নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর সেনবাগে মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জাহিদ হাসানের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। এসময় মামলার এক সাক্ষীকেও মারধর ঘটনা ঘটেছে।
অজ্ঞাত কয়েকজনকে সাথে নিয়ে স্থানীয় সালেহ আহমেদ ও জালাল আহমেদ এ হামলা চালিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে সেনবাগ উপজেলার লেমুয়া গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধার এছাক মোল্লা বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত জাহিদ হাসান (২৮) ও মামলার সাক্ষী হাফেজ আহমদকে (৪৫) স্থানীয়রা উদ্ধার করে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। আহত জাহিদ হাসান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা এছাক মোল্লার সন্তান।
এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার সেনবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান। তবে এখনো কাউকে আটক করেননি পুলিশ।
এর আগে গত বছরের ৩০ এপ্রিল প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা এছাক মোল্লার পরিবারের ওপর হামলার প্রেক্ষিতে সেনবাগ থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছিল ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান। ওই মামলার জামিনে এসে আসামীরা গত বেশ কিছুদিন ধরে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে আসছিল।
জানা যায়, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে লকডাউনের সময় বহিরাগত শ্রমিক এনে ভবন নির্মাণের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন ছালেহ আহমদ ও জালাল আহমদ। অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে এসে নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। এতে প্রতিবেশীদের ইন্ধন আছে সন্দেহে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা এছাক মোল্লার পরিবারের এক সদস্যের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেন।
এর প্রেক্ষিতে সেনবাগ থানায় সালেহ আহমেদ, জালাল আহমেদ, দুলাল হোসেন ও অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন (জিআর-৯২৪/২২০) মুক্তিযোদ্ধা সন্তান জাহিদ হাসান। বর্তমানে মামলাটি নোয়াখালী অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
মামলা দায়েরের পর আসামীরা জামিনে বের হয়ে এসে মামলা তুলে নিতে বাদী জাহিদ হাসান কে চাপ দিতে থাকে। অন্যথায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়। গত বছরের ৩০ মে বাদীকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় আসামিরা। মামলার পুলিশি তদন্তে হুমকির ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে গত ৩ ডিসেম্বর নোয়াখালীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম কাজী সোনিয়া আক্তার আসামিদের সতর্ক করেন। কিন্তু আদালতের এ আদেশ অমান্য করে গত বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে বাজারে যাওয়ার পথে জাহিদ হাসানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আসামিরা।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান বলেন, আসামিরা বিভিন্ন সময় মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে আসছিল। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে মারধর করে। এসময় সঙ্গে থাকা মামলার সাক্ষী হাফেজ আহমেদকেও মারধর করে ও পরিবারের সদস্যদের গুম করার হুমকি দেয়। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর বারবার হামলার ঘটনায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ওপর হামলার ঘটনাটি শোনার পর আমরা দ্রুত টহল টিম পাঠিয়েছি। এর আগেও তার ওপর একই ব্যক্তিরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিল। হামলাকারীরা সেনবাগ থানার বিভিন্ন নাশকতা মামলার আসামি। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
সেনবাগ থানা সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী ও আসামী দুলাল আহমেদ সেনবাগে পেট্রোল বোমা হামলা, নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ছয়টি মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। তার এসব নাশকতামূলক কাজে জালাল আহমেদ ও ছালেহ আহমেদ অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন। এমন তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ওপর ন্যাক্কারজনক এ হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক আব্দুল্লাহ এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।