জুমবাংলা ডেস্ক: সোনালি আঁশ পাট থেকে তৈরি হচ্ছে মোহনীয় কারুকাজের জুতা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুরের পরিবেশবান্ধব এ জুতা স্পেন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। ঘরে বসেই নারীরা জুতা তৈরির আয়ে সংসার খরচে হাত লাগাতে পারছেন। গ্রামের শত শত নারীর বাড়তি আয়ের এ সুযোগ করে দিয়েছেন ওবাইদুল হক রাসেল।
অবশ্য শুরুর গল্পটা এমন সহজ ছিল না। পাটের সুতার জুতা দিয়ে বিশ্ববাজার ধরতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় রাসেলকে। ভেতরে পুষে রাখা তার ‘নিজের মতো কিছু করার’ স্বপ্ন পূরণ করেছে এ সোনালি আঁশ।
গল্পের ছলে রাসেল বলতে থাকেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষে চাকরিতে মন টানছিল না। কিছু করবেন, সে সামর্থ্যও ছিল না। একপর্যায়ে মায়ের কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিয়ে ঢাকায় বন্ধুর মেসে ওঠেন। পোশাক কারখানায় পণ্য সরবরাহের কাজ নেন রাসেল। এ কাজের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে তিন বছর পর গ্রামে ফিরে জুতা তৈরির কারখানা দেন।
পরিশ্রম এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার একতারপুর গ্রামের মৃত আসাদুর রহমানের ছেলে রাসেলকে আজ বানিয়েছে সফল উদ্যোক্তা। তার ‘অ্যামাস ফুটওয়্যার লিমিটেড’-এ পাটের সুতায় তৈরি জুতার ব্যাপক কদর বিশ্ববাজারে। বেশিরভাগ নারীসহ ছয় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান করার স্বীকৃতিও পেয়েছেন রাসেল। গত বছর দশম জাতীয় এসএমই পণ্যমেলায় বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পুরস্কার পান তিনি।
কালীগঞ্জ শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে রঘুনাথপুরে রাসেলের কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের জুতা তৈরিতে ব্যস্ত দেখা যায়। একপাশে রাবার গলিয়ে যন্ত্রের ডাইসে বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সোল। এরপর সেই সোলে কাপড়ের অংশ বসিয়ে পাটের সুতা দিয়ে হাতে সেলাই করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী করা হচ্ছে নকশা। কারখানায় যন্ত্রে প্রাথমিক কাজ শেষে মালপত্র পাঠানো হয় আশপাশের গ্রামে। প্রশিক্ষিত নারীরা জুতা তৈরি করে ফেরত দিচ্ছেন।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, ঢাকায় পোশাক কারখানায় পণ্য সরবরাহের সূত্রে বিভিন্ন দেশের ক্রেতার সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের উৎসাহে ২০১৬ সালে রঘুনাথপুরে ৪৪ শতক জমির ওপর জুতার কারখানা দেন। গ্রামাঞ্চল হওয়ায় শুরুতে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। এক বছর পরই কয়েকটি উন্নত দেশের ক্রেতা থেকে নিয়মিত জুতার বড় অর্ডার পেতে শুরু করেন রাসেল। এরপর পণ্যটির বিশ্ববাজার ধরতে বিভিন্ন দেশের মেলায় স্টল দেন। এতে অর্ডার আরো বেড়ে যায়। ক্রেতার চাহিদা মেটাতে এখন ৫-৬ বিঘা জমি কিনে কারখানা বাড়াচ্ছেন রাসেল।
কারখানার মধ্যবয়সী শ্রমিক ফিরোজা বেগম জানান, গ্রামে গিয়ে নারীদের কাছে সব সরঞ্জাম দিয়ে আসেন তিনি। এক জোড়া জুতা বাবদ তিনি এক টাকা পান। এতে মাস শেষে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা থাকে।
নিশ্চিন্তপুর গ্রামের রুপসী দাসী জানান, গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে জুতা বানান তিনি। দিনে দেড় থেকে দুইশ টাকা আয় হয়।
কারখানার ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা জানান, পাটের সুতায় হাত ও মেশিনে করা পরিবেশবান্ধব নানা নকশার জুতার চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। একজন নারী ঘরে বসে প্রতিজোড়া জুতা তৈরিতে পান ৮ টাকা। কারখানার কর্মীদের দক্ষতা বিবেচনায় বেতন দেওয়া হয়। বর্তমানে মাসে গড়ে ৫০ হাজার জোড়া জুতা রফতানি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।