নূরে আলম জিকু : দেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু বঙ্গবন্ধু সেতু। যমুনা নদীর উপর নির্মিত ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু খুলে দেয়া হয়েছিল ১৯৯৮ সালের জুন মাসে। প্রথম মাসেই সেতুতে টোল আদায় হয়েছিল প্রায় ৯৯ লাখ টাকা। পরবর্তী এক বছরে আয় হয়েছে আরও ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যার মধ্যে আইডিএ, এডিবি, জাপানের ওইসিএফ প্রত্যেকে ২২ শতাংশ পরিমাণ তহবিল সরবরাহ করে। বাকি ৩৪ শতাংশ ব্যয় বহন করে বাংলাদেশ সরকার। সে সময় কথা ছিল সেতু নির্মাণের ২৫ বছরে বিনিয়োগের টাকা তুলে আনা হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের ৭ বছর আগেই বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ ব্যয় উঠে আসে। ২০২১-২২ অর্থ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সেতুতে টোল আদায় হয় ৭ হাজার ৭৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
অর্থাৎ ২৪ বছরে (২৮৭ মাস) ব্যয়ের চেয়ে ৩ হাজার ৩২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বেশি টোল আদায় হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সেতু বিভাগ থেকে এ তথ্য মিলেছে। গত ৮ই মে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক (হিসাব) মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আয়ের বিবরণীতে বলা হয় চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা টোল আদায় হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রমেই বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে কর্মসংস্থান। সেই সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করছে বঙ্গবন্ধু সেতু। সড়ক ব্যবস্থাও উন্নত হওয়ায় বেড়েছে যানবাহন। এ সেতুর মাধ্যমে স্বল্প সময়েই নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীতে। ফলে প্রতি বছর টোলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেতুর টোল আদায়ের এই ক্রমবর্ধমান ধারা অর্থনীতির উন্নয়নের অংশীদার। এ ধরনের বড় সেতু নির্মাণে বিনিয়োগকৃত টাকা দ্রুত উঠে আসে। সেইসঙ্গে কয়েকগুণ মুনাফাও অর্জন হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ের কার্য বিবরণী থেকে দেখা যায়, ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থ বছরের জুন মাসে টোল আদায় হয়েছিল ৯৯ লাখ টাকা। ১৯৯৮-১৯৯৯ অর্থ বছরে টোল আদায় হয় ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে ৬৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০০০-২০০১ অর্থ বছরে ৮২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে টোল আদায় হয় ৯৩ কোটি ৫৮ লাখ। ২০০২-২০০৩ অর্থ বছরে টোল আদায়ের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তখন টোল আদায় হয় ১০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরে ১৩১ কোটি ৮ লাখ। ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে ১৫২ কোটি টাকা। ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ১৫৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে ১৭৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বার্ষিক টোল আদায়ের পরিমাণ ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ওই অর্থ বছরে বন্ধবন্ধু সেতুতে টোল আদায় হয় ২০১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে ২১৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে ২৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে ২৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে ৩০৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ৩২৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে ৩২৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে ৩৫১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ৪০৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৪৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৫৪৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৫৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে করোনার প্রভাবে কিছুটা কমে আসে টোল। সে বছর টোল আদায় হয়েছে ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তবে ২০২০-২১ অর্থ বছরে করোনার প্রভাব কিছুটা কমে গেলে বেড়ে যায় টোল আদায়ের পরিমাণ। তখন টোল আদায় হয়েছিল ৬৫৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। চলতি অর্থ বছরে এপ্রিল পর্যন্ত সেতুর টোল আদায় হয়েয়ে ৫৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পুরো অর্থ বছর শেষ হলে যা বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে এমনটাই আশা করছেন সেতু কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানীর সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ১৯৪৯ সালে আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ১৯৬৪ সালে রংপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ও ১৯৬৬ সালে রংপুর থেকে একই পরিষদের আরেকজন সদস্য শামসুল হক যমুনা সেতুর উপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণদানকালে শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে যমুনা সেতু নির্মাণের কথা উত্থাপন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যমুনা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৮৫ সালে জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। সেতুর সম্ভাব্যতা-সমীক্ষায় ১৯৮৬-৮৭ সালে যাচাই করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে আইডিএ, এডিবি ও জাপানের ওইসিএফ সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নে সম্মত হয়। ১৯৯৪ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের মে মাসে গ্যাস সঞ্চালন লাইন ব্যতীত সব কাজ শেষ হয়। পরের মাসেই সেতু উদ্বোধন করা হয়। সূত্র -মানবজমিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।