জুমবাংলা ডেস্ক : নারী সাতারু প্রশিক্ষকদের পিরিয়ডকালীন সময়ে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। পিরিয়ডকালীন সময়ে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করলে নারী প্রশিক্ষকরা সাঁতার প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারবেন। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তা নিয়ে গবেষণা করছে সিআইপিআরবি।
সোমবার (২৭ মে) সকাল ১০টায় সিআইপিআরবির আয়োজনে বাংলাদেশ সিরডাপ মিলনায়তনে ‘কমিউনিটি নারী সাঁতার প্রশিক্ষকদের পিরিয়ডকালে সাঁতার প্রশিক্ষণ কাজ সচল রাখার জন্য মেন্সট্রুয়াল কাপের গ্রহণযোগ্যতা ও উপযোগিতা নিয়ে গবেষণা উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড মেন্সট্রুয়াল কাপ ট্রেইনারের কম্যুনিকেশন ম্যানেজার নাহিদ আখতার ও উপ কম্যুনিকেশন ম্যানেজার ফারহানা ফেরদৌস।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জরিপে দেখা গেছে, ৭০ জনের মধ্যে ৬৪ জনই (৯১ দশমিক ৪ শতাংশ) সফলভাবে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করতে পেরেছেন। এর ফলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পানিতে নেমে সাঁতার শিখিয়েছেন। ৬ জন প্রশিক্ষক অনিয়মিত মাসিক, গর্ভধারণ ইত্যাদি কারণে কাপ ব্যবহার করার সুযোগ পাননি। কিন্তু সকলেই মেন্সট্রুয়াল কাপকে পছন্দ করেছেন। ব্যবহারকারীদের ৬৪ জনের মধ্যে মধ্যে ৬৩ জন মেন্সট্রুয়াল কাপের ব্যবহার অব্যাহত রাখবেন বলেছেন। ৬৪ জনই তাদের পরিচিত সকল নারীকে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের স্বস্তি ও উপকারের কথা জানিয়েছেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যায় ৪০ জন শিশু। এ মৃত্যু রোধে ২০১৬ সাল থেকে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ও বরগুনা জেলার তালতলী ও বেতাগী উপজেলায় ‘প্রজেক্ট ভাসা’ বাস্তবায়ন করছে সিআইপিআরবি ও রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন (আরএনএলআই)। এই প্রকল্পের আওতায় ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০২২ সালে প্রশিক্ষণের কাজে নিযুক্ত কমিউনিটি সাঁতার প্রশিক্ষকদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই ছিলেন নারী। তাদের কাজে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল পিরিয়ড চলাকালে পানিতে নামা। এ সময়ে তারা কমপক্ষে দু’দিন সাঁতার শেখানো থেকে বিরত থেকেছেন যাতে প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা থেকে প্রতি মাসে বাদ পড়েছিল ৯২ দিনের কর্মহীনতা। এসময়ে প্রায় ৬০০ শিশুকে সাঁতার শেখানো সম্ভব ছিল।
২০২৩ সালে সাঁতার প্রশিক্ষক হিসাবে প্রজেক্ট ভাষায় যুক্ত হন ৮১ জন নারী যাদের বয়স ১৮-৪০ এর মধ্যে। মৌসুমের শুরুতে তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে পিরিয়ড ব্যবস্থাপনা ও মিনিস্ট্রুরাল কাপ পরিধান-পরিষ্কার-খোলা ও সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের প্রত্যেককে মেন্সট্রুয়াল কাপ, জীবাণুমুক্তকরণ পাত্র ও ব্যবহারের নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে ৭০ জন মৌসুমের শেষ পর্যন্ত কাজ করেছেন। বাকি ১১ জন বিয়ে, অন্য চাকরিতে যোগদান ইত্যাদি কারণে প্রকল্প থেকে অব্যহতি নিয়েছেন।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা কম্যুউনিটি মেডিকেল কলেজের অবস অ্যান্ড গাইনী বিভাগের অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম, সিআইপিআরবি’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হালিম, সুইমিং ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা সহকারী পরিচালক নিবেদিতা দাস।
স্বাগত বক্তব্য দেন সিআইপিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুর রহমান। সমাপনী বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল ড্রয়িং প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের পরিচালক ড. আমিনুর রহমান।
অধ্যাপক ডা. এম এ হালিম বলেন, নেপালে স্কুলের শিক্ষার্থীরা মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করছে অনেক আগে থেকেই। বাংলাদেশে সাঁতার প্রশিক্ষণ ও পিরিয়ড ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নীতিমালা তৈরিতে এটি প্রথম ও অনন্য উদাহরণ। সাঁতারের পাশাপাশি অন্যান্য খেলায় যে নারীরা আছেন কিংবা বাংলাদেশের প্রজনন বয়সসীমায় থাকা নারীদের কাছে এই মেন্সট্রুয়াল কাপ কতটা গ্রহণযোগ্য আর উপযোগী, তা গবেষণা করে দেখা যেতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সালেহা বিনতে সিরাজ বলেন, নারীদের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পিরিয়ডকালীন সময়ে কিশোরী-নারীকে স্বাচ্ছন্দ্যময় এলাকা দিতে হবে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরকে প্রস্তাব দিলে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।
সুপারিশে বলা হয়, স্যানিটারি প্যাডের চেয়ে মেন্সট্রুয়াল কাপ অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। কেননা, একটা মেন্সট্রুয়াল কাপ ৫ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত পুন:ব্যবহার করা যায়। যাতে নারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। অপরদিকে পিরিয়ডকালীন অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।