জুমবাংলা ডেস্ক : ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দুই গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। এতে চরম বিপদে পড়েছে শিশু-নারীরা। দুই গ্রামের শত শত মানুষের গ্রেপ্তার ও হয়রানি আতঙ্ক এখনো কাটেনি। গ্রাম দুটির কয়েক শত পুরুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
গ্রাম পুরুষশূন্য হওয়ায় নারীরা কাঁধে তুলে নিয়েছেন সংসারের হাল। অভিভাবকহীন পরিবারগুলোর শিশু ও নারীরা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়।
উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় কেন্দ্রে সংঘর্ষ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিজিবির গুলিতে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হন। আহত হন গৃহবধূ রহিমা বেগমসহ চারজন।
গত ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় পীরগঞ্জ থানার এসআই আবু হামিদ মণ্ডল ৭০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এর পর থেকে গ্রেপ্তার ও পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দুই গ্রামের কয়েক শত মানুষ।
সিড ঘিডোব গ্রামের লাভলী বেগম বলেন, ‘স্বামী হারানোর শোকই কাটেনি, আবার পুলিশের হয়রানি। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। শিশু সন্তান নিয়ে আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। তার ওপর মামলা। আত্মহত্যা ছাড়া হামরা কোনো উপায় নেই।’ একই ভাবে নিজের কষ্ট দুর্দশার কথা জানান বিজিবির গুলিতে নিহত শাহাবুলির স্ত্রী লুৎফা বেগম।
স্থানীয়রা জানায়, এই দুজনের স্বামী ঢাকায় রিকশা চালাতেন। তাঁদের পাঠানো টাকায় চলত সংসার। গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাবুলি ও মজাহারুল নিহত হওয়ায় তাঁদের স্ত্রী-সন্তান নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। কষ্টে দিন কাটছে তাঁদের।
গুলিতে নিহত মজারুলের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মুন্নি আখতার জানায়, বাবা না থাকায় এখন তাকে মায়ের সঙ্গে মাঠে কাজ করতে হয়। বাবুল নামে এক গুড় ব্যবসায়ী জানান, এখন কৃষির ভরা মৌসুম। এ সময় চাষিরা বাড়িতে থাকতে না পারলে বিশেষ করে গম, ভুট্টা ও বোরো ধান উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে।
গত ১ ডিসেম্বর ঘিডোব এলাকা পরিদর্শন করেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান। পরে ঘিডোব বিদ্যালয় মাঠে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এলাকাবাসী অতিরিক্ত ডিআইজির কাছে তাঁদের কষ্টের কথা তুলে ধরেন।
তারা জানান, গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন। এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘কোনো নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না। আপনারা নির্ভয়ে নিজ বাসায় থাকতে পারেন। যারা এ ঘটনায় দোষী তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ কিন্তু এরপরও থেমে নেই পুলিশের অভিযান ।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানা পরিদর্শক (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কোনো হয়রানি করা হচ্ছে না। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয়দের ভয়ভীতি কাটাতে কাজ করছি আমরা।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।