জুমবাংলা ডেস্ক : মহামারি কভিড-১৯ অর্থাৎ করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টিকে স্বস্তির মনে হলেও এটি দুশ্চিন্তার করাণও হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা এখন কম দেখা গেলেও ভবিষ্যতে এটি চক্রবৃদ্ধিঞারে বাড়তে পারে।
আজ শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে গত ২৪ ঘন্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩১ জনে।
আর গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০৩ জন, মোট ৪৬৮৯।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপর মঙ্গলবার ৩৭তম দিন যায়। আক্রান্তের সংখ্যা প্রথম ১০০ জনে পৌঁছাতে সময় লাগে ২৮ দিন। কিন্তু গত কয়েক দিনে এই চিত্রে পরিবর্তন আসে।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে টেস্ট কম কিন্তু আক্রান্ত বেশি। সেই সাথে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রান্ত সচেতনতা নেই বললেই চলে। তাহলে কি ভবিষ্যতে আরও দুঃসময়ে পড়েব বাংলাদেশ?
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক হালনাগাদ তথ্য দিচ্ছে ওয়ার্ল্ডওমিটার্স ডট ইনফো নামে একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের হার ভাইরাসটিতে লণ্ডভণ্ড অনেক দেশের চেয়ে বেশি। যদিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ওইসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম।
ওয়ার্ল্ডওমিটার্স ডট ইনফোর তথ্য অনুযায়ী, ইরাকে ৩৭ হাজার ৭৯১ টেস্টে আক্রান্ত ১৩৭৮, ইস্তোনিয়ায় ৩২ হাজার ২৬৩ টেস্টে আক্রান্ত ১৩৭৩, নিউজিল্যান্ডে ৬৪ হাজার ৩৯৯ টেস্টে আক্রান্ত ১৩৬৪, স্লোভেনিয়ায় ৩৫ হাজার ৯৪৬ টেস্টে আক্রান্ত ১২২০, কাজাখস্তানে ৭৬ হাজার ৯০৪ টেস্টে আক্রান্ত ১২০২, আজারভাইজানে ৬৬ হাজার ৬৭৭ টেস্টে আক্রান্ত ১১৪৮, উজবেকিস্তানে ৭০ হাজার টেস্ট আক্রান্ত ১১১৩, লিথুনিয়ায় ৪২ হাজার ৬৯০ টেস্টে আক্রান্ত ১০৭০ এবং হংকংয়ে ৯৬ হাজার ৭৯০ টেস্টে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ১০১৩ জন। বাংলাদেশের মতো অবস্থায় আছে বসনিয়া ও আর্মেনিয়া। বসনিয়ায় ১১ হাজার ৬১২ টেস্টে আক্রান্ত ১০৮৩ এবং আর্মেনিয়ায় ৮ হাজার ৩১৬ টেস্টে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ১০৬৭ জন।
ওয়েবসাইটটি বলছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮৬ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, যাতে পজিটিভ আসে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৫ জনের। বিশ্বে সব থেকে বেশি করোনা আক্রান্ত এখন যুক্তরাষ্ট্রেই। সব চেয়ে বেশি করোনা পরীক্ষাও হয় ওই দেশে। পরীক্ষার দিক থেকে এরপর এগিয়ে জার্মানি, ইতালি ও রাশিয়া। এই তিন দেশে যথাক্রমে ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৮৭, ১০ লাখ ৭৩ হাজার ও ১৪ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় জার্মানিতে ১ লাখ ৩১ হাজার, ইতালিতে ১ লাখ ৬২ হাজার ও রাশিয়ায় মাত্র ২১ হাজার মানুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে করোনা পরীক্ষার হার অনেক উপরে। এসব দেশের সব ক’টিতে কমপক্ষে সাড়ে তিন লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এ পর্যন্ত ২ লাখ ৬ হাজার টেস্ট সম্পন্ন করে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশের দুই গুণের বেশি আয়তন ভিয়েতনামের। তাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৫৯ জন, বাংলাদেশের ১১০৬ জন। ভিয়েতনামে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে কেউ মারা যায়নি। তবে শনাক্ত হয়েছে ২১৬ জন। এর মধ্যে ১৬৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। দেশটিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৮২১ জনের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে গত দু’দিনে পরীক্ষার পরিধি বাড়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিধি আরও বাড়লে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে পারে। পরীক্ষার মাধ্যমে যত বেশি আক্রান্ত শনাক্ত করা যাবে, তত বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।