সম্প্রতি নারী পা’চা’রের উপর এক অভি’যান চালায় বিবিসি বাংলা। যেখানে উঠে আসে নারী পা’চার করে অসা’ধু কিছু ব্যবসায়ী কিভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পাঠকদের জন্য বিবিসি বাংলার সেই রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো। দরিদ্র পরিবারের সন্তান পারুল আকতার অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার পর জীবিকার তাগিদে নাচকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে নাচতে গেলে তার সঙ্গে দেখা হয় এক ব্যক্তির, যিনি দুবাইয়ের একটি ‘ডান্স বারের এজেন্ট’।
বিবিসি বাংলাকে পারুল আক্তার বলেন ‘ঐ লোক আমাকে বলছে, তুমি তো ভালোই নাচ। দুবাই যাইবা? ঐখানে স্টেজে নাচলে মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন পাইবা। টাকার কথা শুনে আমি রাজী হইলাম।’ দুবাই যেতে পারুল আক্তারের কোন টাকা খরচ হয়নি। কিন্তু এ বিষয়টিও তার মনে কোন স’ন্দেহও জাগায়নি। দুবাই গিয়ে পুরোপুরি ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হন পারুল আক্তার। তার বর্ণনায়, ‘এখান থেকে ডান্স এর কথা বইলা নিয়া যাইতো। পরে ঐখানে ছেলেদের রুমে পাঠানো হয়।
ওখানে পরিস্থিতির শিকার।’ পারুল আক্তারের মতো বহু মেয়েকে এভাবেই দুবাইয়ের ডান্স বা’রে চাকরি দেয়ার নামে জোর করে দে’হ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে। নয় মাস আগে দুবাই ফেরত কিছু নারীর অভি’যোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে ত’দ’ন্ত শুরু করে নারায়নগঞ্জের র্যা’পিড অ্যা’কশন ব্যাটালিয়ন।
নারায়ণগঞ্জে র্যাব ১১’র অতিরিক্ত পু’লিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন,’অনেকদিন ধরেই আমরা খবর পাচ্ছিলাম যে এখান থেকে কিছু মেয়ে দুবাই আসা যাওয়া করছে। আমাদের কাছে কিছু অভি’যোগও এসেছে।’
নয় মাস ত’দ’ন্তের পর র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল গত রবিবার (২৪ নভেম্বর) ছয়জনকে আ’ট’ক করেছে, যারা দুবাইয়ের ‘ডান্স বা’রে’ নারী পা’চারের সাথে জ’ড়িত বলে অভি’যোগ রয়েছে। এই ছয়জনের মধ্যে একজন পাসপোর্টের দালাল, দুইজন ডান্স বা’রের এজেন্ট এবং দুই জন ডান্স বা’রের মালিক। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে র্যাব জানতে পেরেছে, পাঁচটি ধাপে দুবাইয়ের ডান্স বা’রে নারীদের পা’চার করা হয়।
যেভাবে পা’চার করা হয়: প্রথম ধাপে রয়েছে এজেন্ট। তাদের কাজ হচ্ছে মেয়েদের টা’র্গেট করা এবং তাদেরকে প্রলো’ভন দেখানো। এর সাথে দুবাই ফেরত কিছু নারীও জ’ড়িত রয়েছে। কারণ তাদের মুখে ‘আর্থিক সমৃদ্ধির গল্প’ অন্য নারীদের প্র’লুব্ধ করে।
দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে পাসপোর্ট করিয়ে দেবার দা’লালচ’ক্র। মেয়েদের রাজী করানো সম্ভব হলে দা’লালরা তাদের পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করে। মেয়েদের ছবি পাঠানো হয় দুবাইতে ডান্স বা’রের মালিকদের কাছে। র্যাব বলছে ছবি দেখে পছন্দ হলে মালিকরা ঢাকায় আসে তাদের দেখার জন্য।
তৃতীয় ধাপে রয়েছে ট্রাভেল এজেন্ট। তাদের কাছে টুরিস্ট ভিসা পাঠিয়ে দেয় দুবাইয়ের ডান্স বা’রের মালিকরা। পরবর্তী ধাপে আছে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে কর্মরত কিছু অসাধু ব্যক্তি। একজন নারী ইমিগ্রেশন পেরিয়ে দুবাই যাবার জন্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘু’ষ দিতে হয়। র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনের ভাষ্য মতে, একজনকে পাঠাতে দুই লক্ষ টাকার বেশি খরচ হয়, যার পুরোটাই বহন করে ডান্স বা’রের মালিকরা। দুবাইতে পৌঁছানোর পর একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় এসব নারীদের।
তারপর সেখান থেকে কোন বাড়িতে নিয়ে কার্যত ব’ন্দী করা হয় এবং দে’হব্য’বসায় বাধ্য করা হয়। তিনি বলেন, ত’দন্তে দেখা গেছে একটি ট্রাভেল এজেন্সি শুধু চলতি বছরেই ৭২০ জন তরুণীকে দুবাই এবং মালয়েশিয়া পাঠিয়েছে। এ বিষয়টি র্যাব-এর কাছে বেশ অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। গ্রে’ফতারকৃত ডা’ন্স বা’রের মালিক এবং এজেন্টদের কাছ থেকে র্যাব জানতে পেরেছে যে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই হাজার নারীকে ডান্স বা’রের নামে দুবাই পা’চার করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন বলেন, ‘একটা মেয়েকে দুবাই নিয়ে যেতে ডান্স বা’রের মালিকের খরচ হয় দুই লাখ টাকা। অথচ এদের একজনকে দিয়ে ডান্স বা’রের মালিকরা প্রতিমাসে ৬ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আয় করে।’ আ’ট’ককৃত ডান্স বারের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পেরেছে, দুবাইতে বাংলাদেশীদের মালিকানাধীন প্রায় ৪০টি ডান্স বা’র রয়েছে। র্যাব বলছে বাংলাদেশ থেকে নারীদের বিভিন্ন প্রলো’ভন দেখিয়ে দুবাইতে পা’চার করার র’মর’মা বাণিজ্য চলছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।