নিজস্ব প্রতিবেদক: তরুণদের মাঝে নদীমাতৃক অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলা ও শিক্ষার্থীদের মাঝে নদীর বিস্তৃত পরিমন্ডল নিয়ে অনুসন্ধিৎসা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছে নদী বিষয়ে দেশের সবচেয়ে বড় নলেজ ইনিশিয়েটিভ ইভেন্ট ‘ইয়ং রিভার চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২’।
শুক্রবার (১ এপ্রিল) এই চ্যাম্পিয়নশিপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠাানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশ এর সমন্বয়কারি শরীফ জামিল, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক অসীম বিভাকর, কমিউনিকেশন এক্সপার্ট ও এনভায়রনমেন্টালিষ্ট মো. শরিফুল ইসলাম ও এম এন্ড জে গ্রুপের মানব সম্পদ, প্রকৌশল ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান মেজর (অব.) ইমতিয়াজ ইসলাম। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন।
প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলা হয়, আমাদের অস্তিত্ব, আর্থসামাজিক অবস্থা, আমাদের জীবন, অর্থনীতি, পর্যটন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নদীর ওপর নির্ভরশীল। তাই নদীভিত্তিক জীবন, অর্থনীতি ও পর্যটন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং পরিণত উপলব্ধি আধুনিক মানুষের পূর্ণাঙ্গতার অপরিহার্য ভিত্তি। নদী এবং পরিবেশ সম্পর্কে উন্নত এবং স্পষ্ট ধারণা, নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার, নদীর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের নিয়ম জেনে সমাজের প্রয়োজনে তা কাজে লাগানো এবং সর্বোপরি নদীর সাথে স্বাস্থ্যকর সহাবস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি তৈরী করে থাকে।
বক্তাগণ বলেন, আমাদের এই অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শৈশব থেকেই শুরু হওয়া উচিৎ। আমাদের প্রচলিত শিক্ষা-ব্যবস্থা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সেই অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার জন্যে যথেষ্ট নয়। তাই উপরোক্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্যে প্রচলিত শিক্ষার বাইরে শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধিৎসাকে নদীর বিস্তৃত পরিমন্ডলে নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
এক্ষেত্রে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি হলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিযোগিতামূলক জ্ঞানচর্চা করা। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এ বছর আয়োজন করা হয়েছে ‘ইয়ং রিভার চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২’। প্রতিযোগিতামূলক জ্ঞান চর্চার এই আয়োজনটি যৌথভাবে করছে ইসাবেলা ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যবরেটরি, জয়েন্ট কো-অপারেশন প্রোগ্রাম বাংলাদেশ -নেদারল্যান্ডস, এম এন্ড জে গ্রুপ, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন।
এই আয়োজনে সহযোগী হিসেবে রয়েছে, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট, নদী অধিকার মঞ্চ, গ্রিণ প্লানেট ও রিভার বাংলা।
আয়োজকদের বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক আগ্রহ বৃদ্ধির একটি প্রণোদনা হিসেবে প্রতিযোগিতা প্রয়োজন, তথাপি ভুলে গেলে চলবে না, যে কোনো সমাজের মূল চালিকাশক্তি প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতা। তাই প্রতিযোগিতা তাদের কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম পদ্ধতি হলেও চূড়ান্ত লক্ষ্য সকলের মধ্যে সহযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তোলা।
তাদের মতে, এটি জনসচেতনতা ও নদী ভাবনা তৈরীর একটি প্রক্রিয়া, একই সাথে এটি তরুণদের মধ্যে নদী বিষয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার একটি সমন্বিত প্রয়াস।
স্টুডিও ও ভার্চুয়ালি হওয়া এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি এড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গ্রামের তরুণরা জানে নদী কিভাবে তাদের জীবনকে গড়ে তুলে, কিন্তু শহরের তরুণরা সেটা জানে না। তিনি বলেন, নদীগুলো বেঁচে থাকলে আপনি বেঁচে থাকবেন। কিন্তু নদী না থাকলে কিছুই থাকবে না।
তার মতে, আমাদের প্রাণ সম্ভাবনা মরে যাচ্ছে। আমাদের সেই সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমরা আমাদের প্রজন্মকে আমাদের মতো করে বলে গেছি। এখন পরবর্তী প্রজন্মকে জানাতে লড়াইটা জারি রাখতে হবে। তিনি প্রশ্ন তুলেন, আন্দোলন না করলে কী কিছু হতো?
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না। অপরিকল্পিত উন্নয়ন কখনও প্রকৃতিকে বাঁচাতে পারে না।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘ইয়ং রিভার চ্যাম্পিয়নশিপে’ তিনটি ধাপে প্রতিযোগিতা হবে। ধাপ গুলো হলো- ১. নিবন্ধ লেখা পর্ব, ২. কুইজ পর্ব ও ৩. নদী বিষয়ক উপস্থিত বক্তৃতা।
প্রতিযোগিতায় রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি
১. প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয স্তরের আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ‘ নদী ও জীবন’ বিষয়ে ৬০০ শব্দের মধ্যে একটি লেখা পাঠাতে হবে। সঙ্গে নিজের নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, শ্রেণী/বিষয়, বর্ষ, প্রিয় নদীর নাম, ইমেইল আইডি, মোবাইল নাম্বার ও যোগাযোগের পূর্ণ ঠিকানা [email protected] ইমেইলে ২ মে’র মধ্যে পাঠাতে হবে। ফাইলটি পিডিএফ ফরমেটে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
২. প্রতিযোগীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
৩. একজন শিক্ষার্থী একবারই পাঠাতে পারবেন।
বাছাই প্রক্রিয়া
১. নিবন্ধ মূল্যায়নের মাধ্যমে ৫০ জন নির্বাচন করা হবে। কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৫০ জন থেকে ২০ জন বাছাই করা হবে। নদী বিষয়ক উপস্থিত বক্তৃতার মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়সহ ১০ জনকে ‘রিভার ট্যালেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
২. এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া বাধ্যতামূলক।
৩. ঢাকায় নদী বিষয়ক সেমিনারের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।
পুরস্কার
প্রথম পুরস্কার : ৫০,০০০/- টাকা (৩৫,০০০/-টাকা শিক্ষাবৃত্তি ও ১৫,০০০/-টাকার বই)।
দ্বিতীয় পুরস্কার : ৩০,০০০/- টাকা (২০,০০০/-টাকা শিক্ষাবৃত্তি ও ১০,০০০/-টাকার বই)।
তৃতীয় পুরস্কার : ২০,০০০/- টাকা (১৫,০০০/-টাকা শিক্ষাবৃত্তি ও ৫,০০০/-টাকার বই)।
প্রথম ১০ জন ‘রিভার ট্যালেন্ট’ পাবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যবরেটরিতে দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ ও সনদ এবং হালদা নদী পরিদর্শন ট্রিপ।
নিবন্ধ মূল্যায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত ৫০ জন পাবেন বিশেষ উপহার নদী বিষয়ক বই ও সনদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।