জুমবাংলা ডেস্ক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকের হাতে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানির কাছে এ প্রতিবেদন দেয়া হয়।
এদিকে নার্সের যৌন হয়রানির ঘটনা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের কাছে গোপন করার কারণে সংশ্লিষ্ট চার কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা দিতে ডাকা হলেও তারা না যাওয়ায় তাদের শোকজ করা হয়েছে। এতে ওই চার কর্মকর্তাকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ ব্যাপারে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শৃঙ্খলা) শোভা শাহানাজ গত সোমবার তাদের শোকজ করেছেন।
যাদের শোকজ করা হয়েছে তারা হলেন- বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (নার্সিং) ডা. রুমানা জামান (দায়িত্বপ্রাপ্ত), জেলা পাবলিক হেলথ নার্স ফ্রান্সিসকা সরেন, রামেক হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ারা খাতুন এবং উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক সুফিয়া খাতুন।
রামেক হাসপাতালে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) গত ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি মামুন-অর-রহমান নামে এক চিকিৎসকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। নিয়মানুযায়ী এই চার কর্মকর্তা বিষয়টি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে জানাবেন। কিন্তু তারা অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানাননি। গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে এ ব্যাপারে অবহিত হয় অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরকে কেন গোপন করা হলো সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে এই চার কর্মকর্তাকে ২ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরে ডাকা হয়েছিল। ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদনসহ তাদের অধিদপ্তরে হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু এই কর্মকর্তারা ঘটনার তদন্তও করেননি, অধিদপ্তরেও যাননি। এর ব্যাখ্যা দিতে তাদের শোকজ করা হয়েছে।
শোকজের চিঠিতে বলা হয়েছে- কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য চাকরিবিধির পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা সাত কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মামুন-অর-রহমান সরকারি হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক নন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়া ডিপ্লোমা করছেন। সেখান থেকেই কোর্স সম্পন্ন করতে আসেন রামেক হাসপাতালে। ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করা ডা. মামুন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। ছুটি নিয়ে তিনি অ্যানেসথেসিয়া কোর্স করছেন। এখানে এসে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি পরপর দুই দিন একজন নার্সকে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
ঘটনা জানাজানি হলে ২০ জানুয়ারি ডা. মামুনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. হাবিবুল্লাহ সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেননি। পরে ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করেন।
এরই মধ্যে নার্সরা অভিযোগ তোলেন তদন্ত কমিটি ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতালের ব্যানারে তারা বিক্ষোভ করেন। কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচিও পালন করেন।
অবশেষে মঙ্গলবার এ তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটির প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ সরকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে তা তিনি জানাতে চাননি।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীও বিষয়টি জানাতে চাননি। তিনি বলেন, প্রতিবেদন পেয়েছি। দ্রুতই আমরা বসব। একটা সিদ্ধান্ত দেব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।