জুমবাংলা ডেস্ক: দেশে ক্রমেই বাড়ছে নতুন ধরনের সাইবার অপরাধের মাত্রা। একইসঙ্গে মানুষের অনলাইনে কেনাকাটার অভ্যাস বাড়ারও সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র। অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। অ্যাপের মাধ্যমে ঋণের নামে ফাঁদের মতো অভিনব পদ্ধতিতে নানা ধরনের আর্থিক অপরাধের প্রবণতা বাড়লেও কমেছে আইনের শরণাপন্ন হওয়ার প্রবণতা। এমনকি অনেকে জানেনও না আইনি প্রতিকার কীভাবে নিতে হয়।
২০১৫-২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সাইবার স্পেসের অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করে এই তথ্য তুলে ধরেছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের। শনিবার (২০ মে) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটে বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৩ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন ও আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের সাইবার অপরাধ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।
গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে মোট মোট সাইবার অপরাধের মধ্যে অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার হার ছিল ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশে। ২০১৮ সালে অনলাইনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকির হার ছিল ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে এ হার দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১৮ সালে পর্নোগ্রাফি ব্যবহার করে হয়রানির হার ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০২৩ এ হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১২ শতাংশে। ফটোশপে ছবি বিকৃত করে অনলাইনে প্রচারের হার ২০১৮ সালে ছিল ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ। যা কমে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৮ সালে সংঘটিত অপরাধের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের হার ছিল ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বর্তমানে এ হার কমে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের হার ২০১৮ সালে ছিল ২৭ দশমিক ০৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে এ হার কমে ১৬ দশমিক ০২ শতাংশে নেমেছে। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং বা তথ্য চুরির হার ২০১৮ সালে ছিল ৩ দশমিক ০১ শতাংশ। এখন এটি কমে ১ দশমিক ১০ শতাংশে নেমেছে।
এছাড়া অন্যান্যা ক্যাটাগরির (আইডি ডিজেবল করে দেয়া, চাকরির কথা বলে প্রতারণা ও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা নেয়া) হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। যা বর্তমানে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, বিগত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমছে সাইবার বুলিং সংশ্লিষ্ট অপরাধের ঘটনা (অনলাইন ও ফোনে বার্তা পাঠানো, পর্নোগ্রাফি, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার ও ছবি বিকৃতি)। এ ধরনের অপরাধ ২০২২ সালে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।
তবে এতকিছুর পরও দিন দিন কমছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগের হার। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ ২০২৩ এ এসে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রবণতা কমার পেছনে তাদের অজ্ঞতাকেই প্রধান কারণ বলছে গবেষণা। ২০২৩ সালের জরিপ বলছে, ২৪ শতাংশ ভুক্তভোগীই জানেন না কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়। এছাড়া ঘটনা গোপন করার প্রবণতার কথা জানিয়েছেন ২০ শতাংশ ভুক্তভোগী এবং আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির ভয়ের কথা জানিয়েছেন ১৮ শতাংশ ভুক্তভোগী।
আর যারা আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন তাদের মধ্যে সিংহভাগ ভুক্তভোগীই জানিয়েছেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেয়া ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। ২০২৩ সালের জরিপে এ হার মোট অভিযোগকারীর ৮০ শতাংশ।
প্যানেল আলোচনায় বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে তথ্যের ব্যবহার বিপুল পরিমাণে বেড়েছে৷ ইন্টারনেট এখন আমাদের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে নিরাপদে কাজ করার জন্য অনলাইন স্পেসে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেকে তারা শারীরিকভাবে কাজ করার ঝামেলা এড়াতে চান। তবে এখানে সাইবার অপরাধীরা তাদের বিপদে ফেলছেন।
তিনি জানান, রেগুলেটর হিসেবে আইএসপি প্রোভাইডারদের জন্য কিছু পলিসি তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সেটা না মানলে কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়। এছাড়া কল সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যেন মানুষ তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেসের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভুঞা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান, সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. মুশফিকুর রহমান, বিআইএসএসের গবেষণা কর্মকর্তা নাহিয়ার রেজা সাবরিয়েতসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠানের মডারেটর ছিলেন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ।
হজযাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলো বিমান, যা জানা জরুরি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।