জুমবাংলা ডেস্ক : উত্তরের জেলা নওগাঁয় গুটি আম নামানো শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং কৃষি অফিস ২৫ মে আম নামানোর সময় বেঁধে দেয়। সে অনুযায়ী গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে। তবে উন্নতজাতের আম বাজারে আসবে আরও কিছুদিন পর। চলতি বছর জেলা থেকে প্রায় এক হাজার ৮৪২ কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবছর প্রায় ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে বেশি বাগান গড়ে উঠেছে। ৫ হাজার ৮০০ আমচাষির প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে সম্ভাব্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিন টন। যেখানে প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। প্রতিকেজি আম ৫০ টাকা হিসেবে এ বছর প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিক্রি হবে।
উপজেলা ভিত্তিক আম বাগানের পরিমাণ- পোরশা উপজেলায় ১০ হাজার ৫২০ হেক্টর, সাপাহারে ১০ হাজার হেক্টর, পত্নীতলায় ৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৪৪৫ হেক্টর, রানীনগরে ১১০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১২০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৫২৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৬৮০ হেক্টর, মান্দায় ৪০০ হেক্টর এবং ধামইরহাটে ৬৭৫ হেক্টর।
তালিকা অনুযায়ী জাতভেদে আমের মধ্যে গোপালভোগ ৩০ মে ও ক্ষীরশাপাত বা হিমসাগর ৫ জুন থেকে পাড়া যাবে। এ ছাড়া নাগ ফজলি ৮ জুন, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙ্গা ১২ জুন, ফজলি আম ২২ জুন ও আম্রপালী ২৫ জুন থেকে পাড়া হবে। সর্বশেষ ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারী-৪ এবং গৌরমতি জাতের আম নামাতে পারবেন চাষিরা।
আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে নওগাঁ জেলা। এ জেলার আম অত্যন্ত সুস্বাদু। ক্রেতাদের কাছেও মোটামুটি চাহিদা রয়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা, ধামইরহাট ও নিয়ামতপুর উপজেলার কিছু অংশ বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। বছরে একটিমাত্র বৃষ্টিনির্ভর ফসল আমন ধানের ওপর নির্ভর করতো হতো চাষীদের। পানি স্বল্পতার কারণে অন্যান্য ফসল চাষ করা সম্ভব হতো না। সেসব জমিতে ধানের আবাদ কমিয়ে চাষীরা ঝুঁকছেন আম চাষে। আম চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা।
পোরশা উপজেলার বালিয়া চান্দা গ্রামের আম চাষী ঈসমাইল হোসেন বলেন, ‘উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী অফিস থেকে রাস্তার গাছগুলো এ বছর তিন লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়মতো আমরা আম পাড়া শুরু করেছি। গুটি আমের গাছগুলো সাধারণত বড় হয়ে থাকে। ঝড়ে প্রায় অর্ধেক আম পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। গুটি আম বাজারে ৪০০-৫০০ টাকা মণ। প্রতিজন ৪০০ টাকা মজুরি ও একবেলা খাবারসহ পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে আম নামানো হচ্ছে। এবার আম ঝড়ে পড়ে যাওয়ায় মনে হচ্ছে লাভ না হলেও লোকসান হবে না।’
উপজেলার সুরানন্দ ডাঙাপাড়া গ্রামের আমচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, গত তিন বছর আগে ১১ বিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের বাগান করেছেন। প্রতি বিঘাতে গাছ আছে ৩০০টি করে। এরমধ্যে ৭ বিঘা জমি ২০ হাজার টাকা বছর হিসেবে ১২ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। প্রতি বিঘাতে গাছ লাগানোসহ খরচ হয়েছিল ২০ হাজার টাকা। গাছ লাগানোর এক বছর পরই আম ধরা শুরু হয়। প্রথম বছর করোনা ভাইরাসের কারণে দাম ভাল পাননি। এবছর বিঘাপ্রতি পরিচর্যা করতে খরচ পড়েছে ১৫ হাজার টাকা। ঝড়ে আম ঝরে পড়ায় গাছে কম পরিমাণ থাকলেও বড় হয়েছে। আশা করছেন প্রতি বিঘাতে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ পাবেন। আম্রপালি বাজারে আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। ফলে এ আমে যেন কোনো পোকা আক্রমণ না করে সেজন্য কীটনাশক স্প্রে করছেন তারা।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এ বছর শুরু থেকে আমের অবস্থা খুবই ভালো। তবে কিছুদিন আগে ঝড়ে কিছু আম ড্রপিং (ঝরে পড়া) হয়েছে। এতে প্রায় ১০ শতাংশ আমের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আমের ফলনের কোন কমতি হবেনা। গাছে আমের পরিমাণ কম থাকলে আকারে বড় ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হবে। ধারণা করা হচ্ছে এ বছর প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিন টন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আম বেশি উৎপাদিত হবে এবং চাষীরাও লাভবান হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর করোনাভাইরাসে আমের বাজারজাতে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তবে এ বছর বাজারজাতে কোন সমস্যা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আম সঠিকভাবে বাজারজাতে ভাল মূল্য পাবে এবং লাভবান হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।