অমিতাভ ভট্টশালী, বিবিসি বাংলা : ভারতের ব্যাঙ্গালোরে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী জনসভায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ায় এক ছাত্রীকে পুলিশ দেশদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ ভারতের শহর ব্যাঙ্গালোরের ওই ঘটনার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে। পুলিশ জানিয়েছে দেশদ্রোহের অভিযোগে অমূল্যা লিয়োনা নামের ওই ছাত্রীকে দুসপ্তাহ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা ইঙ্গিত দিয়েছেন ওই ছাত্রীটির সম্ভবত নকশালপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দেখা ও শোনা যাচ্ছে, ১৮ বছর বয়সী ওই ছাত্রী, অমূল্যা লিয়োনা ভাষণ দিতে উঠে প্রথমে কয়েকবার ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলেন। সেই সময়ে তার হাত থেকে মাইকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন আয়োজকরা এবং মঞ্চে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
মঞ্চেই ছিলেন ওই সভার স্টার বক্তা, কট্টরপন্থী বলে পরিচিত হায়দ্রাবাদের সংসদ সদস্য আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও। তিনিও ওই ছাত্রীকে থামাতে ছুটে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তাদেরও দেখা যাচ্ছে মিজ. লিয়োনাকে বাধা দিতে।
তবে অমূল্যা সবাইকে বলেন, “এক মিনিট দাঁড়ান। আমাকে বলতে দিন।” এরপরে তিনি আবারও ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলার পরেই ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেন কয়েকবার। ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানে গলা মেলাতে থাকেন সভায় হাজির কিছু মানুষ।
এইসময়ে তার হাত থেকে মাইক কেড়ে নিতে সমর্থ হন আয়োজকরা এবং পুলিশ তাকে টানতে থাকে। এবার মিজ. লিয়োনা খালি গলায় বলতে শুরু করেন যে কেন তিনি পাকিস্তান জিন্দাবাদ আর হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান একই সঙ্গে দিচ্ছিলেন। কিন্তু বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে মাইক ছাড়া তার কথা বিশেষ বোঝা যায়নি।
এরপরে তাকে পুলিশ টানতে টানতে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়।
ব্যাঙ্গালোরে বিবিসির সহযোগী সাংবাদিক ইমরান কুরেশি বলছিলেন, “অমূল্যা লিয়োনাকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পরে সংসদ সদস্য মি. ওয়াইসি জোরে জোরে ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকেন।
”তারপর মি. ওয়াইসি জানান যে মাগরিবের নামাজ পড়তে যখন মঞ্চের পিছন দিকে যাচ্ছিলাম, হঠাৎই শুনি ওই মেয়েটি স্লোগান দিচ্ছে। থাকতে না পেরে নামাজ না পড়েই আমি ছুটে আসি। ও যদি মেয়ে না হত, তাহলে যে আমি কী করে ফেলতাম জানি না। এখন বিজেপি একটা সুযোগ পেয়ে গেল। ওরা বলতে থাকবে ওয়াইসির জনসভায় এই স্লোগান দেওয়া হয়েছে,” জানান মি. কুরেশি।
তবে ওই ঘটনার কোনও প্রভাব দেশজুড়ে চলতে থাকা এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের ওপরে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করেন ৪৬ দিন ধরে ধর্নায় বসে থাকা কলকাতার পার্ক সার্কাসের আন্দোলনকারীরা।
ওই লাগাতার ধর্নার অন্যতম উদ্যোক্তা আসমাৎ জামিল বিবিসিকে বলছিলেন, “এরকম স্লোগান দেওয়াটা কখনই উচিত হয় নি। আমরা হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ বলছি – আর একই সঙ্গে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলব? আমাদের দেশের সঙ্গে একই স্বরে পাকিস্তানের সমর্থন! এটা কখনই উচিত হয় নি ওই মেয়েটির। তবে একজন বা দুজনের ভুলের প্রভাব আমাদের গোটা আন্দোলনের ওপরে পড়বে না, আমরা পড়তে দেবই না।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।