Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা:জীবন বদলে দিন!
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    লাইফস্টাইল

    নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা:জীবন বদলে দিন!

    লাইফস্টাইল ডেস্কMd EliasJuly 10, 202514 Mins Read
    Advertisement

    সকাল সাতটা। ঢাকার গুলশানের একটি ছাদবাগান। কুয়াশার আভা ভেদ করে সূর্যের প্রথম আলো গায়ে মাখতে মাখতে একদল মানুষ নিঃশব্দে শ্বাস নিচ্ছেন, ছাড়ছেন। তাদের একজন রুমানা আক্তার, ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মাত্র এক বছর আগেও তার দিন শুরু হত অ্যাংজাইটি পিল খেয়ে, অফিসের চাপের ইমেইল চেক করে, আর বাচ্চাদের স্কুলের জন্য তাড়াহুড়ো করে। আজ? তার চোখেমুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, শরীরে অবিশ্বাস্য হালকাভাব। “এটা শুধু ব্যায়াম না,” রুমানা হেসে বলেন, “একটা ম্যাজিক। নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা না বুঝে জীবনটাই অসম্পূর্ণ ছিল। এটা আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।” তার মতো হাজারো বাংলাদেশি – ব্যস্ত পেশাজীবী, গৃহিণী, এমনকি স্কুলপড়ুয়া – প্রতিদিন ম্যাট বিছিয়ে, শ্বাসের সুরে শরীর-মনকে নতুন করে আবিষ্কার করছেন। তারা উপলব্ধি করছেন, এই প্রাচীন সাধনাই আধুনিক জীবনের জটিলতায় হারিয়ে যাওয়া ভারসাম্য ফিরিয়ে দিতে পারে, এক কথায়, জীবন বদলে দিতে পারে।

    নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা

    এই পরিবর্তন শুধু ঢাকা-চট্টগ্রামের শহুরে জীবনের গল্প নয়। খুলনার এক প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেকও তার পিঠের যন্ত্রণা ভুলে গেছেন যোগাসন ও প্রাণায়ামের নিয়মিত চর্চায়। সিলেটের এক কলেজছাত্রী সামিয়া, পরীক্ষার চাপে ভেঙে পড়তেন, এখন ধ্যানের মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছেন মনোযোগের নতুন শক্তি। নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা শারীরিক সীমানা পেরিয়ে গভীরভাবে প্রোথিত মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্তরে। এটি কোনো ফ্যাশন বা ক্ষণস্থায়ী ট্রেন্ড নয়; এটি প্রমাণিত এক জীবনদর্শন, যার শিকড় প্রোথিত হাজার বছরের প্রজ্ঞায়, আর ফলাফল টাটকা, প্রতিদিনের জীবনে অনুভবযোগ্য। চলুন, ডুব দেই এই পরিবর্তনের স্রোতে, বুঝে নিই কেন এবং কীভাবে নিয়মিত যোগচর্চা আপনার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়কে উজ্জ্বল করে তুলতে পারে।


    নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা: শারীরিক সুস্থতার অমূল্য ভান্ডার

    নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা বলতে গেলে প্রথমেই চোখে পড়ে এর বিস্ময়কর শারীরিক প্রভাব। শুধু কয়েকটি ভঙ্গি বা শ্বাসের ব্যায়াম নয়, যোগ হলো শরীরের প্রতিটি কোষ, প্রতিটি সিস্টেমকে সচল, সক্রিয় ও সুসংহত করার এক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। শহুরে জীবনের নিত্যসঙ্গী সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং ক্রমবর্ধমান দূষণ আমাদের দেহকে অকালেই জীর্ণ করে দিচ্ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, জয়েন্টের ব্যথা – এগুলো এখন ঘরোয়া নাম। কিন্তু নিয়মিত যোগচর্চা এই মহামারীর বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।

    • হৃদপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালনের জন্য সুসংবাদ: যোগাসনের বিভিন্ন ভঙ্গি (যেমন: ত্রিকোণাসন, অধোমুখশ্বানাসন, ভুজঙ্গাসন) এবং বিশেষ করে প্রাণায়াম (অনুলোম-বিলোম, কপালভাতি) সরাসরি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যোগব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদস্পন্দনের হার কমায়, এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা হ্রাস করে ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়ায়। এটা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা নিয়মিত যোগ চর্চা করে হার্টের স্বাস্থ্যে ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে পেরেছেন।
    • স্থিতিস্থাপকতা, শক্তি ও ভারসাম্যের নতুন সংজ্ঞা: যোগাসনের ভঙ্গিগুলো পেশি, টেন্ডন ও লিগামেন্টকে ধীরে ধীরে প্রসারিত ও শক্তিশালী করে। সূর্য নমস্কারের মতো ধারাবাহিক ক্রম (sequence) সমগ্র শরীরের পেশিতে শক্তি ও সহনশীলতা বাড়ায়। ভ্রমরাসন (Tree Pose) বা একপাদ রাজকপোতাসন (Pigeon Pose)-এর মতো ভারসাম্যবাচক আসনগুলি স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখে, ফোকাস বাড়ায় এবং বয়সজনিত ভারসাম্যহীনতা রোধ করে। ঢাকার ফিজিওথেরাপিস্ট ডা. তাহমিদা ইসলাম বলেন, “অনেকেই শুধু জিমে ওয়েট ট্রেনিংকে শক্তির একমাত্র উৎস ভাবেন। কিন্তু নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা হলো এটি কার্যকরী শক্তি (functional strength) ও গভীর পেশির (core strength) উন্নতি ঘটায়, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে, এমনকি অন্যান্য খেলাধুলায়ও পারফরম্যান্স বাড়ায় এবং আঘাতের ঝুঁকি কমায়।
    • দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থেকে মুক্তি: পিঠব্যথা, ঘাড়ব্যথা, আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণা – এগুলো অনেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। যোগব্যায়ামের নির্দিষ্ট আসন (যেমন: মার্জারাসন-বিটিলাসন, ভুজঙ্গাসন, পশ্চিমোত্তানাসন) মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়ায়, পেশির স্পাজম দূর করে, জয়েন্টে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথা ও জড়তা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত যোগব্যায়াম শরীরের নিজস্ব ব্যথানাশক ব্যবস্থাকেও সক্রিয় করে। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা সপ্তাহে ৩-৪ দিন যোগ করেন, তাদের দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথায় ওষুধের উপর নির্ভরতা প্রায় ৬০% কমে যায়।
    • পাচনতন্ত্রের উন্নতি ও ওজন নিয়ন্ত্রণ: টুইস্টিং পোজ (যেমন: অর্ধ মৎস্যেন্দ্রাসন) পেটের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে ম্যাসাজ করে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। সক্রিয় যোগচর্চা (যেমন: সূর্য নমস্কার, ভিনিয়াসা ফ্লো) ক্যালোরি বার্ন করে এবং বিপাকক্রিয়া বাড়ায়। নিয়মিত যোগব্যায়ামের একটি গভীর প্রভাব হলো এটি স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমায়, যা পেটের চর্বি জমার অন্যতম কারণ। এটা খাদ্যাভ্যাসের প্রতি সচেতনতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করে। চট্টগ্রামের একজন পুষ্টিবিদ ফারহানা আহমেদ উল্লেখ করেন, “অনেক ক্লায়েন্ট দেখেছি যারা যোগ শুরু করার পর স্বাভাবিকভাবেই জাঙ্ক ফুডের প্রতি আকর্ষণ কমিয়ে ফেলেছেন, কারণ যোগ তাদের শরীরের প্রকৃত চাহিদা বুঝতে শেখায়।”
    • শ্বাস-প্রশ্বাসের সক্ষমতা বৃদ্ধি: যোগের প্রাণভোমরা হল প্রাণায়াম – শ্বাসের বিজ্ঞানসম্মত নিয়ন্ত্রণ। গভীর, পূর্ণাঙ্গ শ্বাস নেওয়া শেখা ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা উন্নত করে এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস) উপশমে সাহায্য করে। নিয়মিত যোগব্যায়ামের মাধ্যমে শ্বাসের সাথে শরীর-মনের সংযোগ গভীরতর হয়, যা সামগ্রিক সুস্থতার চাবিকাঠি।

    শারীরিক স্তরে নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা তাই শুধু রোগ প্রতিরোধ বা উপশমেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি দেহকে আরও দক্ষ, নমনীয়, শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত করে তোলে, প্রতিদিনের কাজে এনে দেয় নতুন উদ্যম ও স্বাচ্ছন্দ্য। এটি দেহকে একটি মসৃণ চলমান যন্ত্রে পরিণত করে, যার প্রতিটি অংশ সুরেলা ভাবে কাজ করে। কিন্তু যোগের জাদু শারীরিক সুস্থতার গণ্ডি পেরিয়ে আরও গভীরে প্রবেশ করে…


    মানসিক শান্তি ও আবেগিক ভারসাম্য: যোগব্যায়ামের অদৃশ্য শক্তি

    আমাদের দ্রুতগতির, প্রতিযোগিতামূলক জীবনে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অবসাদ, ঘুমের সমস্যা যেন নিত্যসঙ্গী। এগুলো শুধু মনকে ভারাক্রান্তই করে না, সরাসরি শারীরিক অসুস্থতারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এখানেই নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছায়। যোগব্যায়াম কেবল শরীরের ব্যায়াম নয়; এটি মনের প্রশিক্ষণ, আবেগের শৃঙ্খলা এবং চেতনার প্রসারণ।

    • চাপ ও উদ্বেগের বিরুদ্ধে প্রকৃত অস্ত্র: যখন আমরা চাপে থাকি, আমাদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম (যুদ্ধ বা পলায়নের প্রতিক্রিয়া) সক্রিয় হয়, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বাড়ে। যোগব্যায়াম, বিশেষ করে ধ্যান (ধ্যানা) এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম (প্রাণায়াম), প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে। এটি শরীরকে শিথিল করে, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক করে, এবং কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমায়। নিয়মিত যোগব্যায়াম এই স্ট্রেস রেসপন্স সিস্টেমকে রিসেট করতে সাহায্য করে, ফলে ছোটখাটো চাপেও আমরা আগের মতো অতটা বিচলিত হই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাহসিনা রহমানের মতে, “মাইন্ডফুলনেস-ভিত্তিক যোগ অনুশীলনকারীরা খুব দ্রুত বুঝতে পারেন কখন তাদের উদ্বেগ বাড়ছে এবং শ্বাসের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের কৌশল আয়ত্ত করতে পারেন। এটি দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত কার্যকর।”
    • মেজাজ উন্নয়ন ও বিষণ্ণতার উপশম: যোগব্যায়াম মস্তিষ্কে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং এন্ডোরফিনের মতো ‘ফিল-গুড’ নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। এই রাসায়নিকগুলি প্রাকৃতিকভাবেই মেজাজ উন্নত করে, সুখানুভূতি বাড়ায় এবং বিষণ্ণতার লক্ষণগুলি উপশম করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যোগব্যায়াম বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মৃদু থেকে মাঝারি বিষণ্ণতায় চিকিৎসার বিকল্প হিসেবেও কাজ করতে পারে। এটি হতাশার চক্র ভেঙে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
    • ঘুমের গুণগত মানের বিপ্লব: যারা অনিদ্রা বা খারাপ ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য যোগব্যায়াম এক আশীর্বাদ স্বরূপ। সন্ধ্যায় হালকা ইয়িন যোগ বা শিথিলায়ন (যেমন: শবাসন) শরীর-মনকে গভীরভাবে শান্ত করে। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে দিনের জমানো চাপ ও চিন্তা ঝেড়ে ফেলে গভীর, পুনরুদ্ধারমূলক ঘুমে সহায়তা করে। নিয়মিত যোগব্যায়ামের ফলে ঘুমের সময়কাল বাড়ার পাশাপাশি ঘুমের গুণগত মানও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। রাজশাহীর একজন স্কুলশিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, “গত পাঁচ বছর ধরে রাতে ঠিক মতো ঘুম হতো না। ডাক্তারের পরামর্শে যোগ শুরু করেছি তিন মাস আগে। এখন সপ্তাহে ৪-৫ দিন যোগ করার পর শবাসনে শুয়ে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে পড়ি, আর সকালে উঠে শরীর-মন একদম ফুরফুরে লাগে।”
    • মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও সৃজনশীলতার উন্মেষ: যোগব্যায়াম ও ধ্যান মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের কার্যকারিতা বাড়ায় – এটি মস্তিষ্কের সেই অংশ যা ফোকাস, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। নিয়মিত যোগব্যায়াম মাইন্ড-ওয়ান্ডারিং কমিয়ে বর্তমান মুহূর্তে থাকার (mindfulness) ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে পড়াশোনা, কাজ বা যেকোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়, স্মৃতিশক্তি প্রখর হয় এবং সৃজনশীল চিন্তার উৎস খুলে যায়। খুলনার একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম রহমান তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, “কোডিং-এর সময় আগে মাথায় চাপা চাপা লাগত, সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে হতাশ হতাম। এখন প্রতিদিন সকালে মাত্র ২০ মিনিট যোগ ও ধ্যানের পর কাজে বসলে ফোকাস একদম শার্প হয়, নতুন আইডিয়াও আসে সহজে।
    • আত্ম-সচেতনতা ও আবেগিক স্থিতিস্থাপকতা: যোগব্যায়াম আমাদের শেখায় নিজের শরীরের সংকেত, আবেগের ঢেউ এবং চিন্তার ধারাকে অবিচারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে। শারীরিক আসন ধরে রাখার সময় অস্বস্তি বা ধ্যানের সময় মনের উৎকণ্ঠাকে শান্তভাবে দেখার অভ্যাস গড়ে তোলে। এই নিয়মিত যোগব্যায়ামের অভ্যাস জীবনের উত্থান-পতনের মধ্যেও আবেগিক স্থিতিস্থাপকতা (emotional resilience) গড়ে তোলে। আমরা আবেগ দ্বারা অতটা আক্রান্ত না হয়ে, তা বুঝে, মেনে নিয়ে এবং স্বাস্থ্যকরভাবে প্রকাশ করতে শিখি। এটি সম্পর্কের গুণগত মানও বাড়ায়।

    মানসিক ও আবেগিক স্তরে নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা তাই এক ধরনের অন্তর্দৃষ্টি ও শক্তি প্রদান করে, যা আমাদেরকে জীবনের ঝড়েও অটুট থাকতে, নিজের প্রতি ও অপরের প্রতি করুণাশীল হতে এবং অভ্যন্তরীণ এক অটুট শান্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এই অভ্যন্তরীণ শান্তিই বাহ্যিক জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আসল ভিত্তি। কিন্তু এই প্রাচীন বিদ্যাকে আধুনিক ব্যস্ত জীবনে কীভাবে খাপ খাওয়াবো?


    আধুনিক জীবনে যোগব্যায়াম: চ্যালেঞ্জ ও বিজয়ী হওয়ার কৌশল

    “আমি যোগ করতে চাই, কিন্তু সময় কোথায়?” – এই আক্ষেপটি প্রায় সকলের। ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম, অফিসের ডেডলাইন, সংসার ও সন্তানের দায়িত্ব – এর মধ্যেও নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা পাওয়ার জন্য সময় বের করা কি আদৌ সম্ভব? উত্তরটি হ্যাঁ, তবে কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল ও মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।

    • সময় বের করা: গুণগত সময়ের জাদু: দিনে এক ঘন্টা যোগের ক্লাসের কথা ভাবলেই হয়তো হতাশা আসে। কিন্তু নিয়মিত যোগব্যায়ামের জন্য প্রতিদিন দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই। শুরুতে মাত্র ১৫-২০ মিনিটও যথেষ্ট। সকালে ঘুম থেকে ১৫ মিনিট আগে উঠে, বা রাতে শোবার আগে ১৫ মিনিট ব্যয় করুন। দুপুরের খাবারের বিরতিতে অফিসের শান্ত কোণে কিছু স্ট্রেচিং বা শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। সপ্তাহান্তে একটু বেশি সময় দিন। মনে রাখবেন, গুণগত ১৫ মিনিট নিয়মিত চর্চা, অনিয়মিত দীর্ঘ সেশনের চেয়ে ঢের ভালো ফল দেয়। সিলেটের একজন কর্মব্যস্ত মা সাবরিনা সুলতানা বলেন, “আমি সকালে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর পর, নাস্তা করার আগের ২০ মিনিটটাই আমার যোগের সময় বানিয়েছি। মোবাইল ফোন বিছানার বাইরে রেখে দেই। এই ছোট্ট সময়টাই পুরো দিনের এনার্জি লেভেল ঠিক রাখে।”
    • স্থান ও উপকরণ: সহজলভ্যতার শক্তি: অনেকের ধারণা যোগ করতে হলে দামি ম্যাট, বিশেষ পোশাক বা বড় স্টুডিও দরকার। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনার শোবার ঘরের ফাঁকা জায়গা, বারান্দা, ছাদ – যেকোনো পরিষ্কার, শান্ত স্থানই যোগশালা হতে পারে। একটি কম্বল বা তোয়ালেও ম্যাটের কাজ করবে। আরামদায়ক পোশাক (যেমন: পাজামা-পাঞ্জাবি, ট্র্যাকস্যুট) যথেষ্ট। নিয়মিত যোগব্যায়ামের মূল উপকরণ হলো আপনার শরীর, মন এবং একটু ইচ্ছাশক্তি। ইন্টারনেটে এখন অসংখ্য বাংলা ভাষায় যোগের ভিডিও টিউটোরিয়াল (Yoga with Adriene, DoYogaWithMe বা দেশীয় চ্যানেলগুলোতে) পাওয়া যায়, যা ঘরে বসে অনুশীলনের জন্য দারুণ সহায়ক। [বাংলাদেশে যোগের জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের উদাহরণ হিসেবে ‘যোগ বাংলাদেশ’ বা ‘ঢাকা যোগ সেন্টার’-এর ইউটিউব চ্যানেলের দিকে ইঙ্গিত করা যায়]।
    • শুরু করার উপায়: ছোট্ট পদক্ষেপ, বড় সাফল্য: একেবারে জটিল আসনে যাবার দরকার নেই। শুরু করুন সহজ শ্বাসের ব্যায়াম (প্রাণায়াম) এবং মৌলিক শিথিলায়ন (শবাসন, শিশু আসন) দিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে কয়েকটি মৌলিক সূর্য নমস্কার বা টাডাসন (পর্বতাসন), মার্জারাসন-বিটিলাসন (বি-ক্যাট পোজ), আদোমুখশ্বানাসন (ডাউনওয়ার্ড ডগ) যোগ করুন। নিজের শরীরের সীমা বুঝুন, জোর করবেন না। নিয়মিত যোগব্যায়ামের সৌন্দর্য্য হলো এতে প্রতিযোগিতা নেই, নিজের সাথে নিজের যাত্রা আছে। সপ্তাহে ৩ দিন নিয়মিত শুরু করাই বড় অর্জন।
    • সামাজিকতা ও গাইডেন্স: একা অনুশীলনে সমস্যা হলে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের সাথে জোট বাঁধুন। স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার, পার্ক বা যোগ স্টুডিওতে গিয়ে ক্লাসে যোগ দিলে শেখার পাশাপাশি অনুপ্রেরণাও মিলবে। বাংলাদেশে এখন প্রায় সব জেলা শহরেই যোগ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। একজন যোগ্য প্রশিক্ষকের (যিনি শারীরিক সীমাবদ্ধতা বুঝেন) কাছে শিখলে ভুল হওয়ার ভয় কমে, আত্মবিশ্বাস বাড়ে। বরিশালের একজন স্টুডিও মালিক ও প্রশিক্ষক শামীম আহমেদ বলেন, “অনেকেই ভয় পেয়ে আসেন, ‘আমি পারবো তো?’ বলে। আসলে যোগ সবার জন্য। একজন ভালো ট্রেইনার প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা বুঝে, প্রেগন্যান্সি, বাতের ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ – যেকোনো অবস্থায় উপযোগী ভ্যারিয়েশন শেখাতে পারেন।”
    • মানসিক বাধা কাটানো: ‘আমি যথেষ্ট নমনীয় নই’, ‘বয়স হয়েছে’, ‘লজ্জা লাগে’ – এ ধরনের নেতিবাচক চিন্তা দূর করুন। যোগব্যায়ামের মূল লক্ষ্য নিখুঁত ভঙ্গি করা নয়, নিজের শরীর-মনকে অনুভব করা এবং সাধ্যমত চেষ্টা করা। নিয়মিত যোগব্যায়ামের পথে ধৈর্য্য ও নিজের প্রতি সদয় হওয়া (self-compassion) সবচেয়ে বড় সোপান।

    ব্যস্ততা বা সংকীর্ণ ধারণা নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা পাওয়ার পথে বাধা হতে পারে না, যদি থাকে দৃঢ় ইচ্ছা ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা। এটি কোনো বিলাসিতা নয়; বরং আধুনিক জীবনের অপরিহার্য স্বাস্থ্যবিমা। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা কি শুধু ব্যক্তিগত অনুভূতি, নাকি এর পেছনে আছে বিজ্ঞানের সমর্থন?


    যোগব্যায়ামের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি: গবেষণা কী বলে?

    অনেকের কাছেই যোগব্যায়াম একটি প্রাচীন আধ্যাত্মিক প্রথা, যার সুফল বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত কয়েক দশকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা-কে শুধু প্রমাণই করেনি, বরং এর জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোও উন্মোচন করেছে। বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (হাভার্ড মেডিকেল স্কুল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ – NIH, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ – ICMR) যোগের উপর ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছে।

    • স্নায়ুবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি: এমআরআই স্ক্যানের মাধ্যমে দেখা গেছে, নিয়মিত যোগব্যায়াম ও ধ্যান মস্তিষ্কের গঠন বদলে দিতে পারে (নিউরোপ্লাস্টিসিটি)। বিশেষ করে অ্যামিগডালা (ভয় ও চাপের কেন্দ্র) এর কার্যকলাপ কমে, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (যুক্তি, মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্র) এর কার্যকলাপ ও ঘনত্ব বাড়ে। হিপোক্যাম্পাসের (স্মৃতি ও শেখার কেন্দ্র) আয়তনও বাড়তে পারে। এই পরিবর্তনগুলি চাপ সহনশীলতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও জ্ঞানীয় ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সরাসরি যুক্ত।
    • জিনগত অভিব্যক্তিতে প্রভাব (Gene Expression): চমকপ্রদ গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যোগব্যায়াম ও ধ্যান স্ট্রেস-সম্পর্কিত জিনগুলির অভিব্যক্তি কমাতে পারে এবং প্রদাহ-বিরোধী ও ইমিউনিটির সাথে সম্পর্কিত জিনগুলির অভিব্যক্তি বাড়াতে পারে। এর অর্থ দাঁড়ায়, যোগ শুধু উপসর্গই কমায় না, এটি শরীরের মৌলিক কোষীয় স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
    • ইমিউন সিস্টেমের শক্তিশালীকরণ: গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে নিয়মিত যোগব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে পারে। এটি প্রদাহজনক মার্কার কমায় এবং প্রাকৃতিক কিলার (NK) কোষের কার্যকলাপ বাড়ায়, যা সংক্রমণ ও এমনকি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে।
    • হরমোনাল ভারসাম্য: যোগব্যায়াম স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার পাশাপাশি, থাইরয়েড হরমোন, রিপ্রোডাক্টিভ হরমোন (যেমন: ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন) এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতার উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে দেখা গেছে, যা বিপাক, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
    • ব্যথা ব্যবস্থাপনায় কার্যকারিতা: ন্যাশনাল সেন্টার ফর কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ হেলথ (NCCIH) এর গবেষণা অনুসারে, যোগব্যায়াম নিম্ন-পিঠে ব্যথা, আর্থ্রাইটিসের ব্যথা এবং মাইগ্রেনের মতো দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার তীব্রতা ও ফ্রিকোয়েন্সি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এটি ব্যথার প্রতি দেহের সহনশীলতা বাড়ায় এবং ব্যথার সাথে মানিয়ে নেওয়ার মনস্তাত্ত্বিক দক্ষতা উন্নত করে।

    এই বৈজ্ঞানিক প্রমাণগুলি নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা-কে শুধু আধ্যাত্মিক বা মনস্তাত্ত্বিক স্তরেই নয়, বরং জৈবিক ও শারীরবৃত্তীয় স্তরেও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এটি একটি হোলিস্টিক (সমগ্রতাবাদী) হেলথ ইন্টারভেনশন, যা শরীর, মন ও আত্মার মধ্যে বিদ্যমান গভীর সংযোগকে কাজে লাগিয়ে সামগ্রিক সুস্থতা অর্জনে সাহায্য করে।


    জেনে রাখুন (FAQs)

    ১. প্রশ্ন: দৈনিক কতক্ষণ যোগব্যায়াম করলে উপকারিতা পাওয়া যায়?
    উত্তর: নিয়মিত যোগব্যায়ামের মূলমন্ত্র হলো ধারাবাহিকতা। প্রতিদিন মাত্র ১৫-৩০ মিনিট নিয়মিত অনুশীলন, সপ্তাহে ৩-৪ দিন দীর্ঘ সময় অনুশীলনের চেয়ে বেশি কার্যকর। শুরুতেই নিজেকে অতিরিক্ত চাপ দেবেন না। ১০-১৫ মিনিট দিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। গুণগত অনুশীলনই মুখ্য। এমনকি দিনে ৫-১০ মিনিট শুধু গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস বা ধ্যানও উল্লেখযোগ্য মানসিক উপকার দেয়।

    ২. প্রশ্ন: আমার বয়স বেশি/ শারীরিক সীমাবদ্ধতা আছে (যেমন: বাত, হার্নিয়া, উচ্চ রক্তচাপ)। আমি কি যোগব্যায়াম করতে পারব?
    উত্তর: হ্যাঁ, সাধারণত পারবেন, তবে সতর্কতা ও উপযুক্ত গাইডেন্সের সাথে। নিয়মিত যোগব্যায়ামের সুবিধা পেতে শারীরিক সীমাবদ্ধতা বাধা নয়। কঠিন বা বিপরীতমুখী ভঙ্গি এড়িয়ে সহজ শ্বাসের ব্যায়াম, হালকা স্ট্রেচিং, চেয়ার ইয়োগা বা ইয়িন যোগ শুরু করতে পারেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: প্রথমে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন এবং একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ যোগ প্রশিক্ষককে আপনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি আপনার জন্য নিরাপদ ও উপযোগী ভঙ্গি ও পরিবর্তন (modifications) শেখাবেন।

    ৩. প্রশ্ন: যোগব্যায়াম (ইয়োগা) আর সাধারণ জিম এক্সারসাইজের মধ্যে পার্থক্য কী?
    উত্তর: দুটিই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, কিন্তু পদ্ধতি ও লক্ষ্য ভিন্ন। জিম এক্সারসাইজ (ওয়েট লিফটিং, কার্ডিও) সাধারণত পেশি গঠন, শক্তি বৃদ্ধি, ক্যালোরি বার্নিং বা নির্দিষ্ট অঙ্গের উপর ফোকাস করে। নিয়মিত যোগব্যায়াম হল একটি হোলিস্টিক প্র্যাকটিস যা শারীরিক ভঙ্গি (আসন), শ্বাসের নিয়ন্ত্রণ (প্রাণায়াম), ধ্যান (ধ্যানা) ও নৈতিক অনুশাসনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এটি শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক শান্তি, আবেগিক ভারসাম্য, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আত্মিক উন্নতির উপর সমান গুরুত্ব দেয়। যোগে প্রতিযোগিতা নেই, আছে নিজের সাথে যাত্রা।

    ৪. প্রশ্ন: নিয়মিত যোগব্যায়াম শুরু করলে দৈনন্দিন জীবনে কতদিনে পরিবর্তন টের পাব?
    উত্তর: পরিবর্তন অনুভবের সময় ব্যক্তি, তাদের শারীরিক-মানসিক অবস্থা এবং অনুশীলনের ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানের উপর নির্ভর করে। কিছু উপকারিতা যেমন: তাৎক্ষণিক শিথিলতা, ভালো ঘুম, হজমে উন্নতি, মেজাজের সামান্য উন্নতি কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যেই টের পাওয়া যায়। আরও স্থায়ী ও গভীর নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা যেমন: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, উদ্বেগ-হতাশা কমা, মনোযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি সাধারণত নিয়মিত ৩-৬ মাস অনুশীলনের পর স্পষ্ট হয়। ধৈর্য্য ধরে অনুশীলন চালিয়ে যান।

    ৫. প্রশ্ন: সকাল না রাতে যোগব্যায়াম করা বেশি ভালো? খাওয়ার আগে নাকি পরে?
    উত্তর: উভয় সময়েরই নিজস্ব সুবিধা আছে।

    • সকাল: দিন শুরু হয় সতেজতা ও ফোকাস দিয়ে। খালি পেটে অনুশীলন করা সহজ (খাওয়ার কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা পর)। শরীরের নমনীয়তা সকালে কিছুটা কম থাকতে পারে।
    • রাত: দিনের চাপ ও ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে সাহায্য করে, গভীর ঘুমে সহায়তা করে। তবে ভারী খাবারের পরপরই নয় (হালকা খাবার খেয়ে থাকলে কমপক্ষে ১-২ ঘন্টা পর)।
      সবচেয়ে ভালো সময় হলো যে সময়টিতে আপনি নিয়মিতভাবে অনুশীলন করতে পারবেন। খালি পেটে যোগ করা আদর্শ। ভারী খাবারের কমপক্ষে ৩-৪ ঘন্টা, হালকা খাবারের ১-২ ঘন্টা পর যোগ করুন। পানির গ্লাস খাওয়া যেতে পারে।

    ৬. প্রশ্ন: যোগব্যায়াম কি ধর্মীয় অনুশীলন?
    উত্তর: যোগব্যায়ামের উৎপত্তি প্রাচীন ভারতীয় দর্শনে, তবে আধুনিকভাবে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য অনুশীলিত যোগব্যায়াম (হাথা যোগ, ভিনিয়াসা যোগ ইত্যাদি) একটি ধর্মনিরপেক্ষ (secular) ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এটি কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম পালন বা বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল নয়। নিয়মিত যোগব্যায়ামের মূল লক্ষ্য হলো সার্বিক সুস্থতা – শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ভারসাম্য অর্জন, যা যে কোনো ব্যক্তি, তার বিশ্বাস নির্বিশেষে, অনুসরণ করতে পারেন। এটি ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার পথ হতে পারে, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়।


    (নিবন্ধের শেষ অনুচ্ছেদ – কোন হেডিং নেই)

    নিয়মিত যোগব্যায়ামের উপকারিতা তাই কোনো অতিরঞ্জন নয়; এটি হাজারো বছর ধরে পরীক্ষিত এবং আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত এক জীবন-পরিবর্তনকারী শক্তি। এটি শুধু পেশী টানাটানি বা কয়েকটি ভঙ্গি শেখার ব্যাপার নয়; এটি নিজের শরীরের গভীরে প্রবেশ করা, শ্বাসের সুরে মনকে শান্ত করা এবং প্রতিদিনের চাপের মাঝেও এক অটুট অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র খুঁজে পাওয়ার এক অনন্য অভিযাত্রা। রুমানা আক্তার, আব্দুল মালেক, সামিয়া বা ফাহিমের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনসাক্ষ্য প্রমাণ করে, নিয়মিত যোগব্যায়াম সত্যিই জীবন বদলে দিতে পারে – অসুস্থতা থেকে সুস্থতায়, অস্থিরতা থেকে প্রশান্তিতে, বিচ্ছিন্নতা থেকে সংযোগের দিকে। এটি কোনো দ্রুত সমাধান নয়, বরং এক ধারাবাহিক অনুশীলন, এক প্রেমময় প্রতিশ্রুতি নিজের প্রতি। আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আরও প্রাণবন্ত, সুস্থ ও সচেতন জীবনের সম্ভাবনা। সেই ম্যাটটি আজই বিছিয়ে ফেলুন, গভীরভাবে শ্বাস নিন, এবং এই রূপান্তরের যাত্রায় নিজেকে আমন্ত্রণ জানান। আপনার নতুন জীবন শুরু হোক আজই।


    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    অনুশীলন অভ্যাস উপকারিতা:জীবন কমানো ক্রিয়া গঠন জীবন দিন দূরীকরণ নিয়মিত? পরিবর্তন প্রশ্বাসের পদ্ধতি বদলে বৃদ্ধি যোগব্যায়ামের লাইফস্টাইল সুস্থতা স্বচ্ছতা স্বাস্থ্য
    Related Posts
    Acidity

    সকালে যে ভুলগুলো এড়াতে পারলেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে অ্যাসিডিটি

    July 10, 2025
    Passport

    পাসপোর্টের মেয়াদ কতদিন থাকতে রিনিউ করবেন, কিভাবে করবেন

    July 10, 2025
    বিয়ের পরে দাম্পত্য জীবনের সমস্যা

    বিয়ের পরে দাম্পত্য জীবনের সমস্যা:সমাধানের সহজ উপায়

    July 10, 2025
    সর্বশেষ খবর
    Abul Barakat

    দুর্নীতির মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত গ্রেপ্তার

    bd vs sri

    টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগারদের বড় হার, এগিয়ে গেলো শ্রীলঙ্কা

    Flood

    ৩ জেলার বন্যা পরিস্থিতি গুরুত্বসহ দেখছে সরকার

    Galaxy Z Flip 7

    লঞ্চ Galaxy Z সিরিজের ৩ ফোন, জানুন দাম ও স্পেসিফিকেশন

    Soudi Arabia

    সৌদি আরবে প্রবাসীদের জন্য বাড়ি কেনার সুযোগ, কীভাবে কিনবেন?

    Samsung Fold 7

    Samsung Fold 7 Review: A Major Comeback in the Foldable Wars

    Triumph Speed Triple 1200 RS

    শক্তিশালী ও আধুনিক রুপে লঞ্চ হল Triumph Speed Triple 1200 RS

    AC Cars

    AC Cars Roars into America with Ultra-Exclusive GT SuperSport Launch

    Kisoreganj

    বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে এসএসসি পাস করলেন দম্পতি, জিপিএ-ও একই!

    Babydoll Archi AKA Archita Phukan

    Babydoll Archi AKA Archita Phukan Shocks Fans by Changing Instagram Name to Amira Ishtara

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.