জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসর শুরু হচ্ছে গতকাল শুক্রবার থেকে। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এ টি-২০ ক্রিকেট লিগে এবার অংশ নিয়েছে মোট সাতটি দল।
কেউ মাঠে বল ও ব্যাট হাতে কাণ্ডারি হয়ে ওঠেন, কেউ গ্যালারিতে প্রিয় দলের সমর্থনে উল্লাস করেন, আবার কেউ ফুটপাতে বুনেন জীবিকার স্বপ্ন। তেমনই একজন ষাটোর্ধ্ব সালাউদ্দিন। এক সময়ে নিউমার্কেটে ছিল তার তিনটি দোকান, কর্মচারি ছিলেন ৫ জন। এখন সেই সালাউদ্দিন ফুটপাতে জার্সি বিক্রি করেন।
মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে জার্সি, টুপি, প্ল্যাকার্ড, পতাকা, মাথায় বাঁধার ফিতাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতে এসেছেন প্রায় অর্ধশত বিক্রেতা।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয় বিপিএলের দশম আসর। এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে স্টেডিয়ামের আশেপাশেও শুরু হয় বেচাকেনা।
ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে জার্সি, টুপি, প্ল্যাকার্ড, পতাকা, মাথায় বাঁধার ফিতাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতে এসেছেন প্রায় অর্ধশত বিক্রেতা। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। এর মধ্যে এক বিক্রেতা তার জীবনের কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেন।
পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা সালাউদ্দিন বলেন, ‘নিউমার্কেটে আমার তিনটি দোকান ছিল। সেখানে পাঁচজন কর্মচারী কাজ করত। কিন্তু ক রো না শুরুর সময় থেকে ব্যবসায় ধস নামে। কিছুদিন লোকসান হলেও দোকান ভাড়া এবং কর্মচারীদের বেতন দিয়ে যেতাম। কিন্তু এভাবে চলতে চলতে এক সময় পুঁজি হারিয়ে ফেলি বাধ্য হয়ে দোকান ছেড়ে দিতে হয়। ক রো না র পরে আর ব্যবসার হাল ধরতে পারিনি। এরপর থেকে ফুটপাতে ব্যবসা করছি। যখন যে মৌসুম আসে সেই মৌসুমের জিনিস বিক্রি করছি। এখন বিপিএল চলছে, তাই এসব বিক্রি করছি।’
সালাউদ্দিনের বয়স ৬০ পার হয়েছে। জীবনের বাস্তবতা বলতে গিয়ে বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছিল। তবুও সেটি সামলে দরদাম করছিলেন ক্রেতাদের সঙ্গে। একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন তার ছবি যেন প্রকাশ করা না হয়। বড় ব্যবসা, বড় দোকান ছেড়ে এভাবে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বিক্রি করতে কষ্ট হয় কি-না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বাবারে নিয়তি যেখানে টেনে এনেছে সেখানেই আসছি। কপালে এমন ছিল, তাই লাখ লাখ টাকার হিসাব ছেড়ে এখন এক-দুই হাজার টাকার হিসাব করি।’
এদিকে সালাউদ্দিনের মতো স্টেডিয়ামের আশেপাশে আরও অনেকে জার্সি কিংবা আনুষঙ্গিক জিনিস বিক্রি করছিলেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গেও কথা হয়।
ভোলা থেকে আসা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পুরান ঢাকা থেকে আমিসহ আরও প্রায় ৩০-৪০ জন জার্সি বিক্রি করতে এসেছেন। আজকে প্রথমদিন, নতুন জার্সি এখনও আসেনি। তাই বিক্রিও একটু কম হয়েছে। তবুও ৫০-৬০টা জার্সি বিক্রি করেছি। ভালোই চলছে বেচাকেনা।’
খেলা উপলক্ষ্যে অনেক আর্টিস্টও ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ বিভিন্ন স্লোগান লেখা ব্যানার বিক্রি করছেন। কেউ আবার ভক্তদের হাতে বা মুখে ট্যাটু, প্রিয় দলের নাম, পতাকা কিংবা প্রতীকী এঁকে দিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ‘আমার স্বামী স্টেডিয়ামের ইলেকট্রিশিয়ান। তার সহায়তায় রংতুলি নিয়ে রাস্তায় এসেছি। আঁকতে ভালো লাগে। শখের বসে শেখা কাজ দিয়ে এখন কিছু উপার্জনও হচ্ছে। ভালো লাগছে, বসে তো নেই।’
এ বছর বিপিএল কোনো জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান ছাড়াই শুরু হয়েছে। তবুও এসকল অস্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে সেটি অবলম্বন হিসেবে এসেছে। হয়তো দর্শকদের কাছেও ফ্র্যাঞ্চাইজি এই টুর্নামেন্টটি অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে আসে। সেজন্যই তারা টিকিট কেটে মাঠে এসে খেলা দেখেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।