ওমর ফারুক হিমেল: দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার চারদিন পর বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি যাত্রীদের জন্য করোনা প্রতিরোধে তাদের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করেছে।বিষয়টা ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগীটি মারা গেল’-এর মতো হয়ে গেল। অর্থাৎ বোয়েসেলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত হওয়ার আগেই কোরিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির সরকার।
এর আগে ৫ এপ্রিল ঢাকার দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। যা কোরিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে উদ্বেগের।’
এ বাস্তবতায় আবারও ভিসা স্থগিতাদেশের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখলেও আন্তরিকভাবে কিন্তু তা এড়াতে চাইছে কোরিয়ান দূতাবাস।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দূতাবাস, কোরিয়ায় প্রবেশের আগে ও পরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এড়াতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিরক্ষামূলক ও সতর্কতামূলক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ভ্রমণকারীদের সক্রিয় ও স্বেচ্ছাসেবামূলক সহযোগিতার আশা করে।’
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১৬ জন বাংলাদেশি করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে ১৬ এপ্রিল করোনার কারণে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির সরকার।
বোয়েসেল কিংবা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যদি ঢাকার দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের ৫ এপ্রিলের বিজ্ঞপ্তিটি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতো তাহলে আর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হতো না বাংলাদেশি নাগরিকদের।
১২ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সেটা তাৎক্ষনিকভাবে জানানোর তাগিদ অনুভব করেনি মন্ত্রণালয় কিংবা বোয়েসেল। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার চারদিন পর ২০ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি যাত্রীদের জন্য করোনা প্রতিরোধে তাদের কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- (ক) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও বোয়েসেল-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়াগামী যাত্রীকে কোভিড টেস্ট সম্পন্ন করে ৭ দিনের বাধ্যতামূলক সঙ্গনিরোধ সম্পন্ন করতে হবে।
(খ) সাতদিনের সঙ্গনিরোধ থাকা অবস্থায় কোভিড টেস্ট শতভাগ নিশ্চয়তার স্বার্থে কোরিয়ান কিট দ্বারা সরকার অনুমোদিত একটি সুনির্দিষ্ট কোভিড সেন্টার থেকে টেস্ট শেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় গমন নিশ্চিত করতে হবে।
(গ) সকল যাত্রীদের ট্রাভেল বিমার ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। (ঘ) এইচআরডি কোরিয়ার চাহিদা মোতাবেক বিশেষ ফ্লাইটে ইপিএস কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে।
(ঙ) ইপিএস কর্মী ছাড়া যারা দক্ষিণ কোরিয়া গমন করবে তাদের তথ্য কোরিয়ান দূতাবাস ঢাকা কর্তৃক বোয়েসেলকে সরবরাহ করতে হবে।
(চ) সঙ্গনিরোধ-এর পূর্বে কোভিড টেস্ট, সঙ্গনিরোধ এবং সঙ্গনিরোধ পরবর্তী কোভিড টেস্ট এর যাবতীয় ব্যয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বহন করবে। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
কোরিয়া প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা মেক্সিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রথমবার নিষেধাজ্ঞার পর যদি এই সিদ্ধান্তগুলো নিলে দ্বিতীয়বার নিষেধাজ্ঞা এড়ানো যেত।
কোরিয়া প্রবাসী ইপিএস কর্মী আজাদ বলেন, বর্তমানে বোয়েসেলের সিদ্ধান্তগুলো নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু এসব ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যদি বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে আবার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হতো না।
অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও দেশে কোয়ারেন্টাইনে রেখে কর্মীদের পাঠানো উচিত। একই সঙ্গে কোরিয়া সরকারের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকা জরুরি। তাহলে কোরিয়ার শ্রমবাজার হারানো এড়ানো যেতে পারে।
বি এস কে সভাপতি কাজী শাহ আলম বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থে ইপিএসকে বাঁচাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনভাবেই করোনা পজিটিভ রোগী কোরিয়ায় প্রবেশ না করে।
লেখক: সাংবাদিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।