আবু হাসান শেখ, কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)প্রতিনিধি: হোল্ডিং ট্যাক্স’র নামে টাকা আদায়, সঞ্চয়ের কথা বলে টাকা গ্রহণ করে পকেটস্থ করার নতুন নতুন কৌশল বের করেছে এক ইউপি চেয়ারম্যান। এবার ভিজিডি’র উপকারভোগীদের কার্ড ও চাল বিতরণের সময় সঞ্চয়ের নাম করে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ৭ শ’ টাকা পকেটস্থ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। কৌশল অবলম্বন করে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়কৃত চেয়ারম্যান হলেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোত্তাকিনুর রহমান আবু।
জানা যায়- দুস্থ-অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির ভিজিডির আওতায় ২০২৩-২৪ চক্রে ওই ইউনিয়নে ৩ শ’ ৫১ জন সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়।
উপকারভোগী বাছাই শেষে আজ সোমবার (২০ মার্চ) ওই ইউনিয়নের মুশরুত পানিয়ালপুকুর সাব-সেন্টারে কার্ড ও চাল বিতরণ শুরু করে। এসময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের নাম করে ৭ শ’ টাকা করে নেয়া হয়। এ টাকা নেয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে বিতরণস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পায় সাংবাদিকরা। ওই সাব-সেন্টারের কাছে একটি দোকানের সামনে চেয়ার-টেবিলে বসে তালিকার নামধারীদের কাছ থেকে নগদ ৭ শ’ টাকা জনপ্রতি নিচ্ছে ওই ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা আবু তাহের ও চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ইলিয়াছ হোসেন। টাকা নেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান- উপকারভোগীদের সঞ্চয়ের টাকা নেয়া হচ্ছে। এসময় তারা দ্রুত চেয়ার-টেবিল থেকে উঠে সেখান থেকে সটকে পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ভিজিডি উপকারভোগীদের সঞ্চয় নেয়ার জন্য এনজিও নিয়োগ করা হবে। পরবর্তীতে এনজিও’র কর্মীরা প্রতিটি উপকারভোগীর একাউন্ট খুলবেন এবং তারা মাস প্রতি ২ শ’ টাকা সঞ্চয় নিয়ে একাউন্টে জমা করবেন। এনজিও নিয়োগের আগে চেয়ারম্যানগণদের সঞ্চয়ের টাকা না নেয়ার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশ না মেনে ওই চেয়ারম্যান তার লোক দিয়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের কথা বলে ৭ শ’ টাকা করে নিয়ে পকেটস্থ করার কৌশল গ্রহণ করেছে।
এনজিও নিয়োগের আগে উপকারভোগীদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের টাকা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও ওই ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্চয়ের টাকা আদায় করেছেন। তিনি সরকারি নিদের্শনা অমান্য করে এর আগেও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের কাছে কার্ড দেয়ার সময় হোল্ডিং ট্যাক্সের কথা বলে জনপ্রতি ৫ শ’ টাকা গ্রহণ করেছিল। প্রশাসনের চাপে তা উপকারভোগীদের ফেরৎ দিতে বাধ্য হন।
উপকারভোগী সুমি আক্তার, পেয়ারী বেগম, নীলুফা, সাজেনা বেগম জানান- আমরা সঞ্চয়ের ৭ শ’ টাকা করে দিয়েছি। আমাদের কার্ড দেয়ার সময় এ টাকা নিয়েছে।
নিতাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোত্তাকিনুর রহমান আবু’র কাছে উপকারভোগীদের নিকট থেকে ৭ শ’ টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান- উপকারভোগীদের সঞ্চয় হিসেবে এ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসময় ব্যস্ত আছি পড়ে কথা হবে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সাবিকুন্নাহার মুঠোফোনে জানান- আমরা চেয়ারম্যানদের উপকারভোগীদের সঞ্চয় না নেয়ার জন্য বলেছি। উপকারভোগীদের সঞ্চয় নেয়ার জন্য এনজিও নিয়োগ করা হলে তারা উপকারভোগীদের একাউন্ট খুলে সঞ্চয় গ্রহণ করবেন এবং তা একাউন্টে জমা করবেন।
এনজিও নিয়োগের আগে ভিজিডির কার্ড ও চাল বিতরণের সময় চেয়ারম্যানরা তাদের লোক দিয়ে সঞ্চয়ের নামে টাকা গ্রহণ করে তা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল কি না এমন প্রশ্ন করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান- ভিজিডি উপকারভোগীদের সঞ্চয়ের টাকা না নেয়ার জন্য চেয়ারম্যানগণদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। এনজিও নিয়োগ করার পর তারাই সঞ্চয় গ্রহণ ও জমা করবেন। এর আগে যদি কোন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সঞ্চয়ের নামে টাকা গ্রহণ করে তা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল হতে পারে।
উল্লেখ্য যে, এর আগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের নতুন করে কার্ড বিতরণ করার সময় হোল্ডিং ট্যাক্সের কথা বলে ওই ইউপি চেয়ারম্যান উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৫ শ’ টাকা করে নিয়েছিল। উপজেলা প্রশাসন অবগত হলে তা ফেরত দিতে বাধ্য হন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।