীর সাহেব বলি ডাকি। এরপর থেকেই আমি তার দেখাশুনা করে আসছি।
হাবিবুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে আমার বাবা ব্যবসার উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যান। এরপর আমাদের পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি। এরমধ্যে ২০০০ সালে আমার মা মারা যান। তিনি যখন হারিয়ে যান তখন আমরা বিয়ানীবাজারের বেজগ্রামে থাকতাম। আর এখন বিয়ানীবাজার পৌরসভার কবসা এলাকায় বসবাস করছি।
নিজের বাবাকে ফিরে পাওয়ার ঘটনা অবিশ্বাস্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। কারণ দীর্ঘ ৪৮ বছর পরে তাকে আমরা পেয়েছি। পরিবারের সবাই খুশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।