জুমবাংলা ডেস্ক : দ্বিতীয় বিয়ে করার পর গুলতেকিন খান ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আফতাব আহমদকে নিয়ে আমাদের সমাজে বিতর্ক হবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু বেশিরভাগই তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি এই তিন ধর্মেই বিধবাদের সম্মান দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবন নিরাপদে, সুন্দরভাবে পার করার জন্য আবারো বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। বিধবাদের ঠিকমতো দেখাশুনা করার দায়িত্ব সমাজের উপর দেওয়া হয়েছে। একইসাথে বিধবাদের য নেওয়ার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা ও বিষয়টি এখনো ঘৃণার চোখে দেখি যার কোনো সুযোগ নেই ধর্মতেও।
এমনকি বেশিরভাগ পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় বিধবাদের কথা চিন্তাও করে না। রাসুল (সা:)এর মাত্র একজন স্ত্রী ছিলেন কুমারী, আর বিভিন্ন সময়ে ৮ জন স্ত্রী হয়েছিলেন বয়স্ক বিধবা। আল্লাহ বিধবাদের প্রতি খুবই সদয় আচরণ করার কথা বলেছেন। তিনি কুরআনে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যখন সেই সময় (ইদ্দত) পার হবে, তখন যদি তারা গ্রহণযোগ্য-সুন্দরভাবে নিজেদের ব্যাপারে কিছু করতে চায়, তাহলে তোমাদের কোনো গুনাহ হবে না। তোমরা যা কিছুই করো, আল্লাহ তার সব জানেন। [আল-বাক্বারাহ ২৩৪]
তারপর ইদ্দত পূরণ করার পর বিধবা ইচ্ছে করলে আবার বিয়ে করতে পারেন। গ্রহণযোগ্যভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। আল্লাহ বলেছেন, বিধবা নিজেই সবার কাছে ভালো বলে পরিচিত এমন কিছু, কোনো কাজ বা কিছু যার ফলাফল যে ভালো হবে তা যুক্তি দিয়ে বোঝা যায়, এমন কোনো কাজ যা শরিয়ার ভিত্তিতে ভালো, সুন্দর আচরণ, সমতা, মমতা, কল্যাণকর, আন্তরিকতা, সৎ উপদেশের ভিত্তিতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অনেকে নিজেদের পরিবারের খানদানি সম্মান চলে যাবে ভেবে বিধবাদের বিয়ে দিতে চান না। এটা অন্যায়। আল্লাহ বিধবাদের অধিকার দিয়েছেন, বিধবারা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করলে অভিভাবকদের কোনো দোষ হবে না। ধর্মে এও বলা হয়েছে এতে বাঁধা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গুলতেকিন ও আফতাবের বিয়ে সম্পর্কে তাদেরই দেয়া স্ট্যাটাসের দুটি লাইন ধর্মীয় সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ধরা দিয়েছে। ‘তিনি (গুলতেকিন) আমাকে তার সামনে বসালেন এবং আমার হাতে হাত রেখে বললেন’, ‘প্রত্যেকেরই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না। আমি নিঃশ্বাস নিতে চাই। তবে নিশ্চিত নই ভবিষ্যৎ কোন নিয়তিতে গাঁথা।’ আফতাব আহমেদ জবাবে বললেন, আমি চেষ্টা করব তোমাকে বাঁচাতে কিন্তু তোমাকে বিয়ে করা ছাড়া এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ এ সময় একটু বিরতি নিয়ে গুলতেকিন বললেন, তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? এবং আমি অনুমান করতে পারি, আমরা দুজনেই কোনো কারণ ছাড়া এক সঙ্গে হতে পারব না।
গত হাজার বছর ধরে ভারত উপমহাদেশে বিধবারা ভয়ঙ্কর অত্যাচার এবং অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। বিধবাদের একসময় স্বামীর চিতায় জীবন্ত জ্বলে মরতে বাধ্য করা হতো। না হলে ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে তাদের অর্ধমৃতের মতো বেঁচে থাকতে হতো। বিধবারা সারাজীবন সাদা কাপড় পড়ে থাকতো, কখনো সাজতে পারত না, প্রথা অনুসারে মাথা কামিয়ে ফেলতে হতো। স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোনো অধিকার ছিল না। বিধবা হয়ে যাওয়ার পর তাদের দেখাশুনা, ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর পক্ষ থেকে কেউ নিত না। তাদের জন্য পেঁয়াজ, রসুন, আমিষ ইত্যাদি খাওয়া সারা জীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যেত। সমাজ তাদেরকে দেখত এক অশুভ, অস্পৃশ্য, ঘৃণিত সত্তা হিসেবে। স্বামীর মৃত্যুর জন্য বিধবার পোড়া কপালকে দোষ দেওয়া হতো। এই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থা। আর ইসলাম আসার আগে প্রাচীন আরবে বিধবাদের নিয়ে কী করা হতো তা বর্ণনা করার ভাষা নেই।
কিন্তু এখনো লাখ লাখ নারী বাল্য বিয়ে করে স্বামী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অল্প বয়সে মা হয়ে স্বামী হারিয়ে, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে, বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত ভীষণ কষ্টের জীবন পার করে। পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে ৪ কোটি বিধবা রয়েছে, যার একটি বড় অংশ আশ্রমে থাকে, না হয় রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে, না হলে নিষিদ্ধ জীবন যাপন করছে। এদের কেউ দেখে না। তাদের সন্তানরা তাদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। সমাজে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোথাও তারা মানুষ হিসেবে সম্মান পায় না।
বরং বিধবাদের জীবন নিরাপদে, সুন্দরভাবে পার করার জন্য আবারো বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। বিধবাদের ঠিকমতো দেখাশুনা করার দায়িত্ব সমাজের উপর দেওয়া হয়েছে। একইসাথে বিধবাদের যতœ নেওয়ার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
চার মাস দশ দিন কেন?
চার চান্দ্র মাস এবং দশ দিন হচ্ছে ১২৬ দিন, অর্থাৎ ঠিক ১৮ সপ্তাহ। ১৮ সপ্তাহে একটি বাচ্চা পুরোপুরি মানব আকৃতি নেয়। এসময় তার চোখ, কান, নাক, মাথা, হাত, পা ইত্যাদির গঠন সম্পূর্ণ হয়, দাঁত, নখ তৈরি হয়। লিভার, পরিপাকতন্ত্র সম্পূর্ণ হয়ে হজমি রস নিঃসরণ হয়।এই সময় ছেলে বা মেয়ে অনুসারে যৌনাঙ্গ, জরায়ু সম্পূর্ণ তৈরি হয় এবং বাচ্চা কী হবে তা পরিষ্কারভাবে নির্ণয় করা যায়। গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা এই সময়ের পর থেকে একেবারেই কমে মাত্র ৩% হয়ে যায়। এছাড়া এই দশ দিনেই বাচ্চার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়।
একারণে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বিধবা গর্ভবতী কিনা এবং বাচ্চা জীবিত কিনা। এর আগে বিয়ে করে ফেললে যদি বাচ্চা জন্ম হয়, তাহলে বাচ্চার বাবা কে, তা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যদি বিধবা সত্যিই গর্ভবতী হন, তাহলে তাকে বাচ্চা জন্ম দেওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। তাই চার মাস দশ দিন অপেক্ষার পর তিনি প্রায় নিশ্চিত হতে পারেন যে, তাকে গর্ভকালীন পুরো সময়টাই অপেক্ষা করতে হবে, কারণ এর পরে বাচ্চা হারানোর সম্ভাবনা কম, যদি না আল্লাহ অন্য কিছু ইচ্ছা করেন।-রাশিদ রিয়াজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।