জুমবাংলা ডেস্ক: সারাদেশ থেকে দালালের মাধ্যমে সংগ্রহ করে এক হাজারেরও বেশি তরুণীকে দুবাইয়ে পাচার করে যৌনকর্মে বাধ্য করেছেন আজম খান (৪৫)। হোটেলে কাজ দেওয়ার কথা বলে এসব তরুণীকে পাচার করেছেন তিনি। তরুণীরা তার কথামতো না চললে তাদের ওপর নেমে আসত ভয়াবহ নির্যাতন। টর্চারসেলে আটকে রেখে দিনের পর দিন মারধর ও বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা আজম খানের দুবাইয়ে হোটেলের আড়ালে যৌন ব্যবসাই ছিল প্রধান। দুবাইয়ে তিনটি ফোরস্টার ও একটি থ্রিস্টার হোটেলের মালিক তিনি। হোটেলে বেশি বেতনে চাকরির প্রলোভনে তার নিয়োগকৃত অর্ধশতাধিক দালাল ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী মেয়েদের বাংলাদেশ থেকে দুবাইয়ে পাচার করত। এসব অভিযোগেই আজম খান ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল রবিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তার অপর দু’জন হলেন আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড (৩৪) ও আনোয়ার হোসেন ওরফে ময়না (৩০)। আজম খানের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। দুবাইয়ে তার সঙ্গে দুই ভাইও যুক্ত আছেন। এ ছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের চক্রও যুক্ত রয়েছে তার সঙ্গে। আজমের বিরুদ্ধে দেশে ছয়টি হত্যা মামলাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। আট বছর ধরে আজম খান নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত। এ সময়ের মধ্যে সহস্রাধিক তরুণী তার ফাঁদে পা দিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, আজম খানের মালিকানাধীন হোটেলগুলো হলো- ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল ফরচুন গ্র্যান্ড, হোটেল রয়েল ফরচুন ও হোটেল সিটি টাওয়ার। সম্প্রতি আজম খানের নারী পাচার ও যৌন ব্যবসার বিষয়ে জেনে যায় দুবাই পুলিশ। তারা বিষয়টি সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায়। একই সঙ্গে তার পাসপোর্ট বাতিল করে দুবাই কর্তৃপক্ষ। এরপর একটি এক্সিট পাস নিয়ে আজম খান দেশে চলে এসে আত্মগোপনে চলে যান। দেশে ফেরার পর তাকে ধরতে অভিযান শুরু করে সিআইডি। গোপনে একটি পাসপোর্ট তৈরি করেন এবং পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার মধ্যেই দুই সহযোগীসহ আজম খানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
সিআইডি বাদী হয়ে আজম খানের বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই লালবাগ থানায় মামলা করে। পাচারের পর দেশে ফিরে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন।
ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আজম খান নারী পাচারকারী চক্রের গডফাদার। দুবাইয়ে চারটি তারকাবহুল হোটেল রয়েছে তার। দেশে রয়েছে অর্ধশতাধিক দালাল, যারা সারাদেশ থেকে ২০-২২ বছর বয়সী মেয়েদের সংগ্রহ করত। মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনের কথা বলে আজম খানের হোটেলে চাকরির জন্য প্রলুব্ধ করা হতো তাদের। মেয়েদের কাছ থেকে দুবাই যাওয়ার জন্য কোনো টাকা নেওয়া হতো না। উল্টো দেশে থাকতেই বেতনের অগ্রিম হিসেবে ২০-৩০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। নির্ধারিত কিছু বিমানের মাধ্যমে তাদের দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে প্রথমে হোটেলের ছোটখাটো কাজে লাগানো হতো তাদের। কিছুদিন না যেতেই ড্যান্সবারে নাচতে বাধ্য করা হতো। একপর্যায়ে যৌন ব্যবসা করানো হতো তাদের দিয়ে। রাজি না হলে আটকে রেখে বৈদ্যুতিক শকসহ নানা নির্যাতন চলত মেয়েদের ওপর। খেতে দেওয়া হতো না। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মেয়েরা বাধ্য হতো পাচারকারীদের কথামতো কাজ করতে।
অভিযোগ রয়েছে, নারী পাচারের কাজে আজম খানকে সহযোগিতা করেছে একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি ও বিদেশি কিছু বিমান সংস্থা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।