উম্মুল ওয়ারা সুইটি : পূর্ণাঙ্গ সেনাশাসনের অবসানের পর দ্বিতীয়বারের মতো আজ মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্বগণমাধ্যম ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির জনপ্রিয়তায় এবারও তার দল এনএলডি ক্ষমতায় আসবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতেই গত গতবারের চেয়ে এবার সু চির জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে দেশটিতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতেই সু চি হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে মিয়ানমার কর্র্তৃপক্ষের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির নেতিবাচক অবস্থান এবং দেশটিতে এবারের নির্বাচনে রোহিঙ্গাসহ প্রায় ২৬ লাখ সংখ্যালঘুকে ভোটাধিকারবঞ্চিত করে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিশ্বগণমাধ্যমেও তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, এর মধ্য দিয়ে সু চি হয়তো জয় পেতে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু রোহিঙ্গা নিপীড়নের কারণে সু চি ইমেজ সংকটে পড়েছেন।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের নির্বাচনে সু চির দলের জয় বাংলাদেশের জন্য কোনোই সুখবর আনবে না। তারা বলছেন, সু চির নেতৃত্বেই মিয়ানমার দেশটিকে রোহিঙ্গাহীন করার উদ্যোগ নেবে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালি উর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সু চি করবেন না। তিনি রোহিঙ্গা নিপীড়নের পক্ষ নিয়ে একের পর এক নির্বাচনে জয়ী হবেন। চীন, ভারত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়েই রোহিঙ্গা বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে এই দুই প্রভাবশালী দেশ যদি বাংলাদেশের পক্ষে থাকে তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন একেবারেই থেমে আছে। এখন করোনার কারণে জয়েন্ট কমিটির বৈঠকও হচ্ছে না। তবে আমরা আশা করছি মিয়ানমারের নতুন নির্বাচনের পর আবার আলোচনা শুরু হবে।
জানা গেছে, নোবেলজয়ী অং সান সু চি ও তার দল এনএলডি ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন করে। ৫০ বছর ধরে সামরিক শাসনে থাকার পর মিয়ানমার পায় প্রথম বেসামরিক সরকার। প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন, যার ৫০ লাখই তরুণ ও প্রথমবারের ভোটার। এনএলডি’র সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৯০টি দল। সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ১৫ লাখ ভোটারকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা বলে সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে এমন অনেক রাখাইন বৌদ্ধও রয়েছেন, যারা ২০১৫ সালে ভোট দিতে পারলেও এবার পারছেন না। এর পাশাপাশি ভোটাধিকারবঞ্চিত ১১ লাখ রোহিঙ্গাও রয়েছেন। এই রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার দুটোই হারিয়েছেন।
ফরটিফাই রাইটস-এর জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ জন কিনলি গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। এসব সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হচ্ছে না। কিনলি বলেন, সু চি ও তার দল এনএলডির জন্য হানিমুন অধ্যায় শেষ হয়েছে। যথেষ্ট হয়েছে।’ রোহিঙ্গা রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হচ্ছে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচও এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, নির্বাচন ‘মৌলিকভাবে ত্রুটিযুক্ত’। কারণ সংঘাতকবলিত এলাকাগুলোতে অনেক কমিউনিটির মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।